বিতর্ক-নিষেধাজ্ঞা জয় করে স্যামুয়েলস...

ক্রীড়া প্রতিবেদক : 'আপনি কি সেই ঘটনাটা মনে করতে পারেন...।' কথা শেষ করার আগেই পাশে দাঁড়ানো ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের মিডিয়া ম্যানেজার ফিলিপ স্পুনার থামিয়ে দিতে চাইলেন। ভাবলেন, জুয়াড়িদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার অভিযোগে দুই বছরের নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গই হয়তো তোলা হচ্ছে মারলন স্যামুয়েলসের সামনে। যদিও 'সেই ঘটনা' মোটেও সে রকম কিছূ নয়। ২০০৭ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্রায়ান লারার রান আউট হওয়ার পেছনে তাঁর একটা দায় ছিল এবং সেটিই ছিল ত্রিনিদাদিয়ান রাজপুত্রের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। তা নিয়ে কোনো অপরাধ বোধ আছে কি না জানা তো দূরের কথা, স্যামুয়েলসকে পেছনেই নেওয়া গেল না।

বরাবরই গম্ভীর বলে মনে হওয়া স্যামুয়েলস চেহারায় গাম্ভীর্যের পুরোটা ফুটিয়ে তুলে বললেন, 'প্রশ্নটা তো এ সিরিজের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।'
মিডিয়া ম্যানেজারও পরে আলাদা বললেন, 'ওই প্রশ্নটা করা মোটেও ঠিক হয়নি। মারলন একদমই পেছন ফিরে তাকাতে চায় না। নতুনভাবে আবার সবকিছু শুরু করতে চায়।' নিষেধাজ্ঞার পর নতুন শুরুটা হয়ে যেতে পারত গত ফেব্রুয়ারি-মার্চের বিশ্বকাপেই। যখন অলরাউন্ডার ডোয়াইন ব্রাভোর ইনজুরিতে দলে ডাক পড়েছিল। কিন্তু প্রস্তুত নন বলে সাড়া না দেওয়া স্যামুয়েলস দলে ফেরেন গত এপ্রিলের পাকিস্তান সিরিজে। ফেরার পর থেকে তাঁর পুরনো প্রতিশ্রুতির ঝলকও দেখা যাচ্ছে মাঝেমধ্যে। যেমন দেখা গেল কাল ফতুল্লা স্টেডিয়ামেও। টি-টোয়েন্টি প্রস্তুতি ম্যাচে তাঁর ৫৬ বলে খেলা অপরাজিত ১০২ রানের ইনিংস মনে করিয়ে দিয়েছে ক্যারিয়ার শুরুর সময়কার স্যামুয়েলসকেই। ২০০২ সালের নভেম্বরে ভারতের বিপক্ষে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে তাঁর এমনই এক বিধ্বংসী ইনিংস ক্যারিবীয়দের ভাসিয়েছিল জয়ের আনন্দে। মাত্র ৭৫ বলে অপরাজিত ১০৮ রানের বিস্ফোরক ইনিংসে ঘোষিত হয়েছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে স্যামুয়েলসের আগমনী বার্তা। যেটি ছিল তাঁর প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরিও। যার পর এমনকি 'আগামীর ভিভ রিচার্ডস' আখ্যাও পাচ্ছিলেন।
সেই স্যামুয়েলস মাঠের বাইরের ঘটনার জন্যও কম খবর হননি। একবার তো 'টিম কারফিউ' ভাঙার দায়ে ভারত থেকে দেশে ফেরার ফ্লাইটে তুলে দেওয়া হয়েছিল প্রায়। তবে এখনকার স্যামুয়েলস পুরনো সেসব স্মৃতির ভারে নুয়ে পড়তে চান না কিছুতেই, 'হ্যাঁ, আমার জীবনে বেশ উত্থান-পতন গিয়েছে। তবে আমি এখন এর সবই পেছনে ফেলতে চাইছি। সামনে এগোতে চাই। কারণ আমি জানি, আমাকে দলের হয়ে নিয়মিত খেলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, যা আমি সব সময়ই চেয়েছিলাম।' টি-টোয়েন্টি প্রস্তুতি ম্যাচে সেঞ্চুরি পেয়ে তাই যারপরনাই উচ্ছ্বসিতও মনে হলো, 'আগের ম্যাচের দিন (বিসিবি একাদশের বিপক্ষে এক দিনের ম্যাচ) খুব গরম ছিল। আর আমিও বাজে শট খেলে আউট হয়েছিলাম। তবে আজ ছিল আমার দুর্দান্ত খেলার দিন।' যেদিন খেলেন, সেদিন যেকোনো বোলিং অ্যাটাককে গুঁড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। টি-টোয়েন্টি প্রস্তুতি ম্যাচে এ জ্যামাইকানের মারদাঙ্গা ইনিংস তাই আসল লড়াই শুরুর আগে বাংলাদেশকেও আগাম সতর্কবার্তা দিয়ে রাখল। আর 'জানি দোস্ত'-এর সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে যদি ইতিমধ্যে আরো বেশি অনুপ্রাণিত হয়ে থাকেন এবং ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ের তাগিদ আরো বেড়ে গিয়ে থাকে, তাহলে আসন্ন সিরিজে বাংলাদেশের বোলারদের জন্য দুঃস্বপ্নই অপেক্ষা করে আছে বলা যায়।
সর্বশেষ আইপিএল ও সদ্য সমাপ্ত চ্যাম্পিয়নস লিগে অন্য দলের বোলারদের কাছে যেমন মূর্তিমান বিভীষিকা হয়ে ছিলেন স্যামুয়েলসের 'বেস্ট ফ্রেন্ড' ক্রিস গেইল। এ দুই জ্যামাইকানের মধ্যে বন্ধুত্বটা এমনই গভীর যে ক্রিকেটের বাইরে থাকার সময়েও ক্রিকেটে নিবিষ্ট থাকার ব্যাপারে গেইলের অবদানের কথাই বারবার বলে এসেছেন স্যামুয়েলস। যদিও বোর্ডের সঙ্গে ঝামেলায় এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে রীতিমতো অনাহূতের মর্যাদায় গেইল। স্যামুয়েলস ব্যতিক্রম হবেন স্বাভাবিক, তাঁর বন্ধু বলে কথা, 'ও সব সময়ই আমার বন্ধু ছিল। এখনো আছে। ও একজন অসাধারণ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার। সুতরাং ওর ওপর আপনাদের চোখ রাখতে হবেই।'
বাংলাদেশ দলকে আপাতত স্যামুয়েলসের ওপর সতর্ক চোখ রাখলেই চলছে!

No comments

Powered by Blogger.