বৃষ্টির পর স্যামুয়েলসের ঝড়

ড়ির কাঁটা তখন দুপুর ২টা ছুঁই ছুঁই। অথচ ম্যাচটা শুরু হওয়ার কথা ছিল ঠিক ১টার সময়! একটু আগের গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি থেকে উইকেট বাঁচাতে সেই যে কাভার দিয়ে পুরো মাঠ ঢেকে দেওয়া হয়েছিল সেগুলো তখনো সরানো হয়নি। প্রেসবঙ্ েঢুকে কারণটা অনুমান করতেও খুব একটা কষ্ট হলো না। কাচঘেরা রুমের এপার থেকেও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ফতুল্লার আকাশে তখনো কালো মেঘ। সেদিকে তাকিয়েই এক সহকর্মী চিন্তিত মুখে বললেন, 'ম্যাচটা বোধহয় গেল! আবার বৃষ্টি হলে এ মাঠে আর খেলা সম্ভব হবে না।'

ম্যাচটা গেলই শেষ পর্যন্ত। তবে বৃষ্টিতে নয়, মারলন স্যামুয়েলস নামে এক জ্যামাইকান তরুণের তোলা ঝড়ে! মেঘের আড়াল থেকে সূর্য হেসেছে। দেরিতে হলেও ফতুল্লার ওসমানী স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর বিসিবি একাদশের মধ্যে টোয়েন্টি-টোয়েন্টি প্রস্তুতি ম্যাচটা শুরু হয়েছে। কিন্তু টস জিতে ব্যাট করতে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসটা শেষ হওয়ার পরই মনে হলো শুরু না হলেই তো ভালো ছিল! আলাউদ্দিন বাবু, কামরুল ইসলাম আর শুভাগত হোমদের মতো আনকোরা বোলারদের পেয়ে স্যামুয়েলস রীতিমতো খুনি হয়ে উঠলেন। দুদিন আগে প্রস্তুতি ওয়ানডে ম্যাচটাতেও যা করতে পারেননি সেটাই করে দেখালেন টোয়েন্টি-টোয়েন্টিতে। সেঞ্চুরি এবং সেটাও মাত্র ৫৪ বলে! ৫৬ বলে করা তাঁর অপরাজিত ১০২ রানের সঙ্গে যোগ করুন ৪ নম্বরে ব্যাট করতে নামা আন্দ্রে রাসেলের ৩৫ বলে ৫৮। সব মিলিয়ে ২০ ওভারে ৩ উইকেটে ১৯৫! দুদিন আগে আশরাফুল-কাপালিরাই ৪৫ ওভারে ২১৭ তাড়া করতে গিয়ে ৬৫ রানে হারের লজ্জা নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন। এর চেয়েও খর্বশক্তির একটা দল টোয়েন্টি-টোয়েন্টিতে সেই ড্যারেন স্যামি আর কেমার রোচদের বিপক্ষে ১৯৫ তাড়া করে ফেলবে এই আশা করা একটু বাড়াবাড়ি। সেটা হয়ওনি। ২০ ওভার শেষে শাহরিয়ার নাফীসের দল থেমে গেছে ৬ উইকেটে ১২০ রানে এসে। ৭৫ রানের হারে স্বাগতিক সমর্থকদের দারুণ কিছু দেখার প্রত্যাশা অপূর্ণ থেকে গেলেও সিরিজ শুরুর আগে প্রস্তুতিটা দুর্দান্ত হলো সফরকারীদের!
তাঁর মতোই আরো এক জ্যামাইকান ইদানীং আইপিএল আর চ্যামপিয়নস লিগ টোয়েন্টি-টোয়েন্টি মাতাচ্ছেন। স্যামুয়েলসের সেই স্বদেশী ক্রিস গেইলের দাপটে প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করে চ্যামপিয়নস লিগ টি-টোয়েন্টির ফাইনালে উঠে গেছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। নিজের জীবনেও গেইলের প্রভাব কতখানি সেটা বারবার বলেছেন স্যামুয়েলস। এমনকি পাতানো ম্যাচ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে যখন দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ হলেন, তখনো নাকি গেইল বারবার মানসিক সমর্থন দিয়ে গেছেন, সাহস দিয়েছেন আবারও ক্রিকেটে ফিরে আসার। সেই গেইল এবার নানা বিতর্কে জড়িয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের সঙ্গে নেই। কিন্তু তাঁর না-থাকাটা ভুলিয়ে দিতেই যেন স্যামুয়েলস এসেছেন। দলীয় মাত্র ৭ রানে ফরহাদ রেজার বলে জুনায়েদ সিদ্দিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে আড্রিয়ান বারাথের ফিরে যাওয়াটা তাই কোনো ধাক্কাই মনে হলো না ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানদের কাছে। আলাউদ্দিন বাবুর পরের ওভারেই পরপর চারটি ৪ মেরে স্যামুয়েলস জানিয়ে দিলেন আজ তাঁকে রোখার সাধ্য নেই কারো! চারের সংখ্যা শেষ পর্যন্ত ১৪-তে গিয়ে ঠেকেছে, সঙ্গে লং অন আর মিড উইকেটের ওপর দিয়ে মারা তিনটি বিশাল ছক্কা! মাঝের কিছুটা সময় আন্দ্রে রাসেল (৩৫ বলে ৫৮) এমন আগ্রাসী হয়ে না উঠলে হয়তো সেঞ্চুরির জন্য শেষ ওভার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো না স্যামুয়েলসের। শুধু আফসোস, প্রস্তুতি ম্যাচ না হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ হলে এটা ক্যারিয়ারের প্রথম টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরি হিসেবেই যোগ হতো প্রোফাইলে।
ওয়ানডে আর টোয়েন্টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্য যে ১৮ জনকে ডাকা হয়েছে তার মধ্যে কেবল দুজন ছিলেন গতকালের প্রস্তুতি ম্যাচে-শাহরিয়ার নাফীস, শুভাগত হোম। গ্যালারির বেশির ভাগ দর্শকের কাছে এই দুজন ছাড়া আর পরিচিত মুখ বলতে জুনায়েদ সিদ্দিক, বড়জোর ফরহাদ রেজা। এমন একটা দল ১৯৫ রান তাড়া করে জেতে_এই আশা হয়তো সমর্থকরাও করেনি। কিন্তু কেমার রোচের প্রথম ওভারেই লং অন দিয়ে জুনায়েদের ছক্কা, পরের বলে কাভার দিয়ে ৪! কিছুক্ষণের জন্য মনে হচ্ছিল, হলেও তো হতে পারে। হলো না। পরের ওভারেই ড্যারেন স্যামির বলে জুনায়েদ (৬ বলে ১০) ক্যাচ তুলে দিলেন ড্যারেন ব্রাভোর হাতে। দুই বল পরে আরেক ওপেনার জহুরুল ইসলামও নেই। এবারও ঘাতকের নাম স্যামি। বিসিবি একাদশের সবচেয়ে বড় জুটিটা হয়েছে তৃতীয় উইকেটে নাফীস আর রকিবুল হাসানের মধ্যে। ৩৪ রানের সেই জুটিতে রকিবুলের অবদান ২২। ২ ছক্কা আর এক চারে ১৯ বলে সাজানো ইনিংসটা খেলে দেবেন্দ্র বিশুর ফিরে যাওয়ার আগে রকিবুলই বরং কিছুটা আনন্দ দিয়েছেন দর্শকদের। সেই তুলনায় ৩৪ বলে ২৯ রান করা নাফীস ছিলেন কিছুটা মন্থর। তবে তিনিও যখন কার্লোস ব্রাথহোয়াইটের বলে সরাসরি বোল্ড হয়ে ফিরে যান তখন আশার শেষ প্রদীপটুকু নিভে যায় বিসিবি একাদশের। এত দারুণ ব্যাটিংয়ের পর আর কিছু না করলেও হতো স্যামুয়েলসের। কিন্তু শুভাগত আর নাদিফ চৌধুরীকে সরাসরি বোল্ড করার পর দিনশেষে তাঁর বোলিং ফিগারটা হলো ৪ ওভারে ১৮ রানে ২ উইকেট! এবং স্বভাবতই ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে গতকালের সবচেয়ে সফল বোলারও তিনি!

সংক্ষিপ্ত স্কোর
টস : ওয়েস্ট ইন্ডিজ
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ২০ ওভারে ১৯৫/৩ (স্যামুয়েলস ১০২*, রাসেল ৫৮; ফরহাদ ২/৩৭, শুভাগত ১/৩১)
বিসিবি একাদশ : ২০ ওভারে ১২০/৬ (শাহরিয়ার ২৯, রকিবুল ২২, মমিনুল ১৭*; স্যামুয়েলস ২/১৮, স্যামি ২/২৩, বিশু ১/১১ )
ফল : ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৭৫ রানে জয়ী

No comments

Powered by Blogger.