জনসভার অধিকার

সভা-সমাবেশের স্বাভাবিক অধিকার থেকে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে অব্যাহতভাবে বাধা দেওয়ার মনোভাব গণতান্ত্রিক বলে গণ্য হওয়ার নয়। নির্বাচনী বছরটিতে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতি আগের মনোভাব থেকে লক্ষণীয়ভাবে সরে আসার সক্ষমতা অর্জনই সরকারের জন্য মুখ্য চ্যালেঞ্জ বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। বিএনপির স্টেশনে নির্বাচনী ট্রেন থামবে না বলার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ আবারও পরিষ্কার করেছে যে আগামী নির্বাচন শেখ হাসিনার অধীনেই হবে। কিন্তু প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, এ বিষয়টি বিএনপি মেনে নিয়েছে ধরে নিলেও তাদের প্রতি কি সরকারি মনোভাবে কোনো পরিবর্তন আসবে? বিএনপিসহ যারাই যখন আইন অমান্য করবে, তার প্রতি প্রশাসনের তরফে সব সময় আইনানুগ পদক্ষেপ কাম্য। কিন্তু প্রশাসন ধারাবাহিকভাবে বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি অসহিষ্ণু ও বৈষম্যমূলক মনোভাবের পরিচয় দিচ্ছে। অখ্যাত সংগঠনের অজুহাত দিয়ে বিএনপিকে সভার অধিকার থেকে বঞ্চিত করার বিষয়টি যে মানুষের কাছে অস্পষ্ট থাকে না, সেটা প্রশাসনের বোঝার বাইরের বিষয় নয়। অথচ ইতিপূর্বে সভা-সমাবেশ করতে না দেওয়া আর সামনের দিনগুলোতে সভা করতে না দেওয়ার মধ্যে মৌলিক পার্থক্য থাকবে। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে এখন থেকেই বিবেচনায় নিতে হবে। কারণ, সবার জন্য সমতল মাঠ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কাছাকাছি সময় নয়, বরং এখন থেকেই নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় অবাধ নির্বাচনের পূর্বশর্ত যে অবাধ পরিবেশ, তা রাতারাতি তৈরি হবে না।
চলতি বছরের রাজনীতির মূল বিষয় থাকবে সারা দেশেই বাড়তি সভা-সমাবেশ ও জনসংযোগ হতে দেওয়া। যানজটসহ জনদুর্ভোগ কমিয়ে দলগুলো যাতে সম-অধিকার সাপেক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারে, তা নিয়ন্ত্রণে নির্বাচন কমিশনকে এখনই মনোযোগী হতে হবে। এমনটা আশঙ্কা করার কারণ আছে যে সরকার ও তার মহাজোটের শরিকেরা যেভাবে সভা-সমাবেশসহ নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারবে, সেভাবে প্রধান বিরোধী দল ও তার মিত্র দলগুলো না-ও পেতে পারে। আমরা আশা করব, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার পক্ষে সরকারি দল যেসব দেশের উদাহরণ দিয়ে থাকে, তারা কীভাবে তাদের প্রধান বিরোধী দলের প্রতি কর্মসম্পর্ক বজায় রাখতে উদ্‌গ্রীব থাকে, সেটা তারা বিবেচনায় নেবে। ক্ষমতাসীন দল হিসেবে ঔদার্যের প্রমাণ দেওয়ার গরজ তাদের একটু বেশিই দেখাতে হবে। খুলনা, চট্টগ্রামসহ কয়েকটি স্থানে বিএনপির নেতা-কর্মীদের পুলিশের পেটানোর ঘটনায় আওয়ামী লীগ দুঃখ প্রকাশ নয়, বরং তাকে প্রশ্রয় দেওয়ার মনোভাব দেখিয়েছে বললে অত্যুক্তি হবে না। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ‘সাংবিধানিক শাসনের ধারাবাহিকতা’ দাবি করা যদি আওয়ামী লীগের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হয়, তাহলে সেই দিনটিকে বিএনপির ভাষ্যমতে, ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করাও একই অধিকারের মধ্যে পড়ে।

No comments

Powered by Blogger.