কুদস ফোর্স প্রধানকে হত্যার ইসরাইলি পরিকল্পনায় যুক্তরাষ্ট্রের সায়?

ইরানের বহুল আলোচিত অভিজাত বাহিনী কুদস ফোর্সের প্রধান জেনারেল কাসিম সোলাইমানিকে হত্যার পরিকল্পনা করেছে ইসরাইল। আর তাতে ‘সবুজ সংকেত’ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার কুয়েতি পত্রিকা আল জারিদার এক প্রতিবেদনে একটি ইসরাইলী সূত্রকে উদ্ধৃত করে এ খবর দেওয়া হয়েছে। ওই সূত্র বলছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের মধ্যে এ নিয়ে একটি সমঝোতা হয়েছে। দু’ পক্ষই সোলাইমানিকে মধ্যপ্রাচ্যে নিজ নিজ দেশের স্বার্থের ওপর হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ইসরাইলি পত্রিকা হারেৎস কুয়েতের আল জারিদাকে উদ্ধৃত করে খবরটি প্রকাশ করেছে।
প্রসঙ্গত, আল জারিদা পত্রিকাকে ইসরাইলের মুখপাত্র হিসেবে ভাবা হয়। এই পত্রিকাটি অতীতেও ইসরাইলের বিভিন্ন কৌশলগত সংবাদ সবার আগে প্রকাশ করেছে।
তিন বছর আগেও সোলাইমানিকে একবার হত্যার পরিকল্পনা নিয়েছিল ইসরাইল। কিন্তু ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষর করতে উদগ্রীব প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসন তখন ওই পরিকল্পনায় সায় দেয়নি। ২০১৪ সালে সোলাইমানিকে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে হত্যার মিশন প্রায় সফল হতে যাচ্ছিল। কিন্তু, মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যুদ্ধ এড়াতে তৎপর তৎকালীন মার্কিন প্রশাসন ইসরাইলের ওই পরিকল্পনার ব্যাপারে ইরানকে আগেভাগে সতর্ক করে দেয়। ফলে বেঁচে যান সোলাইমানি। ওই ঘটনার পর ইসরাইল ও মার্কিন নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে বড় রকমের বিবাদ সৃষ্টি হয়।
আল জারিদার প্রতিবেদনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো, এতে সিরিয়ায় সোলাইমানির পর ইরানের দ্বিতীয় উর্ধ্বতন কমান্ডার হিসেবে পরিচিত ‘আবু বকরে’র আসল নাম প্রকাশ করে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, তার নাম মোহাম্মদ রেদা ফালাহ যাদেহ। প্রতিবেদনে সূত্রকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, সোলাইমানি বা রেজা ফালাহ যাদেহ ছাড়াও সিরিয়ায় অবস্থানরত অন্য ইরানি সমরবিদরাও ইসরাইলের টার্গেট হতে পারেন।
উল্লেখ্য, মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও রহস্যঘেরা ব্যক্তিদের একজন হলেন সোলাইমানি। ১৯ বছর ধরে তিনি কুদস ফোর্সের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে দক্ষ সমরবিদ হিসেবে তার বিশেষ পরিচিতি আছে। তার নেতৃত্বাধীন কুদস ফোর্স হলো ইরানের বিপ্লবী রক্ষী বাহিনীর (আইআরএসজি) একটি বিশেষ অভিজাত শাখা। সংস্থাটি ইরানের বাইরে সামরিক ও গোপন অভিযান চালিয়ে থাকে। এই বাহিনী শুধুমাত্র ইরানের সুপ্রিম লিডার আয়াতুল্লাহ খোমেনির কাছে রিপোর্ট পেশ করে।
কুদস ফোর্সের কমান্ডার হিসেবে ইরাক, সিরিয়া ও লেবাননে সোলায়মানির ব্যপক প্রভাব রয়েছে। ইরাকের আইএস-বিরোধী যুদ্ধে সোলাইমানির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে প্রেসিডেন্ট বাশার-আল-আসাদের সরকার টিকিয়ে রাখার নেপথ্যে বড় ভূমিকা তার। পাশাপাশি লেবাননের হিজবুল্লাহ ও ফিলিস্তিনের হামাসকে সামরিক ও কৌশলগত সমর্থন দিয়ে আসছেন তিনি। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইরানের ক্রমবর্ধমান প্রভাব বিস্তারের পেছনে সোলাইমানিকে অনেকখানি কৃতিত্ব দেওয়া হয়। গোপনীয়তাপ্রিয় হিসেবে পরিচিত সোলাইমানির ভাবমূর্তি ইরানে কিংবদন্তীতুল্য। ২০১৬ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, সুলেমানিকে সমর্থন করেন ৩৮ শতাংশ ইরানি। অপছন্দ করেন ১১ শতাংশ। কিন্তু ৪৫ শতাংশই তাকে চিনতে পারেননি।

No comments

Powered by Blogger.