ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়

ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৩ লাখ ১৬ হাজার টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে খুলনার তিন পুলিশের বিরুদ্ধে। বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানোর পর উল্টো ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধে একের পর এক হয়রানিমূলক মামলা ও পুরোনো মামলায় গ্রেপ্তার করে দীর্ঘদিন কারাবন্দী করে রাখা হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন খুলনার চুকনগর বাজারের ব্যবসায়ী রেজাউল করিম সরদার। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রেজাউল করিমের স্ত্রী রুমা খাতুন। অভিযুক্ত ওই তিন পুলিশের একজন সাবেক জেলা গোয়েন্দা পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) ত ম রোকনুজ্জামান। অন্য দুজন হলেন কয়রা থানার সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) প্রকাশ চন্দ্র সরকার ও ডুমুরিয়া থানার সাবেক এসআই লিটন মল্লিক। এর মধ্যে রোকনুজ্জামান বর্তমানে জেলা পুলিশের কন্ট্রোল রুমে কর্মরত। সংবাদ সম্মেলনে রুমা খাতুন অভিযোগ করেন, স্বামী রেজাউল করিমকে নির্যাতন ও চাঁদাবাজির অভিযোগে ওই তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের এপ্রিলে আদালতে মামলা করেন তিনি। আদালতের নির্দেশে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলাটি তদন্ত করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। ওই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে রুমা খাতুন নারাজি দিলে আদালত পুনরায় মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেন দুদককে। কিন্তু সেই তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। এখন মামলা তুলে নিতে ওই ব্যবসায়ীকে প্রতিনিয়ত হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তাঁর। নির্যাতনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ব্যবসায়ী রেজাউল করিম সরদার বলেন, চুকনগর বাজারে বন্যা এন্টারপ্রাইজ নামে তাঁর একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।
২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের বেতন দিচ্ছিলেন। তখন ডিবির ওসি ত ম রোকনুজ্জামান ফোর্স নিয়ে তাঁকে ৪১ হাজার টাকা, একটি মুঠোফোনসহ ধরে নিয়ে যান। তাঁরা (পুলিশ) রূপসা থানার তালপুর পুলিশ ফাঁড়িতে তিন দিন আটকে রেখে বেদম মারধর করেন। রেজাউল করিমের স্ত্রী রুমা খাতুন বলেন, ওসি মুঠোফোনে তাঁর কাছে ৮ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। না দিলে রেজাউলকে ক্রসফায়ারে দেওয়ার হুমকি দেন। তিনি ১৪ হাজার টাকা নিয়ে ওই ফাঁড়িতে ছুটে যান। কিন্তু ৪ লাখ টাকা না দিলে তাঁকে আরও মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। কোনোভাবে ৪ লাখ টাকা জোগাড় করতে না পারায় পরদিন রেজাউলকে কয়রা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর সেখানে ২০১৪ সালের ২ ডিসেম্বরের পুরোনো ডাকাতি মামলায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে রুমা খাতুন অভিযোগ করেন, স্বামীকে নির্যাতন ও ক্রসফায়ার থেকে রক্ষা করতে খুলনা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক ত ম রোকনুজ্জামান, কয়রা থানার এসআই প্রকাশ চন্দ্র সরকার ও ডুমুরিয়া থানার এসআই লিটন মল্লিককে বিভিন্ন সময়ে ৩ লাখ ১৬ হাজার টাকা দিয়েছেন তিনি। অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ত ম রোকনুজ্জামান বলেন, রেজাউল করিম সরদার একটি ডাকাতি মামলার আসামি। সুন্দরবনের বিভিন্ন ডাকাত কয়রা থানায় আটকের পর তাঁর নাম বলেছে। এ জন্য তাঁকে অন্যান্য মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছিল। চাঁদার দাবিতে আটক বা নির্যাতনের অভিযোগ সত্য নয়। দুদকের তদন্তেও বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.