রাজ্যসভায় আটকে গেছে ৩ তালাক বিল: শরীয়ার বিধানে হস্তক্ষেপের প্রতিবাদ

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার মুসলিম নারীদের সম্মান, সমতা ও ন্যায় বিচার দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে মন্তব্য করেছেন সংসদবিষয়ক মন্ত্রী অনন্ত কুমার। রাজ্যসভায় তাৎক্ষণিক তালাক বিল ঝুলে থাকাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার সংসদ অধিবেশন শেষে তিনি ওই মন্তব্য করেন। বিরোধী কংগ্রেসের আপত্তিতে তালাক বিল পাস করতে সমস্যা হচ্ছে বলেও তিনি জানিয়েছেন। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী কেন্দ্রীয় সরকারের অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, তাৎক্ষণিক তালাক বিল নিয়ে সরকার এত তৎপর, কিন্তু লোকপাল বিল নিয়ে সেই তৎপরতা নেই কেন? চার বছর আগে, ইউপিএ সরকার লোকপাল বিল পাস করিয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমলে লোকপাল গঠন হল না কেন?’ শুক্রবার সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শেষ হয়েছে। সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় কেন্দ্রীয় সরকারের আনা তালাক বিল দ্রুত পাস হয়ে গেলেও উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় বিরোধিরা ওই বিলে নানা সংশোধনী আনাসহ বিলটি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু সরকার পক্ষ তাতে রাজি না হওয়ায় বিলটি রাজ্যসভায় আটকে গেছে। ফলে, সরকারের সামনে আগামী বাজেট অধিবেশনে বিলটি রাজ্যসভায় পাস করানোর চেষ্টা করা ছাড়া উপায় নেই। যেভাবে তড়িঘড়ি করে তালাক বিল নিয়ে জনমত যাচাই, বিতর্ক অথবা মুসলিম পার্সোনাল ল’বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই সরকার এটি সংসদের উভয়কক্ষে পাস করানোর জন্য চেষ্টা করেছিল তা ব্যর্থ হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। আগামী বাজেট অধিবেশন শুরু হবে আগামী ২৯ জানুয়ারি।
এ সংক্রান্ত সরকারি ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় এর মধ্যে অর্ডিন্যান্স জারি করার কোনো প্রথা না থাকায় সরকারকে বাজেট অধিবেশন পর্যন্ত ওই বিল নিয়ে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় সরকার যেভাবে তাৎক্ষণিক তালাককে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করে বিল পাস করানোর চেষ্টা করছে তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। মুসলিম পার্সোনাল ল’বোর্ড এ নিয়ে আগেই আপত্তি জানিয়েছে। বিরোধীদের দাবি, তাৎক্ষণিক তালাকে যদি স্বামীর তিন বছরের জন্য কারাবাস হয় তাহলে স্ত্রী ও সন্তানদের ভরণপোষণে আর্থিক সাহায্য কে দেবে? কারাগারে থেকে ওই ব্যক্তি উপার্জন করবেন কীভাবে? ওই তিন বছর স্ত্রী ও সন্তানদের কী হবে? সেজন্য আগে তার স্ত্রী ও সন্তানদের জীবন জীবিকা ও ভবিষ্যতকে সুরক্ষিত করা প্রয়োজন। অন্যথায় ওই নারী ও তার পরিবারের সদস্যরা আরো বিপন্ন হবেন। তালাক বিলকে সংসদীয় কমিটিতে পাঠিয়ে পর্যালোচনা করে কিছু সংশোধনীসহ মুসলিম নারীদের অধিকার ও জীবনকে আরো সুরক্ষিত করার চেষ্টা করতে হবে বলেও বিরোধীদের দাবি।

No comments

Powered by Blogger.