হামলাকারী সালমান আবেদিকে আগেই চিনতো বৃটিশ পুলিশ

ম্যানচেস্টার হামলাকারী লিবিয়ান বংশোদ্ভূত বৃটিশ নাগরিক সালমান আবেদি। আইসিসের পক্ষে সদস্য সংগ্রহকারী হিসেবে বৃটিশ পুলিশের কাছে পরিচিত ছিল সে। সোমবার দিবাগত রাতে অ্যারিনা কনসার্ট হলে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা চালানোর আগে সে অনেকটা সময় কাটিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধকবলিত এলাকায়। সেখানে সে সন্ত্রাসী প্রশিক্ষণ পেয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। হামলা চালানোর মাত্র কয়েকদিন আগে সে লিবিয়ায় তিন সপ্তাহের একটি ট্যুর দিয়ে এসেছিল। তার একটি ছবি প্রকাশ করেছে অনলাইন দ্য সান। এ সব খবর দিয়েছে লন্ডনের অনলাইন দ্য ডেইলি মেইল। এতে বলা হয়েছে, সালমান আবেদির বয়স ২২ বছর। সোমবার রাতে সে ম্যানচেস্টারে হামলা চালানো আগেই তাকে চিনতো নিরাপত্তা সার্ভিসগুলো। আইসিসের পক্ষে সদস্য সংগ্রহকারীদের সঙ্গে তার ছিল যোগসূত্র। এসব বিষয় তদন্ত করছে পুলিশ। প্রতিবেশীরাও তাকে চিনতো। কারণ, সব সময় তার মুখে থাকতো ঘৃণাভরা একটি ভাবধারা। অন্যরা বলেন, সে ছিল ফুটবলের পাগল। তার ভালবাসা ছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের প্রতি। হামলার পর মঙ্গলবার ম্যানচেস্টারে তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। বাড়িটি ম্যানচেস্টারের দক্ষিণে ফালোফিল্ডে লাল ইটের তৈরি। তল্লাশি চালানোর সময় রাসায়নিক বিশেষজ্ঞদের দেখা গেছে ওই বাড়ির বাইরে অবস্থান নিতে। তাদের আশঙ্কা সালমান আবেদি বাড়িতে কোন তেজস্ক্রিয় রাসায়নিক পদার্থ রেখে দিতে পারে। সেখান থেকে কোন বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। বাড়িটি তল্লাশিকালে পুলিশ আটক করেছে সালমান আবেদির ভাই ইসমাইলকে (২৩)। হামলার সঙ্গে তিনি কোনভাবে জড়িত কিনা তা জানার জন্য পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। জানা গেছে, সোমবার রাতে হামলা চালানোর আগে সালমান আবেদি লন্ডন থেকে ট্রেনে করে পৌঁছেছে ম্যানচেস্টারে। এখন সংশয় দেখা দিচ্ছে সে এই হামলা চালাতে অন্য কারো সহায়তা নিয়ে থাকতে পারে। এমন কারো সহায়তা নিয়েছে যার প্রতি কোন সন্দেহ বা কোন কালো তালিকায় নেই নাম। এসব বিষয়ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ওদিকে অনলাইন দ্য মিরর লিখেছে, আইসিসের পক্ষে একসময় সদস্য সংগ্রহ করতেন রাফায়েল হস্টি। ২০১৬ সালে ড্রোন হামলায় সিরিয়ায় নিহত হন তিনি। তিনি আবু কাকা আল বৃটানি নামেও পরিচিত ছিলেন। তার সঙ্গে বন্ধুত্ব ছিল সালমান আবেদির। তারা ছিলেন পারিবারিক বন্ধু। আশঙ্কা করা হয়, সালমানকে উগ্রপন্থি হতে সহায়তা করেছেন হস্টি। মঙ্গলবারই পুলিশ ম্যানচেস্টার অ্যারিনা থেকে উদ্ধার করা সিসিটিভিতে সালমানকে দেখতে পেয়েছে। এ সময় তার সঙ্গে কিছু একটা দেখতে পাওয়া গেছে। পুলিশের সন্দেহ এটাই বাসায় তৈরি বোমা। আরো জানা যাচ্ছে, তার পিতা বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বিষয়ক কর্মকর্তা। তিনি লিবিয়ায় যুদ্ধ করতে বৃটেন ছেড়ে গেছেন। তার মাও লিবিয়া চলে গেছেন। তবে যাওয়ার আগে তিনি ছেলের উগ্রপন্থি হয়ে উঠার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সালে ম্যানচেস্টারে জন্ম সালমান আবেদির। পিতামাতার চার সন্তানের মধ্যে সে ছিল তৃতীয়। তার পিতামাতা ছিলেন লিবিয়ার শরণার্থী। লিবিয়ার সাবেক নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির শাসনকালে তারা পালিয়ে বৃটেন চলে যান। ২০১১ সালে গাদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যুত করার যে চেষ্টা হয়েছিল সেই চেষ্টায় অংশ নিতে সালমানের পিতা বৃটেন ছেড়ে লিবিয়া যান বলেও শোনা যাচ্ছে। সালমানের পিতা রমাদান আবেদি। স্ত্রী সামিয়া তাব্বাল (৫০) কে নিয়ে তিনি লন্ডনে পাড়ি দিয়েছিলেন। সেখান থেকে ম্যানচেস্টারের ফালোফিল্ডে। সেখানেই তারা বসতি গড়েন। প্রতিবেশীরা বলেন, সালমান ফুটবলপাগল থাকলেও ২০১১ সালে সব কিছু পাল্টে যায়। হঠাৎ করেই তার পিতা চাকরি ছেড়ে দেন। ছুটে যান লিবিয়ায় যুদ্ধ করতে। কিন্তু পরিবারকে রেখে যান একেবারে শূন্য হাতে। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার পুলিশ সেই বাড়িটি ঘেরাও করে সেখান থেকে সালমানের ভাই ইসমাইলকে আটক করেছে। রাতভর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিনি নিজে একজন আইটি ম্যানেজার। জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি ওল্ডহ্যামে পার্ক কেক বেকারিস-এ কাজ করতেন। স্থানীয় ডিডসবারি মসজিদে এক সময় ঘন ঘন যাতায়াত করতেন সালমান আবেদি। সেখানকার অনেকের সঙ্গেই ছিল ঘনিষ্ঠতা। কিন্তু ওই মসজিদের ইমাম মোহাম্মদ সাঈদ বলেছেন, হটাৎ করে ২০১৫ সালে মসজিদে যাওয়া বন্ধ করে দেয় সালমান। আইএস বিরোধী মন্তব্য করলেই তাতে সে আপত্তি জানাতে থাকে। তবে মাঝে মধ্যে সে মসজিদে যেতো। এর পর মসজিদে যাওয়া একেবারেই কমিয়ে দিতে থাকে সে। সালমান পড়াশোনা করেছে ম্যানচেস্টারের বেশকিছু স্কুলে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো  ম্যানচেস্টার ক্লেয়ারমন্ট প্রাইমারি স্কুল, বার্নেজ একাডেমি, উইলিয়াম হালমে, স্ট্রেটফোর্ড গ্রামার স্কুল। তার সঙ্গে স্কুলে আসা-যাওয়া করতো লিয়ন হল। সে বলেছে, গত বছর সর্বশেষ সালমানের সঙ্গে দেখা হয়েছে। তার মুখে ঘন দাড়ি।

No comments

Powered by Blogger.