শিক্ষকদের কাছে জিম্মি অভিভাবক-শিক্ষার্থী

প্রাইভেট টিউটর ও কোচিংমুখী হয়ে পড়েছে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা। স্কুল-কলেজে কোনো রকম হাজিরা দিয়েই শিক্ষার্থীদের ছুটতে হয় কোচিং সেন্টারে। সেখানেই হচ্ছে তাদের মূল লেখাপড়া। কারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ শিক্ষকই ক্লাসে তেমন মনোযোগী নন। দায়সারা গোছের ক্লাস নিয়েই প্রতিদিনের কাজ শেষ করছেন তারা। এভাবেই অসৎ শিক্ষকরা তাদের কাছে পড়তে বাধ্য করছেন শিক্ষার্থীদের। শুধু তাই নয়, ছাত্রছাত্রীদের বাগিয়ে আনতে নানা অজুহাতে ক্লাসরুম বা পরীক্ষার হলে পেটানো, নম্বর কম দেয়াসহ বিভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নেন শিক্ষকদের কেউ কেউ। এসব কোচিংবাজ শিক্ষকের কাছে রীতিমতো জিম্মি হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এটি যেন ‘মহামারী আকার’ ধারণ করে ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানীসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও। যুগান্তরের দেশব্যাপী অনুসন্ধানে উঠে এসেছে উল্লিখিত চিত্র। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি), জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা (জেএসসি), সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতি এবং ভর্তি পরীক্ষা কোচিং ব্যবসাকে দরুণভাবে উৎসাহিত করছে। এতে বহুগুণে বেড়েছে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ। এছাড়া কোনো কোনো কোচিংয়ে শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে রয়েছে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অসংখ্য অভিযোগ। আর ভর্তি কোচিংসহ কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ছাত্রশিবির ও নিষিদ্ধ ঘোষিত হিজবুত তাহরিরের উগ্র রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচার করার অভিযোগ আছে। শুধু তাই নয়, এসব প্রতিষ্ঠানের আয়ের অর্থ রাজনৈতিক কাজেও ব্যবহার হয় বলেও অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
একইসঙ্গে মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও ভুয়া পরীক্ষার্থী সরবরাহ করারও অভিযোগ রয়েছে কোনো কোনো কোচিং সেন্টার ও শিক্ষকের বিরুদ্ধে। জানতে চাইলে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, কোচিং ব্যবস্থা একটা অনৈতিক পদ্ধতি। এটি মূলধারার শিক্ষা ব্যবস্থাকে একেবারে প্রতিবন্ধী করে ফেলেছে। কাজেই এটার বিরুদ্ধে আমাদের নামতেই হবে। সরকার চাইলে এক বছরের মধ্যে সব ধরনের কোচিং নির্মূল সম্ভব। তবে এটি করার আগে মূলধারার শিক্ষার ক্রমাগত উন্নয়ন করতে হবে। শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্যের বিরুদ্ধে সরকারের ২০১২ সালের নীতিমালা আছে। এটা অনুযায়ী শিক্ষকরা নিজের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী পড়াতে পারবেন না। প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি নিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানের এক ব্যাচে সর্বোচ্চ ১০ জন পড়াতে পারবেন। তবে এ নীতিমালায় বাণিজ্যিক কোচিং বন্ধের কোনো কথা নেই। ১৯৬০ সালের চাকরিবিধিতে স্কুলশিক্ষক, ১৯৭৯ সালের চাকরিবিধিতে উচ্চমাধ্যমিক কলেজশিক্ষক এবং ১৯৯৪ সালের চাকরিবিধিতে ডিগ্রি-অনার্স কলেজের শিক্ষকের প্রাইভেট-টিউশন বা অন্য চাকরি নিষিদ্ধ। কিন্তু এসবের বাস্তবায়ন নেই। শিক্ষকরাও তা মানছেন না। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কোচিং-প্রাইভেটের কারণে তৃতীয় শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীকে দিনে ১২-১৩ ঘণ্টা পর্যন্ত লেখাপড়া করতে হচ্ছে। এসএসসি-এইচএসসির একজন শিক্ষার্থীকে কমপক্ষে ১৫-১৬ ঘণ্টা লেখাপড়ার পেছনে ব্যয় করতে হচ্ছে।
এ কারণে জীবনের শুরুতে শিশুরা খেলাধুলা-বিনোদন সবকিছু বঞ্চিত হচ্ছে। অভিভাবক-বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্লাসে ঠিকমতো পড়ালে শিক্ষার্থীদের কোচিং-প্রাইভেট টিউটরের দ্বারস্থ হতে হয় না। এতে তারা একটু খেলাধুলা ও বিনোদনের সুযোগ পায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোচিং বাণিজ্য বন্ধে পৌনে ৫ বছর আগে করা সরকারের নীতিমালা বা শিক্ষকদের সার্ভিস রুল ঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে কোচিং মহামারী আকার ধারণ করত না। কেননা, শিক্ষকরা কোচিং করাতে না পারলে ক্লাসে ঠিকমতো পড়িয়ে দিতেন। ফলে শিক্ষার্থীদের কোচিং-প্রাইভেটের প্রয়োজন পড়ত খুবই কম। গণসাক্ষরতা অভিযানের (ক্যাম্পে) নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীর সমাপনীর মতো বড় পরীক্ষার বোঝা কোচিং বাণিজ্যকে আরও উৎসাহিত করেছে। আমাদের দেশব্যাপী গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে। অভিভাবকরা এ-প্লাস, গোল্ডেন এ-প্লাসের আশায় কোচিংয়ের পেছনে ছুটছেন। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদও মনে করেন, শ্রেণীকক্ষে মানসম্মত লেখাপড়া নিশ্চিত করতে না পারলে প্রাইভেট-টিউশনি ও কোচিং ব্যবসা মোকাবেলা সম্ভব নয়। তাই ক্লাসরুমের পাঠদান নিশ্চিত এবং সরকারি অর্থায়নে অতিরিক্ত ক্লাস নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে কোচিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রসঙ্গে বলে আসছেন, কোচিং খাতে বছরে অন্তত ৩২ হাজার কোটি টাকার লেনদেন আছে। তবে এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী ৩ বছর আগে কোচিংয়ের যে বার্ষিক লেনদেনের হিসাব দিয়েছেন তা এখন ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে বলে আমার ধারণা।’ কোচিং বাণিজ্যের ভয়াবহতা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দেয়া হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা নীতিমালায়। এতে বলা হয়েছে, এটি বর্তমানে এমন একপর্যায়ে পৌঁছেছে,
যেখানে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন; যা পরিবারের ওপর বাড়তি আর্থিক চাপ সৃষ্টি করেছে। এ ব্যয় নির্বাহে অভিভাবকরা হিমশিম খাচ্ছেন। এছাড়া অনেক শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে পাঠদানে মনোযোগী না হয়ে কোচিংয়ে বেশি সময় ব্যয় করছেন। এক্ষেত্রে দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা এবং অভিভাবকরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। যুগান্তরের পক্ষে কোচিং নিয়ে দেশের বিভিন্ন শহরেও সরেজমিন অনুসন্ধান চালানো হয়। খুলনা ব্যুরো অফিস থেকে জানানো হয়, রাজনৈতিক নেতাসহ প্রভাবশালী মহলের ছত্রচ্ছায়ায় শহরে শতাধিক সেন্টারে কোচিং ব্যবসা চলছে। এগুলোর বাইরে শিক্ষকরা নীতিমালা লঙ্ঘন করে একই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। বগুড়া ব্যুরো জানায়- শহর, শহরতলী ও বিভিন্ন উপজেলায় সহস্রাধিক কোচিং সেন্টার গড়ে উঠেছে। এর বাইরে শিক্ষকের কোচিং তো আছেই। রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, কিশোরগঞ্জ ব্যুরো থেকেও একই তথ্য জানানো হয়েছে। অভিভাবকরা যুগান্তরকে জানিয়েছেন, শিক্ষকরা ক্লাসরুমের চেয়ে নিজের প্রাইভেট বা কোচিংয়ে পড়াতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। ক্লাসে ঠিকমতো পড়ানো হয় না বলে শিক্ষার্থীরা বাণিজ্যিক কোচিংয়ে ভিড়ছে। কোচিং সেন্টার শুধু বিভাগীয় শহরে নয়, জেলা-উপজেলায়ও ছড়িয়ে পড়েছে।
চার ধরনের কোচিং : অনুসন্ধানে একাডেমিক, ভাষাশিক্ষা, ভর্তি এবং চাকরি- এ চার ধরনের কোচিংয়ের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে যুগান্তর প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য ও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, একাডেমিক কোচিংয়ের দুটি ধারা। এর একটি অসৎ শিক্ষকরা পরিচালনা করেন। অপরটি বাণিজ্যিক কোচিং সেন্টার। মিরপুর, শাজাহানপুর, বনশ্রীসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, স্কুল-কলেজের অসাধু শিক্ষকরা নিজের বাসায় বা আলাদা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বাণিজ্য খুলে বসেছেন। প্রশাসনের নজর এড়াতে কোচিং সেন্টারের কোনো নাম ব্যবহার করা হচ্ছে না। এদের কারও ব্যবসা এমন যে, একই ভবনের নিচ তলা ও দোতলার ফ্লোরজুড়েও চালাচ্ছেন কোচিং ব্যবসা। কেউ ব্যাচভিত্তিক আবার কেউ মিনি স্কুল খুলে একসঙ্গে ৫০-৬০ জন বসিয়ে সাধারণ ক্লাসের মতোই পড়াচ্ছেন। এভাবে সপ্তাহে মাত্র ২-৩ দিন পড়িয়ে মাসে হাতিয়ে নিচ্ছেন এক থেকে-পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত। অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর বাংলা মাধ্যমের নামি স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের গড় বেতন ৮০০ টাকা। কিন্তু তৃতীয় শ্রেণীর এক ছাত্রের কোচিংয়ে ব্যয় হয় ৩ হাজার টাকা। একজন পঞ্চম শ্রেণীর (পিইসি) পরীক্ষার্থীর পেছনে ব্যয় গড়ে ৪ হাজার, জেএসসি পরীক্ষার্থীর পেছনে ৫ হাজার ১০০ এবং নবম শ্রেণির ছাত্রীর কোচিং-প্রাইভেটে খরচ সাড়ে ১১ হাজার টাকা। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীতেও ১১-১২ হাজার টাকা ব্যয় হয় বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে মাসে কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত আয়করা শিক্ষক সারা দেশে অনেক। এ প্রক্রিয়ায় স্বল্প আয়ের এসব শিক্ষক কোটিপতি বনে গেছেন।
অনেকের রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় একাধিক ফ্ল্যাট-জমি কেনার খবর পাওয়া গেছে। আছে দামি গাড়ি-মোটরসাইকেল। এ বাড়তি আয়ের ট্যাক্স দেয়ার রেকর্ড খুব একটা নেই। ২০১৩ সালে একটি গোয়েন্দা সংস্থা সরকারি-বেসরকারি হাইস্কুলের কোচিংবাজ শিক্ষকের তালিকা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। তাতে শুধু গণিত, ইংরেজি আর বিজ্ঞান বিষয়ই নয়, শারীরিক শিক্ষা, আরবি, ধর্ম, বাংলা, চারুকলা ও সামাজিক বিজ্ঞানের মতো বিষয়ের শিক্ষকও কোচিং বাণিজ্যে জড়িত। গোয়েন্দারা ৩২২টি সরকারি স্কুলের মধ্যে ১০৯টিতে অনুসন্ধান চালিয়ে ৫০৬ জন কোচিংবাজ শিক্ষকের সন্ধান পেয়েছেন। ওই প্রতিবেদনের আলোকে পরে চিহ্নিতদের বদলি করার উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে অদ্যাবধি সেটি কার্যকর হয়নি। মাউশিতে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারাও কোচিংবাজ শিক্ষকদের প্রশ্রয়দাতার ভূমিকা পালন করে বলে অভিযোগ আছে। আরও অভিযোগ, বেসরকারি স্কুলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধান, প্রভাবশালী শিক্ষক, পরিচালনা কমিটির এক শ্রেণীর সদস্যরাও সহায়তা করছেন। এর বিনিময়ে কোচিংবাজ শিক্ষকদের কাছ থেকে মাসোয়ারা নিয়ে থাকেন তারা। শুধু তাই নয়, কোচিং করানোর জন্য শিক্ষকদের কাছে স্কুলের ক্লাসরুমও ভাড়া দেয়ার ঘটনা আছে। সরেজমিন দেখা যায়, কোচিংবাজ শিক্ষকরা শিক্ষার্থী আকৃষ্ট করতে নামের সঙ্গে ডাক্তারদের মতো নানা বিশেষণও ব্যবহার করেন। বনশ্রীর বি-ব্লকের ২ নম্বর রোডের ২৯ নম্বর বাড়িতে ঢাকা ইমপিরিয়াল কলেজের ৫ শিক্ষকের কোচিং সেন্টার। সেখানে সাইনবোর্ডে লেখা আছে- ফয়সাল বার্ক,
দেবাশীষ কুমার ধর ও রাজীব আহম্মেদ সৃজনশীল স্পেশালিস্ট। সামসুজ্জোহা জুয়েল ঢাকা বোর্ড ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষক এবং আনোয়ার হোসেন শেখ নামের সঙ্গে লাগিয়েছেন ক্যাডেট কোচিং স্পেশালিস্ট। ১৩ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টার দিকে পরিদর্শনকালে কোচিংটি বন্ধ পাওয়া যায়। কোচিংয়ের পাশের বাড়ির এক নিরাপত্তাকর্মী জানান, প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কয়েকশ’ ছাত্রছাত্রী ওখানে কোচিং করে। এ ব্যাপারে ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে দেবাশীষ কুমার ধর মোবাইল ফোনে যুগান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন এখনও কলেজে আসেনি। তাছাড়া ওই নিষেধাজ্ঞা এমপিওভুক্ত এবং সরকারি কলেজের শিক্ষকের ক্ষেত্রে। তাদের মতো প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তাই অধ্যক্ষের মৌখিক অনুমতি নিয়েই আমরা কোচিং করাচ্ছি।’ অভিভাবক ঐক্য ফোরামের চেয়ারম্যান জিয়াউল কবীর দুলু বলেন, কোচিংবাজ শিক্ষকরা স্কুলে মনোযোগ দেন না। ক্লাসে শুধু সময় কাটান আর কোচিংয়ের দাওয়াত দেন। কোচিং না করলে মারধরসহ নানা নির্যাতন করা হয়। গত বছর ২৫ অক্টোবর আইডিয়াল স্কুল ও কলেজে টেস্ট পরীক্ষা চলাকালে ওয়ারেসুল ইসলাম হিমেল নামে এক ছাত্রকে পিটিয়ে হাত ভেঙে দেয়ার কথা জানান তিনি।
বাণিজ্যিক কোচিং : একাডেমিক কোচিংয়ের আরেকটি ধারা পরিচালনা করে থাকে বাণিজ্যিক কোচিং সেন্টারগুলো। ফার্মগেট, মৌচাক-মালিবাগ, আরামবাগ, আজিমপুরের চায়না গলি, নীলক্ষেত, সিদ্ধেশ্বরী, শান্তিনগর মোড়, শাহজাহানপুর, মতিঝিলের বেনজীরবাগান, বনশ্রী-মুগদাপাড়া, কাকরাইল, মিরপুর-উত্তরার বিখ্যাত স্কুলগুলোর আশপাশ এলাকা ইতিমধ্যেই ‘কোচিং অঞ্চল’ হিসেব সবার কাছে পরিচিতি লাভ করেছে। এসব এলাকায় হাঁটলেই নজরে পড়ে শত শত বাণিজ্যিক কোচিং সেন্টারের সাইনবোর্ড। এছাড়া রাজধানীর অলিগলিতে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ‘স্যার’র নামে কোচিং সেন্টার। হাঁটলেই দেয়ালে, বিদ্যুতের খুঁটিতে, বাসের পেছনে, ব্যানারে, পোস্টারে-ফেস্টুনে, ওভারহেড সাইনবোর্ডে দেখা যায় প্রাইভেট আর কোচিংয়ের বিজ্ঞাপন। পত্রিকায় ‘টিউটর/গৃহশিক্ষক দিচ্ছি’ বিজ্ঞাপন-লিফলেট অহরহই চোখে পড়ে।
ভাষা শিক্ষা, ভর্তি এবং চাকরি : বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও বুয়েট ভর্তি কোচিং আছে। এছাড়া আছে বিভিন্ন ভাষা শিক্ষা, ক্যাডেট কলেজে ভর্তি এবং চাকরির কোচিং সেন্টারও। এসব কোচিং সেন্টারে অধিকাংশই ফার্মগেট এলাকায় অবস্থিত। কাঁচা টাকা আয় হয় বলে এসব কোচিং সেন্টারের অসংখ্য শাখা রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাসহ ঢাকার বাইরে ছড়িয়ে পড়েছে। নীলক্ষেতে রাফিন প্লাজায় সাইফুরস, ওরাকল, কনফার্ম, অনির্বাণসহ ৬টি কোচিং সেন্টার আছে। নীলক্ষেতে তুলার মার্কেটেও আছে চারটি কোচিং সেন্টার। মৌচাক কোচিংয়ের আরেক প্রসিদ্ধ এলাকা। এভাবে কলাবাগান, ধানমণ্ডি, উত্তরাসহ রাজধানীর অলিগলিতে বিভিন্ন ধরনের কোচিং সেন্টার গড়ে উঠেছে। এক সময়ে পজিট্রুন-শুভেচ্ছা ইত্যাদি বিভিন্ন নামে কোচিং সেন্টার ছিল। তা এখন নেই। ওই কোচিংয়ের মালিকরা মোটা অঙ্কের অর্থ আয় করে অন্য ব্যবসায় মনোনিবেশ করেছেন। ইউসিসি নামে আরেকটি কোচিং সেন্টার ফার্মগেট এলাকায় বিশাল ভূসম্পত্তি গড়ে তুলেছে। ফোকাস, রেটিনা, কনক্রিটসহ অন্তত ১০টি কোচিং সেন্টার ছাত্রশিবিরের আয়ের বড় একটা উৎস বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

No comments

Powered by Blogger.