‘যেন যমের হাত থেকে বেঁচে বাড়ি ফিরলাম’

আতিয়া মহলের অদূরে হুমায়ুন চত্বরে জঙ্গিদের ছোড়া প্রথম গ্রেনেড বিস্ফোরণে আহত বিপ্লব পাল (৪০)। তিনি যুগান্তরকে জানালেন, ‘কখনও ভাবিনি স্ত্রী-সন্তান আর স্বজনদের মুখ দেখব। ভেবেছিলাম হয়তো আত্মীয়স্বজন কেউ আমার মৃত্যুর খবরও জানবে না। মনে হচ্ছে যেন যমের হাত থেকে বেঁচে বাড়ি ফিরলাম।’ রোববার রাতে বড়লেখার দক্ষিণভাগ ইউনিয়নের নিজ দক্ষিণভাগ (পালপাড়া) গ্রামে নিজের বাড়িতে যুগান্তরকে সেদিনের দুর্বিষহ অনুভূতির কথা এভাবেই জানালেন বিপ্লব পাল। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ থেকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আটদিন চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরলেন তিনি। বিপ্লব পাল মৃত বীরেন্দ্র পাল ভাদাইর দ্বিতীয় ছেলে। বাড়ি ফেরার খবরে বড়লেখা উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম সুন্দরসহ আত্মীয়স্বজনরা তাকে দেখতে ভিড় জমান সেখানে। দুই ছেলের জনক বিপ্লব পাল চিড়া-মুড়ি বিক্রি করে কোনো মতে সংসার চালাতেন। বুক, মুখ ও পায়ে অসংখ্য স্পি­ন্টারের যন্ত্রণায় বিছানায় কাতরাতে কাতরাতে তিনি জানান, শিববাড়ির এক কিলোমিটারের মধ্যে পৈতপাড়া গ্রামে ভাজিতি রিম্পি রানি পালের অসুস্থতার খবর পেয়ে ২৪ মার্চ তাকে দেখতে গিয়েছিলেন। ভাতিজির বাড়ি থেকে পরদিন (২৫ মার্চ) বাড়ি ফেরার জন্য গাড়ির অপেক্ষা করছিলেন। অনতি দূরে আতিয়া মহলে জঙ্গি আস্তানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের কারণে রাস্তায় যানবাহন চলাচল করতে দেয়া হয়নি। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শিববাড়ি থেকে হেঁটে হুমায়ুন চত্ব¡রের দিকে যাচ্ছিলেন। আনুমানিক ৭টার দিকে হঠাৎ বিকট শব্দে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো কিছু পদার্থ পা, বুকসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে পড়লে তিনি অচেতন হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এ সময় মনে হয়েছিল এই বুঝি প্রাণটা বেরিয়ে যায়। এরপর পুলিশ ভ্যানে ওঠা ছাড়া কোনো কিছুই মনে নেই।
অনেক রাতে বুঝতে পারেন তিনি হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছেন। তার মতো ৫৪ জনকে ওসমানীতে ভর্তি কর হয়। সেদিনের ঘটনার কথা মনে হলে এখনও গা শিহরে ওঠে। দরজা-জানালার শব্দ শুনলেই ভয়ে চমকে ওঠেন। বিপ্লব পাল আরও জানান, হাসপাতালে তাকে আট দিন সিটে রাখা হয়েছে। প্রথম চার দিন সাংবাদিক ও পুলিশের কর্মকর্তাদের আসা-যাওয়ার কারণে ডাক্তাররা যত্নসহকারে চিকিৎসা নেন। দুই পায়ে ব্যান্ডেজ করেন। পা ও শরীর থেকে কয়েকটি স্পি­ন্টার বের করেন। পরের চার দিন ডাক্তাররা আগের মতো খোঁজখবর নেননি। শনিবার রাতে হাসপাতাল থেকে অনেকটা জোর করেই তাকে বিদায় করে দিয়েছেন। ডাক্তাররা বলেছেন, ১৩ এপ্রিল চেকআপ করাতে হাসপাতালে যেতে। দৈন্যতায় চিকিৎসা নিয়ে মারাত্মক দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. কামরান আক্তার জানান, আহত বিপ্লব পালের উন্নত চিকিৎসা আর যথাসময় শরীরে থাকা স্পি­ন্টার বের না করলে হয়তো পঙ্গুত্ব বরণ করতে হবে। তিনি জানান, তিনি দরিদ্র মানুষ। কিভাবে চিকিৎসা করবেন আর কিভাবেইবা সংসার চালাবেন। একদিকে সারা শরীরে অসংখ্য স্পি­ন্টারের যন্ত্রণা, অন্যদিকে স্ত্রী সন্তানের ভরণ পোষণের চিন্তায় চোখে অন্ধকার দেখছেন। বড়লেখা উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম সুন্দর জঙ্গিদের গ্রেনেড হামলায় আহত দরিদ্র বিপ্লব পালের সরকারিভাবে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। তিনি ব্যক্তিগতভাবে উপজেলা পরিষদ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

No comments

Powered by Blogger.