রুদ্রপুর কত দূর? by শেখ রোকন

 নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত প্রায় পৌনে শতক পুরনো ভ্রমণ ম্যাগাজিন 'ট্রাভেল+লেজার' মাঝে মধ্যেই কৌতূহলোদ্দীপক নানা বিষয়ে ফিচার করে থাকে। যেমন বিশ্বের রোমান্টিকতম ৫১ হোটেল নিয়ে তারা যে ফিচারটি এখন হোমপেজে শীর্ষ আইটেম হিসেবে প্রদর্শন করছে, তা অনেককেই নিঃসন্দেহে আকৃষ্ট করবে।
এমন আরও কিছু আইটেমের একটি হচ্ছে 'ওয়ার্ল্ডস মোস্ট বিউটিফুল বিল্ডিংস'। সেখানে সারাবিশ্বের ২৩টি ভবন তারা নির্বাচন করেছে নানা বিবেচনায়। ফিচারের শুরুতে স্বীকারও করেছে যে তাদের তালিকা প্রশ্নহীন নয়। কিন্তু কেন এর একেকটি ভবন তাদের বিবেচনায় 'সুন্দর' তার ব্যখ্যাও তারা দিয়েছে।
শীর্ষ ২৩-এর মধ্যে রয়েছে, প্রথম থেকে যদি ধরি_ জার্মানির ব্রান্ডারবার্গ টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির আইসিএমসি ভবন, স্পেনের বার্সেলোনার সাগরাদা ফ্যামিলিয়া ভবন, আরব আমিরাতের দুবাইয়ে অবস্থিত বুর্জ আল আরব হোটেল, নেদারল্যান্ডসের ইনস্টিটিউট ফর সাউন্ড অ্যান্ড ভিশন, ভারতের স্বর্ণ মন্দির, ব্রাজিলের ন্যাশনাল কংগ্রেস হল, স্পেনের গাগেনহেইম, নিউইয়র্কের ক্রিসলার বিল্ডিং, ফ্রান্সের মাউন্ট সেইন্ট মিশেল, যুক্তরাষ্ট্রের কানসাস সিটির নেলসন-এটকিনস মিউজিয়ামের ব্লচ ভবন, হাঙ্গেরির বুদাপেস্টের গ্রেশাম প্যালেস, জাপানের টোকিওর ক্রিস্টিয়ান দায়োর স্টোর, নিউইয়র্কের হার্স্ট টাওয়ার, সুইজারল্যান্ডের থার্মে ভ্যালস, ভুটানের টাইগার নেস্ট রাজদরবার, নরওয়ের অসলোর নিউ নরওয়েজিয়ান অপেরা অ্যান্ড ব্যালে, মালির দিনেতে অবস্থিত বড় মসজিদ, রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের ক্যাথেরিন প্যালেস, জার্মানির দিসাউতে অবস্থিত বাউহাউস, আলবেনিয়ার একরন বয়েজ অ্যান্ড গার্লস ক্লাব-টু, থাইল্যান্ডের চিয়াংমাইয়ের ওয়াট রং খুন ভবন এবং রুদ্রপুরের হস্তনির্মিত বিদ্যালয় ভবন।
রুদ্রপুর? হ্যাঁ রুদ্রপুর, বাংলাদেশ। এই ঠিকানাই দেওয়া আছে কেবল। বাংলাদেশের অনুপম স্থাপত্য জাতীয় সংসদ ভবন, বায়তুল মোকাররম মসজিদ, কিংবা কান্তজির মন্দির নয়, রুদ্রপুর স্কুল ভবন। বিশ্বের সুন্দরতম ভবনগুলোর ওই তালিকায় প্রত্যেকটি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া রয়েছে। রুদ্রপুর স্কুল সম্পর্কে বলা হয়েছে, পুরস্কার বিজয়ী বিদ্যালয় ভবনটির নকশা করেছেন দু'জন তরুণ জার্মান স্থপতি। নির্মাণকাজে ব্যবহৃত হয়েছে বাঁশ ও কাদা মাটির মতো স্থানীয় উপকরণ ও পদ্ধতি। এই ভবনের 'আভিজাত্য উল্লেখযোগ্য'; বিশেষ করে বাঁশের ছাদ। প্রত্যেক দরজায় ঝুলে থাকা রঙিন পর্দা তুলে ধরছে বিদ্যালয় ভবনটির সহজ সৌন্দর্য।
কীভাবে অন্যতম সুন্দর ভবনটিতে যেতে হবে, আর বাইশটা স্থাপনার মতো রুদ্রপুর বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও বলে দেওয়া আছে আলাদা করে_ বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকা থেকে পাক্কা ২৩০ মাইলের দূরত্ব। ১০ ঘণ্টার ড্রাইভ। যাত্রাপথের 'শ্যামল' সৌন্দর্যের কাছে এই দূরত্ব কিছুই নয়।
তারপর আর কিছু নেই। রুদ্রপুর কোথায়? ঢাকা থেকে উত্তরে, দক্ষিণে, না পশ্চিমে? কোন জেলা, কোন থানা_ কিছুই লেখা নেই।
ইন্টারনেট, বিশেষ করে গুগল সার্চ ধন্বন্তরী। সেখানে পাওয়া গেলে রুদ্রপুর স্কুল সম্পর্কে বিস্তারিত_ দীপশিখা নামে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা 'এমইটিআই' (মডার্ন এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট) স্কুলটি পরিচালনা করে। সেখানে আনন্দ, দলভিত্তিক পড়াশোনা এবং প্রাকৃতিক সর্বোত্তম ব্যবহার শিক্ষা দেওয়া হয়। দেখা গেল, এবারই প্রথম নয়, স্কুলটি এর আগেও নানা স্বীকৃতি পেয়েছে। ২০০৭ সালে আগা খান অ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচার। একই বছর জিতেছে ইন্টারন্যাশনাল ব্যাম্বু বিল্ডিং ডিজাইন কমপিটিশন। এর স্থপতিদের সম্পর্কেও বিস্তারিত জানা গেল। কিন্তু স্কুলটি কোথায়, কোন এলাকায় সে সম্পর্কে নৈবচ নৈবচ।
অনেক খুঁজে জানা গেল, দিনাজপুরে রুদ্রপুর বলে একটি এলাকা রয়েছে। স্কুলটি কি সেখানে? আমাদের দিনাজপুর প্রতিনিধিকে ফোন করে জানা গেল, হ্যাঁ সেখানে এমন একটি বিদ্যালয় ভবন রয়েছে, এ নিয়ে তিনি সমকালে প্রতিবেদনও করেছেন। ইন্টারনেটে নেই কেন? কে জানে!
 

No comments

Powered by Blogger.