সাকার হুমকিঃ দুই বছর জেলে রাখছিস, বের হইয়া নেই

অত্যন্ত অশ্লীল ভাষায় রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেলকে গালাগালি করলেন মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরী।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা এর প্রতিবাদ করে উঠলে আসামিপক্ষের আইনজীবীরাও সমান তালে চিৎকার করতে থাকেন। এ সময় সাকা চৌধুরী ‘‘দুই বছর জেলে রাখছিস, বের হইয়া নেই’’ বলে চিৎকার করে হুমকিও দেন।

মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে এ ঘটনায় উত্তপ্ত পরিবেশের সৃষ্টি হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর এজলাস কক্ষে। ঘটনার সময় ট্রাইব্যুনালের তিন বিচারপতি অনেকটা বাকরুদ্ধই হয়ে ছিলেন।

সাকা চৌধুরীর পক্ষে করা চারটি আবেদনের শুনানিকালে এ অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সাকা চৌধুরীর পক্ষে প্রথমে শুনানি করেন তার আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম। পরে রাষ্ট্রপক্ষে আবেদনের বিপক্ষে যুক্তি দিতে দাঁড়ান অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম। তিনি যখন তার বক্তব্য রাখছিলেন, তখন আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সাকা চৌধুরী তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে উচ্চস্বরে বিভিন্ন কথা বলে যাচ্ছিলেন। এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল পেছনে ফিরে তাকে চুপ করার অনুরোধ জানিয়ে নিজের বক্তব্য অব্যাহত রাখলে তাকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেন সাকা চৌধুরী।

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা সমস্বরে এর প্রতিবাদ জানালে আসামিপক্ষের আইনজীবীরাও চিৎকার করে তাদের গালি দিতে থাকেন।

এ সময় সাকা চৌধুরীও ‘‘দুই বছর জেলে রাখছিস, বের হইয়া নেই’’ বলে চিৎকার করতে থাকেন।

পরে দুই পক্ষের সিনিয়র আইনজীবীদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে এলে সাকা চৌধুরী ট্রাইব্যুনালের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘আমাকে বার বার প্রভোক (প্রভাবিত) না করলে কি হয় না? আমি ভদ্রভাবে চেষ্টা করছি কথা বলার।’’

এ সময় ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর তাকে বলেন, ‘‘আপনি কথা কেন বলবেন? আপনার আইনজীবীতো রয়েছেন, তিনি কথা বলবেন।’’

এ সময় সাকা আবার বলে ওঠেন, ‘‘আমি কথা বলতে পারি, এটা আমার অধিকার।’’

সাকা চৌধুরীর আবেদনের শুনানি মঙ্গলবার সকালে শুরুর পর থেকেই তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চিৎকার করে কথা বলে শুনানি কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছিলেন। মধ্যাহ্ন বিরতির পর দুপুর ২টায় আবার শুনানি শুরু হলে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘‘তাকে এখানে(এজলাস কক্ষে) আনার দরকার নেই।’’

এ সময় সাকা চৌধুরীর আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম আসামির উপস্থিতিতেই শুনানি করার আবেদন জানালে ট্রাইব্যুনাল তাকে লিখিতভাবে নিশ্চয়তা (আন্ডারটেকিং) দিতে বলেন যে, তিনি বিচারকাজ চলাকালে কথা বলে বিরক্ত করবেন না। এ সময় ব্যারিস্টার ফখরুল মৌখিকভাবে বললে সাকা চৌধুরীকে এজলাস কক্ষে উপস্থিত করা হয়। শুনানি বিকেল সোয়া ৪টায় শেষ হয়।

বৃহস্পতিবার ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেছেন  চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের ট্রাইব্যুনাল।

বেলজিয়ামের ব্রাসেলস প্রবাসী বাংলাদেশি আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ আহমেদ জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর পদত্যাগী চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের স্কাইপি কথোপকথনের সূত্র ধরে গত ১৯ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুমের অপসারণ চেয়ে ও ২৪ ডিসেম্বর আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে দু’টি আবেদন করেন সাকা চৌধুরী। বিচারপতি নিজামুল হকের স্কাইপি কথোপকথনের সঙ্গে তাদের নাম আসার অভিযোগ তুলে এসব আবেদন করা হয়। এরপর গত ২৬ ডিসেম্বর বিচারপতি নিজামুল হক ‘স্কাইপি কেলেঙ্কারি’র সঙ্গে জড়িত কিনা তা ট্রাইব্যুনালে এসে জবাব দেওয়ার জন্য তাকে সমন জারি এবং ট্রাইব্যুনাল-১ এর অন্য দুই বিচারপতিও এ ধরনের সংলাপ করেছেন কিনা- সে বিষয়ে ব্যাখ্যা-প্রমাণ দেওয়ার জন্য আরো দু’টি আবেদন করেন সাকা চৌধুরী।

সাকার পক্ষে আবেদনগুলো করেন তার আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম। মঙ্গলবার চারটি আবেদনের শুনানি শুরু হয়েছে একসঙ্গে।

ট্রাইব্যুনাল-১ এ বিএনপি নেতা সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলার বিচার চলছে এবং মামলাটি বর্তমানে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু সাকা চৌধুরী পর পর ওই চারটি আবেদন করায় আবেদনগুলোর নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলার বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত রেখেছেন ট্রাইব্যুনাল।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি আহমেদ জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে বিচারপতি নিজামুল হকের স্কাইপি সংলাপের ওপর সংবাদ প্রকাশিত হয় দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায়। এরপর গত ১১ ডিসেম্বর পদত্যাগপত্র জমা দেন বিচারপতি নিজামুল হক।

বিচারপতি নিজামুল হকের পদত্যাগের পর ১৩ ডিসেম্বর দু’টি ট্রাইব্যুনালই পুনর্গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন মন্ত্রণালয়। এতে ট্রাইব্যুনাল-১ এ বিচারপতি নিজামুল হকের স্থলে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর।

এ সুযোগে সাকা চৌধুরী একের পর এক আইনবিরোধী ও অযৌক্তিক আবেদন করে বিচারিক প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ।

No comments

Powered by Blogger.