চলতি মাসে মাঝারি থেকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ

গত ২১ ডিসেম্বর থেকে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়ে এখনও তা অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে আবহাওয়া অধিদফতর পূর্বাভাস দিয়েছে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে নতুন শৈত্যপ্রবাহ শুরু হচ্ছে। বর্তমানে সারাদেশের ওপর বইতে থাকা শৈত্যপ্রবাহ শেষ হতে না হতে শুরু হবে নতুন শৈত্যপ্রবাহ।
আর এ শৈত্যপ্রবাহ মাঝারি থেকে তীব্র আকার ধারণ করতে পারে বলে জানা গেছে। আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে এ মাসে দুই বা তার অধিক শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আগামী দু’একদিনের মধ্যে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। গত কয়েকদিনের চেয়ে সোমবার তাপমাত্রার গড় ব্যবধান কিছুটা বাড়লেও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এখানও স্বাভাবিক পর্যায়ে আসেনি। এদিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে রাজশাহীতে ৭.৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এ ছাড়া দেশের অধিকাংশ বিভাগের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে ২ থেকে ৫ ডিগ্রী নিচে। ফলে সারাদেশে শীত কিছু কমলেও পরিস্থিতির তেমন কোন উন্নতি হয়নি।
সোমবার ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে প্রায় ২ ডিগ্রী কম। চট্টগ্রামে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এ ছাড়া রাজশাহীতে ৭.৭ ডিগ্রী যা স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে প্রায় ৫ ডিগ্রী কম। রংপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯.০, খুলনায় ৯.৫, বরিশালে ৮.৫ এবং সিলেটে ১১.৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রীর নিচে নেমে গেলে তাকে অস্বাভাবিক হিসেবে ধরা হয়। এদিকে গত কয়েকদিনের চেয়ে দেশের প্রায় সব বিভাগের গড় তাপমাত্র বেড়েছে ১২ থেকে ১৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত। ফলে শীতের তীব্রতা কিছুটা কমেছে বলে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন। তবে জানুয়ারি থেকে নতুন করে শৈত্যপ্রবাহ হলে শীতের মাত্রা আরও বেড়ে যেতে পারে বলে জানা গেছে।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে বরিশালে আরও দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ঘন কুয়াশার কারণে বিভিন্ন নৌরুটে এখন যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটে ৭ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল বলে সংশ্লিষ্ট রিপোর্টার জানিয়েছেন।
স্টাফ রিপোর্টার মুন্সীগঞ্জ থেকে জানান, ঘন কুয়াশার কারণে সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ৭ ঘণ্টা মাওয়া-কাওড়াকান্দি ফেরি সার্ভিস সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। এই সময় মাঝপদ্মায় আটকা পড়েছে তিন সহস্রাধিক যাত্রীসহ ৮টি ফেরি। ফলে নদীর উভয়পাড়ে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। সন্ধ্যায় দু’পারে ৫ শতাধিক যান পারাপারের অপেক্ষায় থাকে।
মাওয়ায় বিআইডব্লিউটিসির ব্যবস্থাপক সিরাজুল হক জানান, ঘন কুয়াশার কারণে ভোর ৩টা থেকে ফেরি চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। কুয়াশার তীব্রতায় নদীর মধ্যে নৌযান চলাচলের নির্দেশক বাতি ও মার্কিং পয়েন্ট দেখতে না পারায় চালকরা ফেরি নদীর মধ্যে নোঙর করে রাখতে বাধ্য হন। কুয়াশা কেটে যাওয়ার পর পারাপার শুরু হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ফেরি সার্ভিস দীর্ঘসময় বন্ধ থাকায় উভয় পারে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে ঘন কুয়াশায় দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলায় যাতায়াতকারী পণ্য পরিবহনকারী যানবাহন এবং বাস ও নৈশকোচের যাত্রীরা প্রায় প্রতিদিনই পড়ছেন চরম ভোগান্তিতে। এতে এই অঞ্চলের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত ও ব্যবসা বাণিজ্যসহ অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
নিজস্ব সংবাদদাতা গৌরনদী থেকে জানান, প্রচ- শৈত্যপ্রবাহে দু’দিনের ব্যবধানে বরিশালের গৌরনদীতে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার রাতে গৌরনদী উপজেলা শ্রমিকলীগের সহসভাপতি ও পৌর সভার দক্ষিণ বিজয়পুর মহল্লার বেলাল ভূইয়া (৫০) ও শনিবার রাতে বাহাদুরপুর গ্রামের প্রবীণ ব্যবসায়ী শাহজাহান আকন (৬০) গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের গৌরনদী উপজেলা হাসপাতালে নেয়ার পথে তাঁরা মারা যান।

No comments

Powered by Blogger.