নির্বাচন নিয়ে শীঘ্রই আলোচনায় বসতে চাই বিএনপির সঙ্গে- সাংবাদিকদেরকে সৈয়দ আশরাফ

 সকল রাজনৈতিক দলের অংশ গ্রহণে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল আসলাম। তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ আলোচনা চলছে। বিএনপি’র সাড়া পেলে অচিরেই নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় বসা হবে।
ড. আকবর আলী খানের দেয়া চার ফর্মুলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ড. আকবর আলী খান কোনদিনই রাজনীতিক ছিলেন না। বুদ্ধিজীবীর বুদ্ধিজীবীদের নিয়েই থাকা উচিত। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী আশরাফ সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভার শুরুতে সাংবাদিকদের একথা বলেন।
আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশের নেতাকর্মীদের সতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ব্যাপক লোক সমাগম হয়েছে। সম্মেলন অনুষ্ঠান স্থলে ছিল পুরোপুরি উৎসবমুখর পরিবেশ। তিনি বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রস্তত করা হয়েছে। যে কোন সময় এই কমিটির ঘোষণা দেয়া হবে। জাতীয় নেতৃত্বের যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়েই এই কমিটি নির্বাচন করা হয়েছে।
রাজনৈতিক সঙ্কট অবসানে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার আগ্রহের কথা জানিয়ে তিনি বলেছেন, বিএনপি’র সাড়া পেলে আগামী নির্বাচন নিয়ে শীঘ্রই আলোচনায় বসতে চাই। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া এর আগে তাদের পক্ষ থেকে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন।
বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে আশরাফ বলেন, সমাধানের একমাত্র পথ আলোচনা, বিকল্প কোন পথ নেই। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আলোচনা যেন শুরু হয়। যত তাড়াতাড়ি এর সুরাহা হয়, গণতন্ত্র ও জাতির জন্য তা তত মঙ্গলজনক। আলোচনার জন্য বিরোধী দলকে কবে নাগাদ প্রস্তাব দেয়া হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আলোচনার জন্য সংসদে দাঁড়িয়ে প্রস্তাব দিয়েছি, অপেক্ষায় আছি প্রতিউত্তরের। আশা করি অচিরেই আলোচনায় বসতে পারব।
বিরোধী দল আলোচনার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব আশা করছে এবং বলেছে, নির্দলীয় সরকার পুনর্বহালের দাবি মেনে নিলে তারা আলোচনায় বসবে। এর জবাবে আশরাফ বলেন, প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে আলোচনার জন্য সংসদে দাঁড়িয়ে প্রস্তাব দিয়েছেন-এর চেয়ে বড় আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব হতে পারে না।
তিনি বলেন, আলোচনা যে চলছে না, তা-ও না। আলোচনা রাজনীতির একটি চলমান প্রক্রিয়া। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সব সময় কথা হয়, শুধু আনুষ্ঠানিকভাবে বসা হয়নি। আশা করি, অচিরেই সাড়া পাব, আর সাড়া পেলে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনায় বসব। এখন মতভেদ থাকলেও আগামী নির্বাচনে সবাই অংশ নেবে এমন আশাবাদ প্রকাশ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা সবাইকে নিয়ে আগামী নির্বাচনে যাব।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলী খানসহ অন্যদের নির্বাচনী ফর্মুলার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, আকবর আলীর বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোন অবদান নেই, তিনি তো রাজনীতি করেননি, বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে বুদ্ধিজীবীরাই থাকুক। রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানে রাজনীতিকদেরই মূল দায়িত্ব নেয়ার আহ্বান জানিয়ে আশরাফ বলেন, আমরা রাজনৈতিক দলের কাছে আহ্বান জানাই- রাজনৈতিক সমস্যা কিভাবে সমাধান করা যায়। এখানে আকবর আলী খান যদি কোন সহযোগী ভূমিকা পালন করেন তাহলে তাঁকে স্বাগত জানাব।
বর্তমান সরকার আমলে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর ফলে বিলুপ্ত হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি, ফলে এখন নির্বাচনের সময় আগের নির্বাচিত দলই ক্ষমতায় থাকবে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না দাবি করে নির্দলীয় সরকার পদ্ধতি ফিরিয়ে আনতে আন্দোলন করছে বিরোধী দল। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার হুমকিও রয়েছে তাদের। নির্বাচন নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যে আকবর আলীসহ কয়েকজনই আলাদাভাবে নির্বাচনের বিভিন্ন পন্থা সুপারিশ করেছেন।
বৈঠকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশে পরিণত হয়েছে, আগে বাংলাদেশে কোন ঘটনা ঘটলে সেটা আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় তেমন কোন সাড়া পেত না। এখন ঘটনা-দুর্ঘটনা যা-ই ঘটুক না কেন, সেটা আন্তর্জাতিক মিডিয়ার প্রধান শিরোনাম হয়। বিশ্বের গণমাধ্যমগুলোতে বাংলাদেশের গুরুত্ব আরও সুদৃঢ় হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন আর ভিক্ষুকের দেশ নয়। এখন বিদেশ থেকে সাহায্য দরকার হবে না, ‘উই আর ক্যাপেবল’, আমাদের সম্পদ দিয়েই দেশকে এগিয়ে নিতে পারব। আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশের জন্য কোন বিদেশী সাহায্যের প্রয়োজন হবে না। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের গতি ধরে রাখার আহ্বান জানান তিনি।

No comments

Powered by Blogger.