রাজউক এনেক্স ভবনে পাটকলের কার্যালয়- নিয়মিত ভাড়া দিচ্ছেন না হুইপ ফিরোজ, দখলও ছাড়ছেন না by অরূপ দত্

রাজউকের এনেক্স ভবনে প্রায় দেড় হাজার বর্গফুট জায়গায় স্থাপিত কার্যালয়ের এক বছরের ভাড়া পরিশোধ করেনি সরকারদলীয় পটুয়াখালীর সাংসদ ও হুইপ আ স ম ফিরোজের মালিকানাধীন পটুয়াখালী জুট মিল। রাজউক তাঁর কাছে ভাড়া ও মাসিক কিস্তি বাবদ প্রায় সাড়ে ২৮ লাখ টাকা পাবে।
রাজউক সূত্র জানায়, দফায় দফায় পাঠানো নোটিশের জবাবও দিচ্ছে না মিল কর্তৃপক্ষ। প্রায় দেড় বছর আগে পটুয়াখালী জুট মিল বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু জাতীয় সংসদের সরকারদলীয় হুইপ হওয়ার কারণে কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না।
রাজউক এনেক্স ভবনে পটুয়াখালী জুট মিল ছাড়াও ১২টি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় রয়েছে। মোট জায়গার পরিমাণ প্রায় ১৫ হাজার বর্গফুট। গতকাল ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এসব কার্যালয় থেকে মালামাল সরিয়ে নিতে বলা হয়েছিল। অন্যথায় কর্তৃপক্ষই উচ্ছেদ করার কথা জানিয়েছে। গতকাল পর্যন্ত কেউ দখল ছাড়েনি।
রাজউক সূত্র জানায়, ভাড়া নেওয়া ১১টি প্রতিষ্ঠান গত নভেম্বর মাসে বকেয়া পরিশোধ করেছে। রাজউকের এনেক্স ভবনে অবস্থিত পটুয়াখালী জুট মিলের করপোরেট কার্যালয়ের বকেয়া ভাড়া গত বছরের (২০১১) অক্টোবরে ছিল ৩৪ লাখ ১১ হাজার ৪৩৬ টাকা। গত বছরের ১১ এপ্রিল ৩৬ কিস্তিতে এই টাকা পরিশোধের অঙ্গীকার করে জুট মিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সে টাকার মধ্যে মাত্র পাঁচটি কিস্তির টাকা পরিশোধ করা হয়। গত ২৪ অক্টোবর শেষ কিস্তির টাকা পরিশোধ করা হয়। বর্তমানে পটুয়াখালী জুট মিলের কাছে রাজউকের মোট পাওনা ২৮ লাখ ১৩ হাজার ৬৫১ টাকা।
যোগাযোগ করা হলে আ স ম ফিরোজ প্রথম আলোকে বলেন, রাজউক থেকে তিনি জায়গা ইজারা নিয়েছিলেন। অহেতুক ভাড়া বাড়ানোয় অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোসহ তিনি নিয়মিত ভাড়া দেননি। তবে সম্প্রতি কিছু টাকা পরিশোধ করেছেন। তিনি আরও বলেন, কার্যালয়ের সাজসজ্জা করতে তিনি প্রায় ৩০ লাখ টাকা খরচ করেছেন। এগুলো সুদ-আসলে ফেরত দিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে রাজউকের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, কার্যালয়ের সাজসজ্জা তিনি নিজের প্রয়োজনে করেছেন। এর সঙ্গে রাজউকের কোনো সম্পর্ক নেই। তাঁরা জানান, এনেক্স ভবনের পঞ্চম তলায় কার্যালয়ের জন্য ভাড়া নেওয়া হয় ১৯৮৫ সালের ২৮ অক্টোবর। ওই কার্যালয়ের আয়তন এক হাজার ৪১৩ বর্গফুট। প্রথমে ভাড়া কম নেওয়া হলেও পরে বাজারমূল্যের সঙ্গে সংগতি রেখে তা বাড়ানো হয়।
জানতে চাইলে রাজউকের চেয়ারম্যান মো. নূরুল হুদা জানান, আইন মোতাবেক বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় সরাতে হবে। কাউকে সে অর্থে ইজারা দেওয়া হয়নি বলেও জানান তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান আরও জানান, নতুন করে কাউকে ভাড়া দেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে না। রাজউকের প্রয়োজনে নিজস্ব জায়গা ফিরিয়ে নিতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, রাজউকের লোকজন বসার জায়গা পাচ্ছেন না, অথচ নিয়মিত ভাড়া না দিয়ে দখলে রাখা হয়েছে পটুয়াখালী জুট মিলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়।
সাংসদ ফিরোজ জানান, ব্যাংক ঋণ নিয়ে সমস্যার কারণে পটুয়াখালী জুট মিল বন্ধ হয়ে যায়। অচিরেই মিলটি আবার চালু করা হবে বলে জানান তিনি।

No comments

Powered by Blogger.