সর্বোচ্চ করদাতা ১০ ব্যক্তি ও ১০ কোম্পানিকে ট্যাক্সকার্ড সম্মাননা

 সর্বোচ্চ করদাতা হিসেবে ব্যক্তি পর্যায়ের ১০ জন এবং কোম্পানি পর্যায়ে ১০টি প্রতিষ্ঠানকে ট্যাক্সকার্ড সম্মাননা প্রদান করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ট্যাক্সকার্ড নীতিমালার আওতায় গত ২০০৯-২০১০ করবর্ষের সর্বোচ্চ করদাতাদের এ সম্মাননা দেয়া হয়েছে।
ব্যক্তি পর্যায়ে সর্বোচ্চ করদাতা হিসেবে ট্যাক্সকার্ড সম্মাননা পেয়েছেন রংপুর কর অঞ্চলের ব্যবসায়ী মোতাজ্জেরুল ইসলাম। কর অঞ্চল ১০ থেকে ইকবাল হায়দার চৌধুরী, কর অঞ্চল-২ কাউছ মিয়া ও মোতাহার হোসেন, কর অঞ্চল-৮ এমএম আমজাদ হোসেন, মোহাম্মদ ইউসুফ, এএ হায়দার হোসেন ও লায়লা হোসেন, কর অঞ্চল-১ চট্টগ্রাম থেকে এএম জিয়াউদ্দিন ইসলাম ও সালাউদ্দিন কাশেম খান সর্বোচ্চ করদাতা হিসেবে ট্যাক্স কার্ড ও সম্মাননাপত্র পেয়েছেন।
এ ছাড়া গত ২০০৯-১০ করবর্ষে সর্বোচ্চ কর প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে শেভরন বাংলাদেশ, সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেড, সিটি ব্যাংক এনএ, আমেরিকান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, ট্রাস্ট ব্যাংক, সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন বাংলাদেশ লিমিটেড, বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন অথরিটি (বেপজা), যমুনা ব্যাংক, একে খান এ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড এবং বাপেক্স বাংলাদেশ ট্যাক্স কার্ড সম্মাননাপত্র পেয়েছে। ট্যাক্স কার্ডধারীরা বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হবেন, বিদেশ ভ্রমণ, সরকারী যানবাহনে আসন অগ্রাধিকার পাবেন এবং সরকারী হাসপাতালে কেবিন সুবিধায় অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
সোমবার রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত করদাতাদের হাতে ট্যাক্স কার্ড ও সম্মাননাপত্র তুলে দেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান মোঃ গোলাম হোসেন। ওই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ। এ ছাড়া এনবিআরের করনীতি ও প্রশাসন বিভাগের সদস্য এমএ কাদের সরকার বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, এ বছর প্রথমবারের মতো সম্মানীত করদাতাদের ট্যাক্স কার্ড প্রদান করা হচ্ছে। আর এসব কিছুর উদ্দেশ্য হচ্ছে ট্যাক্স সম্পর্কে বিরূপ ধারণা দূর করা। ব্যবসা-বাণিজ্য করে যারা বিত্তশালী হচ্ছেন ট্যাক্স দেয়া তাদের সামাজিক দায়িত্ব। আমাদের সকলের উদ্দেশ্য দেশ সেবা ও দেশের উন্নতি। তিনি বলেন, রাজস্ব আয় বাড়াতে এনবিআর ইতোমধ্যে ওয়ানস্টপ সার্ভিস দেয়া শুরু করেছে। কিন্তু এখনও দেশের ৩০ লাখ টিআইএন ধারীদের মধ্যে কর দিচ্ছেন মাত্র ১৩-১৪ লাখ। জাতীয় আয়ের ১২ শতাংশ আসছে রাজস্ব খাত থেকে কিন্তু উন্নত দেশে এ হার ২০ ভাগের উপরে। তিনি বলেন, ২৭ বছর আগে যখন মন্ত্রী ছিলাম তখন কর আদয়ের প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ শতাংশ কিন্তু এখন তা ৩০ শতাংশের কাছাকাছি। এ হার বাড়াতে কর প্রশাসন আরও উন্নত ও বিস্তৃত করা প্রয়োজন। সরকার সে চেষ্টা করে যাচ্ছে।
কাজী আকরাম উদ্দিন আহ্মেদ বলেন, সর্বোচ্চ করদাতাদের এ ধরনের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়ায় ব্যবসায়ী সমাজের পক্ষ থেকে এনবিআরকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। প্রতিবছর বাজেটের আকার বড় হচ্ছে। বাড়ছে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণও। আর রাজস্ব আদায় হচ্ছে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। এক্ষেত্রে ভয়ভীতির উর্ধে থেকে যাতে ব্যবসায়-বাণিজ্য করা যায় সে ধরনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা রাজস্ব দিয়ে এসেছেন আগামীতেও দেবেন। এ জন্য ব্যবসায়বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
এনবিআর চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন বলেন, যারা ট্যাক্স দেন তাঁরা অত্যন্ত সম্মানীত ব্যক্তি। সর্বোচ্চ করদাতাদের ট্যাক্স কার্ড ও সম্মাননা প্রদানের মাধ্যমে এনবিআরও গর্বিত। তবে এটিকে ট্যাক্স কার্ড না বলে আগামীতে ট্যাক্স ট্রফি করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ট্যাক্স কার্ড প্রদানের মাধ্যমে করদাতাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানীত করা হচ্ছে। এ ছাড়া ট্যাক্স কার্ডধারী ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের কিছু সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা হয়েছে। এর ফলেও করদাতাদের মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতা হবে। আর এ ধরনের প্রতিযোগিতা কাক্সিক্ষত ও এনবিআর প্রত্যাশা করে। তিনি বলেন, ট্যাক্স জিডিপিতে অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের অর্জন কম। আর এ ক্ষেত্রে মূল সমস্যা কর দিচ্ছেন কম সংখ্যক মানুষ। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, বিশাল জনগোষ্ঠীর এই দেশে মাত্র ৬ দশমিক ১৩ মিলিয়ন করদাতা কর প্রদান করছেন। এ ছাড়া করদাতাদের সময়মতো ট্যাক্স কার্ড ও সম্মাননা তুলে দিতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এখন থেকে এ বিষয়টি হালনাগাদ করার ব্যাপারে এনবিআর কাজ শুরু করেছে। আগামীতে সর্বোচ্চ করদাতাদের সময়মতো সম্মানীত করা হবে।
সর্বোচ্চ করদাতা হিসেবে মোতাজ্জেরুল ইসলাম বলেন, ট্যাক্স কার্ড সম্মাননা পেয়ে গর্ব বোধ করছি। কর প্রদানের মাধ্যমে দেশসেবা করার চেষ্টা করছি। ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের কর প্রদানে এগিয়ে আসা উচিত। এ জাতিকে আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে সরকারকে রাজস্ব^ আদায় বাড়াতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.