সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আরেকবার ভাবুন- বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব

গত রোববার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কার্যালয়ে যখন বিদ্যুতের দাম বাড়ানো নিয়ে গণশুনানি চলছিল, তখন বাম দলগুলো এর প্রতিবাদে জ্বালানি মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করছিল।
পুলিশ লাঠিপেটা করে নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দিলেও তাঁরা আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দয়েছেন। কয়েক দিন আগে যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে বাম দলগুলোর হরতাল পালনে যেখানে পুলিশ সহযোগিতা করেছে, সেখানে সভা-সমাবেশ করার মতো নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচিতে কেন বাধা দিল?
বাম দলগুলো জানিয়ে দিয়েছে, জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে তারা আরও কঠোর কর্মসূচি নেবে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বলেছে, যেদিন জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে, তার পরদিনই হরতাল পালন করা হবে। গত দুদিনে বিইআরসিতে আয়োজিত গণশুনানিতে অংশগ্রহণকারী গ্রাহকেরাও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করেছেন। কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশনের জ্বালানি উপদেষ্টা বলেছেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে বিদ্যুতের বিল দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হবে। তাঁর এ বক্তব্য কঠিন হলেও এতে সাধারণ গ্রাহকদের মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে।
জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর যুক্তি হিসেবে সরকার ভর্তুকির দোহাই দিচ্ছে। এর প্রধান কারণ ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে সরকার বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে গ্রাহকদের কাছে কম দামে বিক্রি করছে। কিন্তু ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ছিল সাময়িক ব্যবস্থা। স্থায়ী কেন্দ্রগুলো যথাসময়ে চালু করা গেলে সরকারকে মোটা অঙ্কের ভর্তুকি গুনতে হতো না। তা ছাড়া বিদ্যুৎ খাতে সিস্টেম লসের নামে যে অপচয় ও চুরি হচ্ছে, তা বন্ধ করতে পারলেও ভর্তুকি অনেকাংশে কমে যেত।
বর্তমান সরকারের আমলে ছয়বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। জ্বালানি তেলের দামও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে, যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে এখন জ্বালানি তেলের দাম পড়তির দিকে। এ ছাড়া জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়লে জনজীবনে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে বাধ্য। পরিবহন খরচ ছাড়াও শিল্প কারখানায় উৎপাদিত প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়বে। এই অবস্থায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ানোর আগে সরকারের উচিত পুরো বিষয়টি আরেকবার ভেবে দেখা।

No comments

Powered by Blogger.