নতুন বছরে দুর্বার আন্দোলনে পতন হবে স্বৈরাচারের ॥ by তরিকুল

নতুন বছরে দুর্বার আন্দোলন হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ২০১২ সাল ছিল গুম ও খুনের বছর। আমরা আশা করি, নতুন বছর সুন্দর হবে। আন্দোলন আরও বেগবান করতে হবে। আর দুর্বার আন্দোলনের স্রোতে স্বৈরাচারের পতন হবে।
সোমবার বিকেলে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুক্তির দাবিতে শ্রমিক দল আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সংবিধান নিজেই এখন বিচারপ্রার্থী এবং মানবাধিকারের নিজেরই এখন অধিকার নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, যে সরকারের আমলে বিকাশের মতো সন্ত্রাসীরা ছাড়া পায়, আর ফখরুলের মতো ভালো লোকেরা জেলে যায়, সে সরকারের কাছে আর কী-ই বা আশা করা যায়!
তরিকুল বলেন, তিনি বলেন, এ সরকার জনগণের জন্য কিছু করতে না পারলেও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নামে মামলা-হামলা, দমন-পীড়ন অব্যাহত রেখেছে। সে কারণে বিএনপির প্রায় ২৫ হাজার নেতাকর্মী পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তারা ঘরে ফিরতে পারছে না। গত চার বছরে দেশের কোন উন্নয়ন হয়নি। তবে আওয়ামী লীগের নেতা, সরকারের মন্ত্রী ও আত্মীয়দের উন্নয়ন হয়েছে। যাদের একটি গাড়ি ছিল তাদের ছয়টি গাড়ি হয়েছে। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের লোকজন ভূমি দখল, নদী দখল ও টেন্ডারবাজি করেছে। এখন বাকি আছে শুধু বঙ্গোপসাগর চুষে খাওয়া। তাও একদিন সকালে উঠে দেখব, কক্সবাজারের সাগরে কোনো পানি থাকবে না। আর এক বছরে তা করেই তাদের সাঙ্গ হবে।
সরকারকে অন্ধ উল্লেখ করে তরিকুল বলেন, বিএনপির আমলে একবার বিদ্যুতের মুল্য ছয় পয়সা বাড়ানো হয়েছিল। আর এ সরকার চার বছরে ছয় বারের পর আর একবার বাড়ানোর চিন্তা করছে। জনগণের কষ্ট সরকার দেখে না, কারণ তারা অন্ধ।
শ্রমিক দলের সভাপতি ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ঢাকা মহানগরীর সদস্য সচিব আবদুস সালাম, শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক জাফরুল হাসান ও যুগ্ম সম্পাদক নুরুল ইসলাম নাসিম প্রমুখ।
২০১২ ছিল গণতন্ত্রের জন্য কালো অধ্যায়-ড. মোশাররফ ॥ ২০১২ সালকে হতাশার বছর উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন বলেছেন, এ বছরটি ছিল আমাদের দেশে গণতন্ত্রের জন্য কালো অধ্যায়। সরকার চার বছরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে পারেনি। তাই এ সরকারের কাছে ভাল কিছু আশা করা যায় না। তার পরও বলব নতুন বছর ২০১৩ সাল ভাল হবে। সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুলের মুক্তির দাবিতে ঢাকাস্থ সেনবাগ জাতীয়তাবাদী ফোরাম আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ড. মোশাররফ বলেন, ২০১৩ সাল নির্বাচনের বছর। এ এক বছরে সরকারের ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে পারবে না। তার পরও আমরা সরকারের কাছে ভালর প্রত্যাশা করি। তিনি বলেন, স্কাইপি সংলাপের মাধ্যমে সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম। কিন্তু তাঁর বিচার না করে সরকার বিচার করতে চায় মাহমুদুর রহমানের। এটা এক বিচিত্র ঘটনা। বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমকে আইনের আওয়ায় এনে বিচারের দাবি জানান তিনি।
সমাবেশে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের চীফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, যাঁরা হিন্দুস্তানের কথা বলেন তাঁরা বাংলাদেশের স্বার্থ এখনও ফিরিয়ে আনতে পারেননি। আমরা দেশের স্বার্থ প্রতিষ্ঠার জন্য গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত রয়েছি। তিনি এক বছর প্রতিকূল অবস্থায় শেষ হয়েছে। তাই এখনও সময় আছে নতুন বছরে সংসদে তত্ত্বাবধায়ক বিল এনে দেশকে সংঘাত থেকে মুক্ত করুন।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি হারুন-উর-রশিদের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবদুস সালাম, বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়ে আলোচনায় রাজি বিএনপি-মওদুদ ॥ বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার দাবি জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, তিন মাসের মধ্যে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে নির্বাচন দিতে হবে। আর সেই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা কে হবেন তা নিয়ে বিএনপি আগ্রহ সহকারে আলোচনায় বসতে রাজি আছে। কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে স্বপদে বহাল রেখে কোন নির্বাচনে বিএনপি যাবে না। একদলীয় বা বহুদলীয় কোন ধরনের সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না। এমনকি বর্তমান রাষ্ট্রপতির অধীনেও কোন নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। সোমবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ডেমোক্র্যাটিক কাউন্সিল আয়োজিত ‘চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
পদ্মা সেতুর কেলেঙ্কারিতে আসল দুর্নীতিবাজদের বাদ দিয়ে মামলা করা হয়েছে দাবি করে মওদুদ বলেন, সরকারই চায় না এই সেতু হোক। কারণ তারা ২৪ হাজার কোটি টাকার দশ পার্সেন্ট ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ঘুষ নিতে চেয়েছিল। ৩৮০ কোটি টাকা ঘুষ নেয়ার পর ধরা পড়ে গেছে। এখন তারা চায় পদ্মা সেতুর দরকার নেই। বিশ্বব্যাংক যত তাড়াতাড়ি চলে যাবে ততই তাদের জন্য মঙ্গল। কারণ যাদেরকে দুদক ধরেছে তারা ইতোমধ্যেই বলা শুরু করেছে তাদেরকে দিয়ে কারা দুর্নীতি করিয়েছে।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি এম এ হালিমের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য খালেদা ইয়াসমিন, সাংস্কৃতিক একাডেমীর সভাপতি মেজর অব. এমএম মেহবুব রহমান প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.