গণরায় মানার অঙ্গীকার

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনে গণরায় মেনে নেয়ার বিষয়ে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, আগামী নির্বাচনে জনগণের ভাল লাগলে আমাদের ভোট দেবে। তা না হলে তারা যে রায় দেবে- তা আমরা মাথা পেতে নেব।
কিন্তু মানুষের ভোট ও সাংবিধানিক অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলা যাবে না। প্রধানমন্ত্রী শনিবার রাজধানীর সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কাউন্সিলরদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি তাঁর নিজের ও আওয়ামী লীগের গভীর বিশ্বাসই প্রতিধ্বনিত হয়েছে। বস্তুত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ও পরবর্তীকালে স্বাধীন বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রাজনীতির বিকাশ হয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আজীবন এ দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করেছেন। তাই আওয়ামী লীগ ও গণতন্ত্রকে একে অপরের সম্পূরক বলে অভিহিত করা যেতে পারে। কিন্তু সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কখনই সরকারী দলের একার পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব নয়; কারও পক্ষেই এককভাবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে কার্যকর করা সম্ভব নয়। এ জন্য সর্বক্ষেত্রে বিরোধী দলের গঠনমূলক সহযোগিতা প্রয়োজন। তাদেরকেও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবার শুরু থেকেই সরকারকে সহযোগিতা করেনি। তারা দিনের পর দিন সংসদের কার্যকর অধিবেশনে অনুপস্থিত থেকেছে। এইভাবে বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা তাঁদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার জনগণের প্রতি দায়িত্ব পালন করা থেকে বিরত থেকেছেন। প্রধানমন্ত্রী এবার আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আগামী নির্বাচনে গণরায় মেনে নেয়ার পক্ষে যে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন- তা মূলত গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির অঙ্গ।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের ইচ্ছার চেয়ে বড় কিছু নেই। এই ব্যবস্থায় জনগণ ভোটের মাধ্যমে যে দলের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করবে, সেই দল সরকার গঠন করবে। এ ক্ষেত্রে পরাজিত দলকে অবশ্যই নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিতে হয়। পরাজয়ের জন্যে নির্বাচন কমিশনকে দোষারোপ করা যাবে না। নির্বাচনী ফলাফল বা গণরায় মেনে নেয়ার প্রতি প্রধানমন্ত্রী যে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন- তা এ দেশের প্রতিটি গণতন্ত্রকামী মানুষের জন্য আশার বার্তা বয়ে এনেছে। এখন বিএনপি চেয়ারপার্সন ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার উচিত আগামী নির্বাচনে গণরায় মেনে নেয়ার পক্ষে অঙ্গীকার ব্যক্ত করা। এভাবে দেশের দুটি প্রধান দলের কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রকে অনেক বেশি কার্যকর করা সম্ভব। বিগত বছরগুলোতে বিএনপি মূলত অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার দাবিতে দেশব্যাপী হরতাল, কর্মসূচী নিয়েছিল। এর ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করেছে। বিএনপি সম্প্রতি স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের ধ্বংসাত্মক কর্মসূচীর প্রতি নৈতিক সমর্থন ব্যক্ত করেছে। জামায়াতের লক্ষ্য দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া বানচাল করা। এক্ষেত্রে অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছে বিএনপি-জামায়াত চক্র কি দেশকে অনিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির দিকে নিয়ে যেতে চায়? তারা সম্ভবত এটা উপলব্ধি করেছে, নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির মধ্য দিয়ে তারা কখনই জনসমর্থন পাবে না ও ক্ষমতায় যেতে পারবে না।
সুতরাং দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনার প্রতি অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন- তা অবশ্যই প্রশংসীয়। বিএনপি নেতৃবৃন্দের মধ্যে অনুরূপ চেতনা সৃষ্টি হবে এটাই প্রত্যাশিত।

No comments

Powered by Blogger.