নিরাপদ হোক জীবন ও রাজনীতি- স্বাগত ২০১৩

শুরু হলো ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দ। জীর্ণ-পুরোনোকে পেছনে ফেলে নতুন বছরের এই নবীন প্রভাতে আমাদের অগণিত পাঠক, লেখক, এজেন্ট, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীর প্রতি রইল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
নতুন বছরের শুরুতে নতুন আশায় উদ্দীপিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পেছনের দিকে ফিরে তাকানোর উপলক্ষও আসে। ৬ জানুয়ারি মহাজোট সরকারের চতুর্থ বছর পূর্ণ হতে চলেছে। ২০১৩ সাল আমাদের নির্বাচনী বছর। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অভূতপূর্ব বিজয়ের পেছনে তাদের যেসব নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল, চার বছর পর আজ পর্যালোচনার সময়। ২০১২ সালে বাংলাদেশের জন্য কয়েকটি গৌরবজনক ঘটনা ঘটেছে। নিশাত মজুমদার প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে এভারেস্টশৃঙ্গ জয় করেছেন। বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলমের নেতৃত্বে উন্মোচিত হয়েছে ছত্রাকের জীবনরহস্য। শিক্ষাক্ষেত্রে ধারাবাহিক অগ্রগতি অব্যাহত আছে; প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির হার আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে। অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি, রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বেড়েছে, বেড়েছে খাদ্য উৎপাদন। সুশাসনের অভাব ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও বাংলাদেশ অর্থনীতিতে এগিয়ে চলেছে বলে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রশংসা করা হয়েছে।
২০১২ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচার-প্রক্রিয়ার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক গোলাম আযম ও মতিউর রহমান নিজামীসহ নয় ব্যক্তির মামলায় অধিকাংশের সাক্ষ্য গ্রহণ ও যুক্তিতর্ক পর্ব শেষ হয়েছে। অচিরেই রায়ের প্রত্যাশা করা হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে জাতি দৃঢ়ভাবে ঐক্যবদ্ধ; বিচার সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও জাতীয় গ্লানি দূরীকরণের কোনো বিকল্প নেই।
২০১২ সালের সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক চিত্র ছিল রাজনৈতিক ক্ষেত্রে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সংসদ বর্জন শুধু অব্যাহতই রাখেনি, রাজপথের তৎপরতাও বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে বিরোধ-সংঘাতের সেই পুরোনো আবর্তেই রাজনীতি ঘুরপাক খেয়ে চলেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের হামলা এ বছরের বিশেষভাবে লক্ষণীয় বিষয়। এ ছাড়া ডিসেম্বরে বিরোধীদলীয় জোটের অবরোধ চলাকালে পুরান ঢাকায় ছাত্রলীগের কিছু কর্মীর হাতে বিশ্বজিৎ দাস নামের এক তরুণের নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘাতের রাজনীতির চিত্র প্রকটভাবে তুলে ধরেছে।
দেশ পরিচালনায় সরকারের বিশেষ কোনো কৃতিত্বের পরিচয় পাওয়া যায়নি। পদ্মা সেতুর অর্থায়নের বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত রয়ে গেছে। বিদ্যুৎ-পরিস্থিতির কোনো উন্নতি ঘটেনি। ‘ক্রসফায়ারে’ মৃত্যু বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গুম। বিএনপির নেতা ইলিয়াস আলীর নিরুদ্দেশ হওয়া ব্যাপক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
এসব বাস্তবতা সঙ্গে নিয়েই নতুন বছরে আমাদের যাত্রা শুরু হলো। এই নির্বাচনী বছরে আমাদের প্রত্যাশা, সামনের দিনগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলো দেশ ও জাতির স্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দেবে, গণতান্ত্রিক পথ চলা আরও সুগম করতে আপস-সমঝোতার মাধ্যমে রাজনৈতিক সমস্যাগুলোর রাজনৈতিক সমাধানে সচেষ্ট হবে। ২০১৩ সাল হোক সুস্থ গণতান্ত্রিক রাজনীতির বছর। নির্বিঘ্ন হোক গণতন্ত্রের পথচলা।

No comments

Powered by Blogger.