বড় কমিশন পেতেই রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি ॥ মওদুদ- জিয়া হত্যার দাবিদার গিয়াসের বিচার দাবি তরিকুলের

 সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যাকারী দাবিদার সরকারদলীয় সংসদ সদস্য গিয়াসউদ্দিন আহমেদকে গ্রেফতার করে বিচার দাবি করেছে বিএনপি। শুক্রবার সকালে জিয়াউর রহমানের ৭৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শেরেবাংলানগর জিয়ার মাজার প্রাঙ্গণে জাসাস আয়োজিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম বলেন,
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে গিয়ে নিজেকে জিয়াউর রহমানের হত্যাকারী দাবি করেছেন সংসদ সদস্য গিয়াসউদ্দিন। তাই বর্তমান সরকার যদি গিয়াসউদ্দিনের বিচার না করে, তবে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে জনতার আদালতে তাঁর বিচার হবে।
তরিকুল বলেন, সচিবালয়ে তদবির অনুযায়ী কাজ না হওয়ায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দফতরের এক কর্মকর্তাকে গুলি করার হুমকি দেন সরকারদলীয় সংসদ সদস্য গিয়াসউদ্দিন। এ সময় গিয়াসউদ্দিন বলেন, ‘আপনি জানেন আমি মেজর জিয়াকে হত্যা করেছি, আমি ফাঁসির আসামি, কাউকে ভয় পাই না। আমি আসার সঙ্গে সঙ্গে আমার কাজ করে দিতে হবে।’ এর আগেও গিয়াসউদ্দিন ময়মনসিংহে নিজ এলাকার জনগণকে রিভলভার দিয়ে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন।
তরিকুল অভিযোগ করেন, জ্বালানি তেলের মূল্য প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর বন্যপ্রাণী মারার অস্ত্র পিপার স্প্রে ব্যবহার করছে সরকার। তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে সব জিনিসের দাম বেড়ে যাবে। তাই আমরা অবিলম্বে তেলের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহারের দাবি করছি। দেশে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির জন্য সরকারের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে দায়ী করে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারের জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। তাই তেলের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার করা না হলে সরকারের পতন আসন্ন।
জাসাস সভাপতি এমএ মালেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির সাংস্কৃতিক সম্পাদক গাজী মাজহারুল আনোয়ার ও জাসাস সাধারণ সম্পাদক মনির খান।
বড় কমিশন পেয়ে বড়লোক হতেই সরকার রাশিয়ার কাছ থেকে ঋণ নিয়ে সে দেশের সঙ্গে ৩ চুক্তি ও ৬ সমঝোতা স্বাক্ষর করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। শুক্রবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে গণতন্ত্র উন্নয়ন ফোরাম নামক একটি সংগঠন আয়োজিত এক আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন। এসব চুক্তির সঙ্গে দুর্নীতি জড়িত, চুক্তিগুলোর সুফল জনগণ কোনদিনই পাবে না এবং এমন আত্মঘাতী ঋণ কোন সরকার নেয় না মন্তব্য করে তিনি রাশিয়ার সঙ্গে করা এসব চুক্তি ও সমঝোতার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
মওদুদ বলেন, ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেবে রাশিয়া। কিন্তু তারা শর্ত বেঁধে দিয়েছে। অস্ত্র কিনতে আর পারমাণবিক ২ বিদ্যুত কেন্দ্রের সমীক্ষা ও পরীক্ষা চালাতে হবে। এ জন্য ২০২০ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে। ততদিনে সঙ্কট আরও বেশি হবে। তিনি বলেন, এসব চুক্তি করার আগে আমাদের সঙ্গে না হোক অন্তত সংসদে আলোচনার মাধ্যমে জনগণের কাছে বিস্তারিত তুলে ধরা উচিত ছিল। তাহলে আমাদের দেশের বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিতে পারতেন। আওয়ামী লীগ যখন একদলীয় শাসন কায়েম করেছিল তখন রাশিয়ার অবদান ছিল। এ কারণেই রাশিয়ার সঙ্গে এ সরকারের সম্পর্ক। আবার দুর্নীতিতেও দু’দেশের র‌্যাকিং ২৬ ও ২৮। তাদের সম্পর্ক নিয়ে আমরা কথা বলতে চাই না। আমাদের আপত্তি জনস্বার্থবিরোধী এসব চুক্তি নিয়ে।
ক্ষমতায় টিকে থাকতেই রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি- ফারুক ॥ সরকার কমিশন পেতে নতুন করে রাশিয়ার সঙ্গে ৮ হাজার কোটি টাকার অস্ত্র আমদানির চুক্তি করেছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় চীফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক। তিনি বলেন, দেশের জনগণের প্রতি সরকারের আস্থা নেই। এ কারণে রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র কিনেছে। অস্ত্রের বলে এ সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। শুক্রবার দুপুরে গুলশানে নিজ বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
হরতালে পুলিশের মারধরের ঘটনায় নিম্ন আদালতে তাঁর ১০ কোটি টাকার মানহানি মামলা খারিজ হওয়া প্রসঙ্গে ফারুক বলেন, সরকার সত্য মামলা খারিজ করে দিচ্ছে অথচ অসত্য মামলা আমলে নেয়া হচ্ছে। আমার করা মামলা সত্য কি না তা সাংবাদিকদের ছবি ও ভিডিও ফুটেজে রয়েছে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার মামলা আমলে নিয়েছেন আদালত। অথচ মামলাটি অসত্য। তিনি বলেন, ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকার বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ করছে। সে কারণেই পুলিশের বিরুদ্ধে করা আমার মানহানি মামলা খারিজ করেছে আদালত।
এক প্রশ্নের জবাবে ফারুক বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ অধিবেশনে যোগদানের ব্যাপারে এখনও দলীয়ভাবে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। তা ছাড়া সরকার চাচ্ছে আমরা যাতে সংসদে না যাই, যার প্রমাণ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অসত্য মামলাকে আমলে এনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না দেয়ার অপচেষ্টা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধান আসামি হবেÑ ব্যারিস্টার রফিক ॥ বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রধান আসামি করে বিশ্বজিৎ হত্যাকা-সহ সব হত্যাকা-ের বিচার করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতাদের মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ আয়োজিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ব্যারিস্টার রফিক বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু তাদের পরিকল্পনা সফল হবে না। দুর্বার গণআন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারের পতন ঘটানো হবে। আর আগামী নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বর্তমান সরকারের লুটপাটের টাকা উদ্ধার করে জনকল্যাণে ব্যয় করা হবে।
বিশ্বব্যাংকের কথায় উঠ-বস করছে সরকারÑ এমকে আনোয়ার ॥ পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে বলেই বিশ্বব্যাংকের কথায় সরকার উঠ-বস করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার। শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে জিয়াউর রহমানের ৭৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক ফাউন্ডেশন নামক একটি সংগঠন আয়োজিত আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন।
এমকে আনোয়ার বলেন, আবুল হোসেনকে বাদ দিয়ে মামলা করে এখন বিশ্বব্যাংকের চাপে আবার তাকে মামলায় অভিযুক্ত করার চেষ্টা চলছে। এতেই প্রমাণিত হয় পদ্মা সেতু প্রকল্পের দুর্নীতিতে আবুল হোসেন জড়িত। এতদিন তাকে মামলায় জড়ানো হয়নি, কারণ এই দুর্নীতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ কেউ কেউ জড়িত। কান টানলে মাথা আসবেÑ এ ভয়েই তাদের মামলায় এজাহারে আনা হয়নি। এ ঘটনায় জড়িত আরও কয়েকজনকে বাঁচাতে সরকার উঠে-পড়ে লেগেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, যাদের সমাজে কোন সম্মান নেই, তাদের বাঁচালে পদ্মা সেতু হবে না।
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় ’৭২ থেকে ৭৫ সালে একটি সভ্যদেশ হওয়ার যা যা উপকরণ প্রয়োজন আওয়ামী লীগ সবই ধ্বংস করে দিয়েছিল অভিযোগ করে এমকে আনোয়ারর বলেন, সে কলঙ্ক থেকে আজও বের হতে পারিনি আমরা। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীকে গণতন্ত্রের কালো অধ্যায় দাবি করে তিনি বলেন, জনগণ একদিন এই সংশোধনীকে আঁস্তাকুড়ে ফেলে দেবে।

No comments

Powered by Blogger.