গুলির হুমকি-সংসদ সদস্যের এমন অসহিষ্ণুতা কাম্য নয়

সংসদ সদস্যরা সম্মানীয় ব্যক্তি। তাঁদের কাছ থেকে সম্মানজনক আচরণই প্রত্যাশা করে মানুষ। কিন্তু কোনো কোনো সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত আচরণে মানুষের সেই প্রত্যাশা হোঁচট খায়।
এমনই অনাকাঙ্ক্ষিত এক ঘটনা ঘটিয়েছেন ময়মনসিংহ-১০ থেকে নির্বাচিত সরকারদলীয় সংসদ সদস্য গিয়াসউদ্দিন আহমেদ। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে গিয়ে দুজন সরকারি কর্মকর্তাকে গুলি করার হুমকি দিয়েছেন তিনি। অতি তুচ্ছ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে একজন জনপ্রতিনিধি এমন আচরণ করতে পারেন, তা স্বাভাবিক বলে মেনে নেওয়া যায় না। সরকারি দলের একাধিক সংসদ সদস্য সম্পর্কে এর আগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এ ধরনের আচরণের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। গিয়াসউদ্দিন আহমেদ আগেও এমন সংবাদ শিরোনামের জন্ম দিয়েছেন। ওই সময় তিনি জনসমক্ষে পিস্তল উঁচিয়ে জনতাকে হুমকি দিয়েছিলেন।
জনপ্রতিনিধি জনগণকে প্রতিপক্ষ করার মানসিকতা পোষণ করতে পারেন তখনই, যে সময় তাঁর জনভিত্তি নড়বড়ে হয়ে যায়। আমরা এই সংসদ সদস্যের জনভিত্তি নড়বড়ে কি না সেই মন্তব্য না করেও বলতে পারি, এটা গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য মোটেও সুখকর নয়। একজন সংসদ সদস্য সরকারি কর্মকর্তা কিংবা জনগণকে কখনো শত্রু ভাবতে পারেন না। তাঁর আচরণ যদি শত্রুভাবাপন্ন হয়, তাহলে জনগণ বঞ্চিত হয়। ব্যক্তিগত অসহনশীলতা দল ও দেশপ্রেমকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তিনি হয়তো ব্যক্তিগতভাবে অসহিষ্ণু হতে পারেন; কিন্তু যে মুহূর্তে তিনি সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তা কিংবা দলীয় কর্মী-সদস্যদের সামনে যাবেন, তখন তাঁকে প্রতিনিধিসুলভ আচরণ করতে হবে। একজন সংসদ সদস্য হিসেবে নিশ্চয়ই তিনি এসব বিষয়ে অবগত আছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, তিনি তা মনে রাখেননি।
ক্ষমতার দম্ভই অসহিষ্ণু আচরণের জন্ম দেয়। এই দম্ভ যে শুধু গিয়াসউদ্দিন আহমেদই দেখিয়েছেন, তা নয়। বৃহত্তর চট্টগ্রামের একজন এবং বৃহত্তর বরিশালের একজন এমপিকেও ব্যক্তিগত আচরণের কারণে সমালোচিত হতে দেখা গেছে। প্রচারমাধ্যমে তাঁদের এই আচরণ সম্পর্কে লেখালেখিও হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ে গিয়াসউদ্দিন আহমেদের দেওয়া এই হুমকি প্রমাণ করে, তাঁদের আচরণের কোনো পরিবর্তন হয়নি। সংসদ সদস্যদের আচরণবিধি দ্বারা এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধ করা সম্ভব নয়। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করার জন্য এখানকার রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে না বলেও দলীয় নেতা-কর্মীদের কেউ কেউ অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে উদ্বুদ্ধ হয়ে থাকে। আজকে ছাত্রলীগের যে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ পরিস্থিতিকে বিষিয়ে তুলেছে, এর জন্য মূল দলের নেতা-কর্মীদের এমন ঘটনাকে দায়ী করা মোটেও অসংগত হবে না। ছাত্রলীগের কারণে আজ যে দুর্নাম হয়েছে, তা থেকেও শাসকদলের শিক্ষা নেওয়া উচিত। একইভাবে জনপ্রতিনিধিরা যাতে কেউ অসংযত না হন, সহিষ্ণু থাকেন সেদিকটি তাঁদেরই দেখতে হবে। ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়, জনগণকে পিস্তল দেখিয়ে পক্ষে আনা যায় না। এটা গণতন্ত্রের ভাষাও নয়। বৃহত্তর স্বার্থে শাসকদলের এমপিরা এমন আচরণ থেকে বিরত থাকবেন বলেই আমরা আশা করি।

No comments

Powered by Blogger.