জনকণ্ঠকে নিয়ে জয়নাল হাজারীর বইয়ে মিথ্যাচার

 নিজের লেখা আত্মজীবনীমূলক বইতে দৈনিক জনকণ্ঠকে নিয়ে জঘন্য মিথ্যাচার করেছেন একদা সন্ত্রাসের জনপদ ফেনীর গডফাদার ও বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল হাজারী।
সম্প্রতি প্রকাশিত 'জয়নাল হাজারী বলছি' বইয়ের ১৯৫ পৃষ্ঠায় ফেনীর পতিত এই গডফাদার ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী সময়ে তার কাছ থেকে দৈনিক জনকণ্ঠের অর্থ গ্রহণের মিথ্যা দাবির মাধ্যমে দেশবাসীকে বিভ্রানত্ম করার অপচেষ্টা করেছেন।
জয়নাল হাজারী লিখেছেন, "জনকণ্ঠ যখন অর্থের অভাবে বিলুপ্ত হওয়ার পথে, তখন তারা আমার সহযোগিতা চাইলেন, কাগজ কেনার টাকা নেই, কাগজ কিনে দিলাম। মুক্তিযুদ্বের মুখপত্রটি মুখ থুবড়ে পড়বে মানতে পারলাম না।" দৈনিক জনকণ্ঠকে আর্থিক সহায়তা দেয়া সংক্রানত্ম জয়নাল হাজারীর এই মিথ্যাচার কল্পকাহিনীকেও হার মানিয়েছে। প্রকৃত সত্য হলো, ওয়ান ইলেভেনের পর সেনা সমর্থিত অগণতান্ত্রিক সরকারের শাসনামলে একের পর এক মিথ্যা মামলার মাধ্যমে জনকণ্ঠ সম্পাদককে অন্যায়ভাবে কারারম্নদ্ধ করা এবং প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের নামে গ্রেফতার ও হুলিয়া জারি এবং প্রতিষ্ঠান সিলগালাসহ নানা নির্যাতনের ফলে জনকণ্ঠ আর্থিক তির সম্মুখীন হয়েছিল ঠিকই, তবে চরম দুর্দিনেও জনকণ্ঠ কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নেয়নি। তবে ওয়ান ইলেভেনের পর জনকণ্ঠের একজন ফটোসাংবাদিকের সঙ্গে পলাতক জয়নাল হাজারীর গোপনে যোগাযোগ ছিল বলে জানা যায়। একই এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় মীর আহাম্মদ মীরম্ন নামে ঐ ফটোসাংবাদিকের সঙ্গে জয়নাল হাজারীর দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠতা ও ব্যক্তিগত আর্থিক লেনদেনের সম্পর্ক ছিল। মীর আহাম্মদ মীরম্ন জয়নাল হাজারীর কাছে ব্যক্তিগতভাবে কয়েক লাখ টাকা পান বলে সে সময় দাবি করেছেন। ওয়ান ইলেভেনের পরবর্তী সময় তিনি পাওনা টাকা বাবদ জয়নাল হাজারীর কাছ থেকে তিন লাখ টাকা গ্রহণ করেছেন বলে কতর্ৃপকে জানিয়েছেন। এরপরও তিনি আরও কয়েক লাখ টাকা পান বলে সে সময় জানান। পরবর্তী সময়ে নানা অভিযোগে মীর আহাম্মদ মীরম্নকে জনকণ্ঠ থেকে চাকরিচু্যত করা হয়। এক বছরেরও বেশি সময় আগে থেকে তিনি জনকণ্ঠে কর্মরত নেই। জনকণ্ঠকে বাঁচানোর জন্য হাজারী টাকা দিয়েছেন এমন দাবি করলেও মাত্র তিন লাখ টাকায় জনকণ্ঠের মতো প্রতিষ্ঠানের অর্ধবেলার খরচ মিটবে না। জনকণ্ঠ আজ চ্যালেঞ্জ দিচ্ছে, জনকণ্ঠকে টাকা দিয়েছেন জয়নাল হাজারী এমন প্রমাণ দিতে পারলে জনকণ্ঠের প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়া হবে।
দীর্ঘদিন পলাতক থেকে দেশে ফিরে রাজনীতির মাঠে সুবিধা করতে না পেরে জয়নাল হাজারী নিজের লেখা বইতে নানা মিথ্যাচারের মাধ্যমে লাইমলাইটে আসার চেষ্টা করছেন। তাঁর হীন ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের নামে মিথ্যাচারের শিকার হয়েছে জনকণ্ঠ। এর মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, দেশানত্মরী থেকেও জয়নাল হাজারী তাঁর অতীতের ভাবমূর্তি বদলাতে পারেননি। মতার দাপটকে কাজে লাগিয়ে একসময় গোটা এলাকাকে সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত করেছিলেন জয়নাল হাজারী। সে সময় জনকণ্ঠ ধারাবাহিকভাবে তার সন্ত্রাস ও অপকর্মের সংবাদ পরিবেশন কওে দেশবাসীর সামনে তাঁর মুখোশ উন্মোচন করেছিল। জয়নাল হাজারীর তথাকথিত স্টিয়ারিং কমিটি ও কাস কমিটির ক্যাডারদের ত্রাসের কাহিনী তুলে ধরেছিল জাতির সামনে। মতাসীন হাজারী সে সময় তাঁর ক্যাডার বাহিনীকে জনকণ্ঠের কণ্ঠরোধ করার কাজে ব্যবহার করেছিলেন। ফেনীতে দৈনিক জনকণ্ঠ পোড়ানো, হকারকে মারধরসহ পত্রিকাটি নিষিদ্ধ করেছিলেন। দৈনিক জনকণ্ঠের আপোসহীন মনোভাব ও অবিচল অবস্থানের কারণেই জয়নাল হাজারীর একদা ত্রাসের রাজত্ব ধসে পড়ে। মতাসীন হাজারীকে রাতের অাঁধারে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়। সন্ত্রাসের অভিযোগে বহিষ্কৃত হন দল থেকে। মহাজোট সরকার মতা গ্রহণের পর দেশে ফিরলেও আওয়ামী লীগে আর সুবিধা করতে পারছেন না পতিত এই গডফাদার। ফলে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হতে ব্যর্থ জয়নাল হাজারী এখন নিজের লেখা বইতে মিথ্যাচারের মাধ্যমে হারানো দাপট পুনরম্নদ্ধারের ব্যর্থ চেষ্টা করছেন। অতীতের জমানো ােভের বহির্প্রকাশ ঘটাতেই জয়নাল হাজারী দৈনিক জনকণ্ঠের নামে মিথ্যাচার করতেও পিছপা হননি।
দৈনিক জনকণ্ঠ আজ দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চায়, ১৯৯৩ সালের জন্মলগ্ন থেকে কোন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, সরকার কিংবা কোন ব্যক্তির কাছ থেকে আজ পর্যনত্ম কোন অর্থ বা আর্থিক সুবিধা নেয়নি। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পত্রিকাটি মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তচিনত্মা আর প্রগতিশীল চেতনাকে ধারণ করে বেঁচে আছে। কোন অন্যায় ও নির্যাতনের কাছে জনকণ্ঠ মাথানত করেনি। মতাসীনদের মতার দাপট ও রক্তচুকে উপো করে জনকণ্ঠ তার আদর্শে অবিচল আছে আজও। অতীতে গণতন্ত্রের লেবাসধারী অগণতান্ত্রিক সরকারগুলোর আমলে রাষ্ট্রযন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে জনকণ্ঠের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করা হয়েছে বহুবার। কিন্তু সব কিছুকে পেছনে ফেলে জনকণ্ঠ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রেখেছে বার বার।

No comments

Powered by Blogger.