শিক্ষা বিস্তারের পাশাপাশি মানের দিকেও নজর দিন- গরিবের সরকারি বিদ্যালয়!

বাংলাদেশে সাক্ষরতার সাফল্যের প্রধান দাবিদার নিশ্চয়ই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো। কিন্তু সফলতার পুরস্কারের বদলে তার ভাগ্যে জুটেছে অবহেলা আর উপেক্ষা। অবহেলাটা সরকারের আর উপেক্ষা করছেন সচ্ছল পরিবারের পিতা-মাতারা।
গতকাল বৃহস্পতিবারের সংবাদ, খোদ রাজধানীর ১৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি বেদখল। বিদ্যালয়ের জমিতে ভবন, দোকান ও বস্তি পর্যন্ত গড়ে উঠেছে। ছাগলের হাট ও পশু জবাইখানার কারণেও বন্ধ হয়ে গেছে একটি স্কুল। কোথাও স্কুলকে ব্যবহার করা হচ্ছে কমিউনিটি সেন্টার হিসেবে। এমনকি সরকারি স্কুলের জমি-অবকাঠামো ব্যবহার করে চলছে বেসরকারি স্কুলের কাজকর্ম। দখলকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর জমির মূল্য যেখানে শতকোটি টাকার বেশি, সেখানে দখলের কারণটি বোধগম্য হলেও সরকারের উদাসীনতা বোধগম্য নয়।
এত কিছু সত্ত্বেও ঢাকার অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভালোভাবে চলছে। অবকাঠামো, শিক্ষকদের সংখ্যা ও মান কোথাও ভালো এবং কোথাও চলনসই। তাহলেও সচ্ছল পরিবারের সন্তানেরা এসব স্কুলে ভর্তি হয় না। বিনা বেতনে পড়ানো হয় বলে তাঁদের ধারণা, এসব স্কুলের মান খারাপ। শ্রেণীগত অহংকার এতই জেঁকে বসেছে যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে তাঁরা গরিবের বিদ্যালয় মনে করেন। এটা এক দিক থেকে ভালো। কারণ, গরিবের সন্তানেরা এর কারণে এসব বিদ্যালয়ে সুযোগ পাচ্ছে। নইলে মধ্যবিত্ত সন্তানেরা এসব বিদ্যালয়ের আসনগুলো অধিকার করে ফেলত। কিন্তু খারাপ দিক হচ্ছে, গরিব ও সচ্ছল পরিবারের সন্তানদের মেলামেশা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার ধারণা মানে ধনী-গরিবনির্বিশেষে সর্বজনীন মানবতার ধারণা লাভ করা। সেটা তো হচ্ছেই না বরং গরিবের বিদ্যালয় বলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মান, পরিবেশ ও অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারের নজরও কমে যায়।
সারা দেশের পরিস্থিতি ঢাকার থেকে ভিন্ন নয়। এ অবস্থায়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মান উন্নয়ন জরুরি। এবং সে কাজটি করতে হবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কেই। আর মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোরও বোঝা উচিত, রংচঙা প্রতিষ্ঠান মানেই ভালো শিক্ষা নয় আর সরকারি বিদ্যালয় মানেই খারাপ নয়। শিক্ষা বিস্তারের পাশাপাশি মানের উন্নতির দিকেও নজর দিন।

No comments

Powered by Blogger.