আর্ট সেন্টারে বৌদ্ধ ঐতিহ্য বিষয়ক আলোকচিত্র প্রদর্শনী শুরু- সংস্কৃতি সংবাদ

অপরূপ নির্মাণশৈলীর কারণেই গৌতম বুদ্ধের ভাস্কর্য কিংবা বৌদ্ধ উপাসনালগুলো পেয়েছে শিল্পের মর্যাদা। আর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে এগুলো একইসঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীন ঐতিহ্য ও শিল্প।
আর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের এই ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করেছেন প্রখ্যাত ভারতীয় আলোকচিত্রী বিনয় কে ভেল। নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের বিভিন্ন বৌদ্ধ তীর্থস্থান ঘুরে ক্যামেরাবন্দী করেছেন নানা নিদর্শনের ছবি। সেসব ছবিতে আছে নান্দনিক টেরাকোটা, বুদ্ধের বিশেষ ভঙ্গিমার প্রতিমা, ম্যুরাল, বৌদ্ধ বিহার, মন্দিরসহ নানা কিছু। একইসঙ্গে ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ফ্রেমবন্দী করেছেন এই আলোকচিত্রী। আর সেসব ছবি নিয়ে গুলশানের আর্ট লাউঞ্জে শুরু হলো প্রদর্শনী। শিরোনাম বুদ্ধিস্ট হেরিটেজ ইন সাউথ এশিয়া। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া প্রদর্শনীর সহযোগিতায় রয়েছে ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।
সন্ধ্যায় প্রধান অতিথি হিসেবে এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আলোকচিত্রী বিনয় কে ভেল ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী। প্রদর্শনীর বিভিন্ন আলোকচিত্রে উঠে এসেছে দক্ষিণ এশিয়ার বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নানা ঐতিহাসিক স্থাপনা। আছে বাংলাদেশের নওগাঁর মৃৎ কারুকার্যখচিত গন্ধর্ভ টেরাকোটা, ভারতের মহারাষ্ট্রের অজান্তার পদ্মপানি ম্যুরাল এবং উত্তর প্রদেশের প্রাচীন বুদ্ধমূর্তি, নেপালের অশোক স্তম্ভ, বাংলাদেশের ময়নামতি বৌদ্ধ বিহার, শ্রীলঙ্কার মিরিসত্য স্থাপনাসহ নানা কিছু। প্রদর্শনীতে শোভা পেয়েছে ৪৫টি আলোকচিত্র। আর প্রতিটি আলোকচিত্রেই আছে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের মেলবন্ধন। আগামী ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে প্রদর্শনী। প্রতিদিন দুুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
উদীচীর প্রতিবাদ সপ্তাহের সমাপ্তি ॥ চিহ্নিত মানবতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকারদের বিচার সম্পন্ন এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। যুদ্ধাপরাধীদের দ্রুত বিচার ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে উদীচী ঘোষিত দেশব্যাপী প্রতিবাদ সপ্তাহের সমাপনী দিনের অনুষ্ঠানে এ অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন দেশের বিশিষ্টজনরা।
শুক্রবার বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অনুষ্ঠিত হয় প্রতিবাদ সপ্তাহের সমাপনী দিনের আয়োজন। আয়োজনের শুরুতেই ছিল প্রতিবাদী সঙ্গীত পরিবেশনা। সমবেত কণ্ঠে উদীচীর শিল্পীরা গেয়ে শোনায়Ñ পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, গ্রাম থেকে জেগে ওঠো, তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেবো রে, এ লড়াই বাঁচার লড়াই, ভয় কি মরণে/রাখিতে সন্তানেসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্দীপ্ত কিছু গান।
গান পরিবেশন শেষে শুরু হয় বিক্ষোভ সমাবেশ। এতে বক্তব্য রাখেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, উদীচী সভাপতি কামাল লোহানী, সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিম, অধ্যাপক বদিউর রহমান, সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরদার সহ-সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে, জামসেদ আনোয়ার তপন, বেলায়েত হোসেন, সম্পাদকম-লীর সদস্য ইকবালুল হক খান, সঙ্গীতা ইমামসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, কিছুদিন ধরেই স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধীতাকারী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ বিলম্বিত ও বানচাল করতে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র ও পাঁয়তারা চলছে। দেশ-বিদেশে নানাভাবে চলছে এই বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করা ও যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর অপচেষ্টা। এ ছাড়াও বাহাত্তরের সংবিধানে বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলেও পরবর্তী সময়ে তা সংবিধানে পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করা এবং এ নিয়ে নানা ছল-চাতুরীর আশ্রয় নেয়ার ফলে দেশে সাম্প্রদায়িক শক্তি বার বারই মাথাচাড়া দেয়ার সুযোগ পাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন উদীচীর নেতৃবৃন্দ। তাই এসব দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত উদীচীর আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলেও ঘোষণা দেন তাঁরা।
সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি জাদুঘরের সামনে থেকে শুরু হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে আবার জাদুঘরের সামনে এসে শেষ হয়।
গত ১২ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে উদীচী নেতৃবৃন্দ প্রতিবাদ সপ্তাহ কর্মসূচী ঘোষণার পর থেকেই দেশ-বিদেশে উদীচীর তিন শতাধিক শাখার উদ্যোগে পালিত হয়েছে মানববন্ধন, প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা ধরনের কর্মসূচী
বই পড়া কার্যক্রমের পুরস্কার বিতরণী ॥ আলোকিত মানুষ তৈরির সমৃদ্ধ স্বপ্ন নিয়ে বছরজুড়ে ছিল বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বই পড়া কর্মসূচী। বই পড়া নিয়ে প্রতিযোগিতার এ আসরে অংশ নেয় দেশের বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী। এ কর্মসূচীর আয়োতায় ঢাকা মহানগরীর ৮১টি স্কুল থেকে ৬ হাজার ৬৭ ছাত্রছাত্রী মূল্যায়ন পরীক্ষায় কৃতিত্বের পরিচয় দেন। সেসব কৃতী ছাত্রছাত্রীকে পুরস্কৃত করার জন্য রাজধানীর রমনা বটমূলে শুক্রবার থেকে দুই দিনব্যাপী পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সকালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, লেখক ও কলামিস্ট অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, লেখক আনিসুল হক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য মাহবুব জামিল, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ জালালুল আজিম ও গ্রমীণফোনের হেড অব কর্পোরেট রেসপন্সিবিলিটি দেবাশীষ রায়। দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠানে পুরস্কার গ্রহণ করেন ঢাকা মহানগরীর ২৫টি স্কুলের ২০১১ শিক্ষার্থী। আজ অনুষ্ঠান শুরু হবে বেলা আড়াইটায়।
আট দিনব্যাপী জাতীয় পিঠা উৎসব শুরু ॥ নানা স্বাদের বাহারি পিঠা তৈরি আমাদের দেশজ সংস্কৃতির এক অন্যতম অনুষঙ্গ। পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসবে পিঠা প্রচলন বহু পুরনো। পিঠার স্বাদে আমোদিত হয়নিÑ এমন কোন বাঙালী খুঁজে মেলা ভার। আর যান্ত্রিক নগর শহুরে জীবনে পিঠার এ ঐহিত্যকে উপস্থাপনের লক্ষ্যে শুক্রবার থেকে শুরু হলো আট দিনের জাতীয় পিঠা উৎসব। আয়োজন করেছে জাতীয় পিঠা উৎসব উদ্যাপন পরিষদ।
শিল্পকলা একাডেমী প্রাঙ্গণে শুক্রবার বিকেলে উৎসবে উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এ ছাড়াও অতিথি ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ।
ষষ্ঠবারের মতো আয়োজিত এ উৎসবে ৪০টি স্টলে পিঠাশিল্পীগণ পিঠা তৈরি, প্রদর্শন এবং বিক্রয় করছেন। অংশগ্রহণকারী পিঠাশিল্পীদের মধ্যে থেকে পাঁচজনকে সেরা পিঠাশিল্পী হিসেবে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হবে। এ ছাড়াও প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
ডাই মিলিয়ন একাত্তরের প্রদর্শনী ॥ শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকা আর্ট সেন্টারে প্রদর্শিত হলো মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র ডাই মিলিয়ন ’৭১। বাংলাদেশ প্রামাণ্যচিত্র পর্ষদের মাসিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর অংশ হিসেবে মুশতাক আহমেদ পরিচালিত তথ্যচিত্রটি প্রদর্শিত হয়। একইসঙ্গে দেখানো হয় ভারতের অম্লান দত্ত পরিচালিত প্রামাণ্যচিত্র বম। প্রদর্শনীর পর অনুষ্ঠিত হয় মুক্ত আলোচনা। আলোচনায় অংশ নেন চলচ্চিত্রকার মুশতাক আহমেদ।
প্রসঙ্গত, ডাই মিলিয়ন ’৭১ সম্প্রতি কলকাতায় আন্তর্জাতিক বাংলা চলচ্চিত্র সমালোচক পুরস্কার ২০১২-তে শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্যচিত্রের পুরস্কার অর্জন করেছে।
ধ্রুবর চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে গুণীজন সম্মাননা ॥ শুক্রবার হয়ে গেল ধ্রুব শিশু-কিশোর শিল্পী সংগঠনের চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানমালা। বিকেলে নজরুল ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এতে নজরুল সঙ্গীত শিল্পী নীলিমা দাশ, কণ্ঠসৈনিক শাহীন সামাদ, কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন ও সাংস্কৃতিক সংগঠক মানজারুল ইসলাম চৌধুরী সুইটকে গুণীজন সম্মাননা প্রদান করা হয়। পরে সঙ্গীতানুষ্ঠানে শিশু-কিশোর শিল্পীরা দেশের গান এবং আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী লোকসঙ্গীত পরিবেশন করেন।

No comments

Powered by Blogger.