ক্ষমতার দাপট-জনগণের মন জয়ে মনোযোগ দিন

ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের মেয়াদের শেষ বছরে এসে প্রধান শরিক আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মী-সমর্থকদের দাপট যেন সব সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছে। শুক্রবারের সমকালেই রয়েছে এমন চারটি ঘটনার খবর, যা নির্বাচনমুখী দলটির ব্যাপারে সাধারণ নাগরিকদের বিরূপ না করে পারে না।
একটি কাগজ ফটোকপি ও ফ্যাক্স করতে দেরি হওয়ায় বৃহস্পতিবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কম্পিউটার অপারেটরকে সরকারদলীয় এক সংসদ সদস্য যে ভাষায় হুমকি দিয়েছেন_ তা যেমন অশোভন, তেমনই আতঙ্কজনক। আমাদের মনে আছে, গফরগাঁও থেকে নির্বাচিত এই সংসদ সদস্য গত বছর মে মাসে বিক্ষুব্ধ লোকজনকে লক্ষ করে গুলি ছুড়ে নিজেকে ও দলকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছিলেন। মনে রাখা জরুরি, কথায় কথায় গুলি করতে চাওয়া কেবল সিনেমার খল অভিনেতার মুখেই মানায়, জননেতার নয়। একই দিন গণপূর্ত বিভাগের একটি প্রকল্পের দরপত্র দাখিল করার সময় সরকারদলীয় আরেক সংসদ সদস্যের অনুসারীরা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দফায় দফায় হামলা, কাগজপত্র তছনছ করেছে। আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচ ঠিকাদার। অন্যদিকে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের কাছ থেকে অস্ত্র কেড়ে নিয়ে ছাত্রদল কর্মীদের ওপর গুলি চালিয়েছে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। ব্যাপক ভাংচুর চালায় শিক্ষকদের ডরমিটরিতে। ওদিকে ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিপক্ষ নয়, নিজ সংগঠনেরই এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের ওপর হামলা চালিয়েছে। দিনব্যাপী সংঘর্ষে আহত হয়েছে অন্তত ১০ জন। সাম্প্রতিক সময়ে ক্ষমতাসীনরা হামলা-সংঘর্ষ, টেন্ডারবাজি ও ক্ষমতা প্রদর্শনে কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, এসব তারই খণ্ডচিত্র। গত কিছুদিন ধরেই সংবাদমাধ্যমে এ ধরনের খবরের সংখ্যা বাড়ছে। এতে করে হামলা ও সন্ত্রাসের শিকাররাই কেবল নয়, আপামর জনসাধারণের মধ্যে নিঃসন্দেহে ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে। বিষয়টি সরকারের নীতিনির্ধারকরাও অনুধাবন করতে পারেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। কিন্তু কী কারণে দুষ্টের দমন করা হচ্ছে না, আমাদের বোধগম্য নয়। সরকারের নীতিনির্ধারকদের উচিত হচ্ছে অবিলম্বে ভাবমূর্তিবিনাশী নেতাকর্মীদের সামলানো। শিক্ষা, কৃষি, ডিজিটালাইজেশন, প্রতিরক্ষা, অর্থনীতি ও সামাজিক সুরক্ষা প্রভৃতি ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের সাফল্য কম নয়। মেয়াদের শেষ বছর এসে নেতাকর্মীদের উচিত বরং এসব সাফল্য সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে জানানোর কাজে মনোযোগী হওয়া। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও যাতে ২০০৮ সালের মতো বিপুল সমর্থন সরকারের পক্ষে যায়, সে জন্য কাজ করা। বাস্তবে উল্টোটাই দেখা যাচ্ছে। শেষ সময়ে এসে যেন সাধারণ মানুষের মন বিষিয়ে তোলার প্রতিযোগিতায় নামা হয়েছে। আমরা মনে করি, সময় এখনও ফুরিয়ে যায়নি। বর্তমান সরকারের চার বছরপূর্তি উপলক্ষে সমকাল পরিচালিত জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, এখনও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা বেশি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি না হলেও তিনি যেভাবে জনস্বার্থ, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন জনমত জরিপে তার প্রতিফলন ঘটেছে। এখন প্রধানমন্ত্রীই পারেন বেপরোয়া সংসদ সদস্য, অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের লাগাম টেনে ধরতে। অপরাধী যে-ই হোক না কেন, তাকে শাস্তি পেতে হবে_ এই প্রত্যয় প্রধানমন্ত্রী অনেকবারই ব্যক্ত করেছেন। ক্ষমতার দাপট প্রদর্শন, টেন্ডারবাজি ও সন্ত্রাসের ক্ষেত্রে এর বাস্তব প্রয়োগ দেখতে চাই আমরা। তাতে করে দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা যেমন প্রতিষ্ঠিত হবে, ভারী হবে ক্ষমতাসীনদের জনসমর্থনের পাল্লাও।

No comments

Powered by Blogger.