শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় মুখোমুখি ছাত্রলীগ-শিবির- দেশের শিৰা প্রতিষ্ঠানকে অশান্ত করতে শিবিরের কিলিং মিশন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিবির ক্যাডাররা ছাত্রলীগের এক কর্মীকে হত্যা করার পর দেশের বিভিন্ন শিৰা প্রতিষ্ঠান আবারও অশানত্ম হয়ে ওঠার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিৰা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে ছাত্রলীগ ও মৌলবাদী সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত হল থেকে এক ছাত্রলীগ কর্মীকে বের করে দিয়েছে শিবির। এ নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তেজনায় নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। রাজশাহীর পর মৌলবাদীরা চবি অশানত্ম করতে চাইছে।
এদিকে দেশের সকল শিৰা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র শিবিরকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রলীগ। আজ বুধবার দেশের সব শিৰা প্রতিষ্ঠানে বিৰোভ কর্মসূচী পালন করবে ছাত্রলীগ। যে কোন সময় বিবদমান এ সংগঠন দুটির নেতা কর্মীদের মাঝে রক্তৰয়ী সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে ওঠতে পারে যে কোন ক্যাম্পাস। তা আবারও হতে পারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও। রাজশাহী শহরেও বিরাজ করছে উত্তেজনা।
সোমবার রাতে ছাত্রশিবিরের হামলায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ কর্মী ফারম্নক হোসেন নিহত হয়। বর্তমান সরকার ৰমতায় আসার পর প্রতিপৰ রাজনৈতিক সংগঠনের হাতে ছাত্রলীগের কোন কর্মী নিহত হওয়ার এটাই প্রথম ঘটনা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফারম্নক হত্যার পর দেশের সব শিা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র শিবিরকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রলীগ। এ ঘটনার জের ধরে বিভিন্ন শিৰা প্রতিষ্ঠানে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
রাজশাহীর ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার দুপুরে আয়োজিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক সমাবেশে ছাত্রলীগ সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন বলেন, "ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে শিবিরকে প্রতিহত করার মাধ্যমে এ হত্যার জবাব দেয়া হবে।" শিবিরকে প্রতিরোধ করতে প্রগতিশীল সব ছাত্র সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।
মিছিলের পর সমাবেশে ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ বলেন, "দেশ নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পরিকল্পিতভাবে শিবির এ হত্যাকা- ঘটিয়েছে। শিবিরের মাধ্যমে তাদের অতীতের হত্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতিরই স্বরূপ আবারও জাতির সামনে তুলে ধরেছে। তারা শিৰাঙ্গনকে অশানত্ম করার মধ্য দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে চাইছে।"
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ সাকিব বাদশা দাবি করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবুবকরের মৃতু্যর পেছনেও শিবিরের ইন্ধন ছিল। তিনি বলেন, "এ এফ রহমান হলেও ছাত্রলীগের অনত্মর্কোন্দলের সুযোগ নিয়ে আবুবকরকে হত্যায় শিবিরের হাত ছিল।" সমাবেশে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি সোহেল রানা টিপুসহ বিশ্ববিদ্যালয় ও হল শাখার নেতৃবৃন্দ বক্তৃতা করেন।
ছাত্রলীগের দুই পরে সংঘর্ষের সময় ইট বা ভারি কোন কিছুর আঘাতে আবুবকর আহত হয়েছিল বলে পুলিশ বলে আসছে। তবে প্রত্যদর্শীরা বলছেন, পুলিশের টিয়ার শেলের আঘাতেই আহত হন বকর। পরে হাসপাতালে তার মৃতু্য হয়।
ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক নাসিম আল মোমিন রূপক জানান, রাজশাহীতে ফারম্নক হত্যার প্রতিবাদে বুধবার দেশের সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বিােভ মিছিল ও সমাবেশ করবেন তারা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির ছাত্রলীগ মুখোমুখি ॥ রাজশাহীতে হত্যাকা-ের জের ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে ছাত্রলীগ ও শিবির। মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে সংগঠন দুটি ক্যাম্পাসে পাল্টাপাল্টি বিৰোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। দুপুরের আগে স্টেশন চত্বর, সোহরাওয়ার্দী হল, শাহ আমানত হল ও শাহজালাল হলের গেটে ছাত্রলীগ নেতা কর্মীরা জড়ো হয়। অন্যদিকে ভেতরে অবস্থান নেয় ছাত্র শিবির। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ও কয়েকটি হলের বাইরে অবস্থান নেয়। তার বিপরীতে শিবির কর্মীরা অবস্থান নেয় ভেতরে। সকাল থেকেই সংঘর্ষের আশঙ্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিপুল সংখ্যক র্যাব, পুলিশ ও আর্মড পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সংশিস্নষ্ট সূত্র জানায়, ক্যাম্পাসে শিবির দীর্ঘদিন থেকেই নিজেদের আধিপত্য কায়েম করে রেখেছে। অন্যদিকে নিজেদের সমর্থনের সরকার ৰমতায় থাকলেও খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থানে নেই ছাত্রলীগ। এ নিয়ে ছাত্রলীগ নেতা কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ৰোভ রয়েছে। অন্যদিকে যে কোন মূল্যে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে মরিয়া শিবির। রাজশাহীর হত্যাকা-ের জের ধরে এ আধিপত্য বিসত্মার নিয়ে এখানে যেকোন সময় বড় ধরনের সংঘর্ষ হতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবুল মনসুর জামসেদ বলেছেন, তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাাসে কোন মৌলবাদী চক্রের স্থান দেবে না। অন্যদিকে একটি সংবাদ সংস্থাকে শিবির সভাপতি শামসুদ্দীন আহম্মেদ বলেন, তাঁরা সকল অন্যায়ের প্রতিবাদ করে যাবেন। সংশিস্নষ্ট সূত্রগুলো জানায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও যেকোন সময় রক্তৰয়ী সংঘর্ষ হতে পারে।
এদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদককে মারধর করেছে ছাত্রলীগ কর্মী। একই সঙ্গে দৈনিক জনকণ্ঠের বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতাকে প্রকাশ্য জবাই করার হুমকি দেয় ঐ কর্মী। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে শাহ আমানত হলের এক ছাত্রলীগ কর্মীকে সন্ধ্যায় হল থেকে বের করে দিয়েছে শিবির। মঙ্গলবার দুপুরে বিৰোভ মিছিল শেষে আইন বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র সাইফুদ্দীন খালেদ তার হলের ৪২৪ নম্বর কৰে উঠতে গেলে শিবির কর্মীরা তাকে বের করে দেয়। এবং হলে না আসার জন্য শাসায়। এদিকে শাহজালাল হলের সামনে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নজরম্নল ইসলামকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ না করার হুমকি দিয়েছে শিবির হল শাখার সভাপতি ফয়সাল। সংশিস্নষ্টরা জানান, শিবির পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করার মতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অশানত্ম করার চেষ্টায় মরিয়া হয়ে উঠেছে।
এছাড়া নগরীর বিভিন্ন শিৰা প্রতিষ্ঠানেও সংগঠন দুটির নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
নীলফামারীতে শিবির-ছাত্রলীগ ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ॥ এ ঘটনার প্রতিবাদে নীলফামারীতে জামায়াত শিবির প্রতিরোধ কর্মসূচী ঘোষণা করেছে ছাত্রলীগ। মঙ্গলবার দুপুরে তারা শহরে বিৰোভ মিছিল শেষে এ ঘোষণা দেয়। এর আগে নীলফামারী সরকারী কলেজে সকালে ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে ৫ শিবিরকর্মী আহত হয়। সংঘর্ষ এড়াতে শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ॥ রাজশাহীতে শিবিরের নির্মম হত্যাকা-ের প্রতিবাদে বিৰোভ মিছিল ও সমাবেশ করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। তারা শিবির প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে।
এছাড়া সিলেট, বরিশাল, বগুড়া, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের শিৰাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগ ও শিবির নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

No comments

Powered by Blogger.