যশোরে ডাকাত আতঙ্ক রাত জেগে পাহারা by মনিরুল ইসলাম

ডাকাত আতঙ্কে যশোরের চার ইউনিয়নের ৯৩ গ্রামের বাসিন্দারা রাতে ঘুমাতে পারছেন না। নিজেদের নিরাপত্তার জন্য তাঁরা কমিটি গঠন করে বাঁশের লাঠি আর বাঁশি নিয়ে তীব্র শীতে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন।
পুলিশ ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সদর উপজেলার লেবুতলা ও ইছালী এবং বাঘারপাড়া উপজেলার বন্দবিলা ও জহুরপুর ইউনিয়নে অন্তত ১৫ বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে মাত্র দুটি ঘটনায় মামলা হয়েছে। আটক করা হয়েছে ছয়জনকে।
ডাকাতির ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ডাকাতির শিকার পরিবারগুলোর অধিকাংশই নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত। এদের প্রায় সবাই অওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ফলে ডাকাতির ঘটনাগুলোর পেছনে সুদূরপ্রসারি অন্য কোনো বিষয় আছে বলে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। পুলিশও বিষয়টি সন্দেহের চোখে দেখছে।
যশোরের পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র প্রথম আলোকে জানান, ডাকাতির শিকার পরিবারগুলোর আর্থিক অবস্থা এমন যে, যে ধরনের ঝুঁকি নিয়ে ডাকাতেরা কাজটি করতে যায়, তাতে তাদের খুব একটা লাভ হয় না। তাহলে এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কি না সেটি খুঁজে বের করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
বাঘারপাড়া উপজেলার বন্দবিলা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ও বাজারে গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই অঞ্চলের মানুষ অধিকাংশই কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তাদের আর্থিক অবস্থাও ততটা সমৃদ্ধ নয়।
বন্দবিলা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন জানান, যাদের বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে, তাদের প্রায় সবাই হিন্দু অথবা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী কিংবা সমর্থক। যার জন্য প্রশাসনের সন্দেহ বিএনপির নেতা- কর্মীদের দিকে। ডাকাতির একটি মামলায় বিএনপির নিরপরাধ দুই কর্মীকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। সেকেন্দারপুর-চাপাতলা যৌথ রাত্রিকালীন পাহারা দেওয়ার কমিটি নামে একটি কমিটি গঠন করে প্রতি রাতে ২৫ জনের দল গ্রামে পাহারা দিচ্ছে।
কমিটির সহসভাপতি তরিকুল ইসলাম বলেন, সেকেন্দারপুর গ্রামে পূর্ব, পশ্চিম ও মধ্য নামে তিনটি পাড়া রয়েছে। ২৫ জনকে পাঁচটি দলে ভাগ করে গ্রামে প্রবেশের পাঁচটি স্থানে পাহারা দিচ্ছে। প্রত্যেকের হাতে থাকে বাঁশের লাঠি, আর দলের একজনের কাছে থাকে একটি বাঁশি। এভাবে মাস খানেক ধরে পাহারা দেওয়া হচ্ছে।
বন্দবিলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শওকত মণ্ডল বলেন, নিজেদের নিরাপত্তার জন্য ইউনিয়নের ২৭ গ্রামে কমবেশি পাহারা দেওয়া হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নেও পাহারা দেওয়া চলছে বলে তিনি জানান। মাস দেড়েক আগে ইছালী ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের ফিরোজ হোসেনের বাড়িতে ডাকাতি হয়। ফিরোজের ভাই মিলন হোসেন এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেন। তিনি জানান, ডাকাতদের অনেকের মুখ বাঁধা ছিল।
গত বছরের ১১ ডিসেম্বর মধ্যরাতে বাঘারপাড়ার বন্দবিলা ইউনিয়নের ধর্মপুর গ্রামের গৌরপদ বিশ্বাসের বাড়িতে মুখবাঁধা সশস্ত্র ডাকাত দল হানা দেয়। তবে গ্রামবাসী জড়ো হওয়ায় ডাকাতেরা কিছু নিতে পারেনি। এ ঘটনায় গৌরপদ থানায় মামলা করেন। পরদিন রাত একটার দিকে ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমানের বাড়িতে ডাকাতি হয়। মাত্র দুটি মামলা হওয়ার বিষয়ে পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র বলেন, যাদের বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে তারা মামলা দিতে অনাগ্রহী।

No comments

Powered by Blogger.