কবি সুকান্তের পূর্বপুরুষের সম্পত্তি উদ্ধার হয়নি

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ১৭ বছর আগে শনাক্ত হওয়া কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের পূর্বপূরুষের ভূসম্পদ এখনো উদ্ধার হয়নি। উপজেলার উনশিয়া মৌজায় পৃথক সাতটি দাগে এই সম্পদের পরিমাণ এক একর এক শতাংশ।
জানা গেছে, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় কবির পরিবার ও তাঁর আত্মীয়স্বজনেরা ভারতে চলে যান। অবিক্রীত অবস্থায় ফেলে রেখে যান বসতবাড়িসহ জমিজমা। ১৯৯২ সালে কবি সুকান্ত সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন সরদার কবির পূর্বপুরুষের ফেলে যাওয়া দুই একর চার শতাংশ জমি উদ্ধার করে খাস খতিয়ানভুক্ত করার জন্য প্রশাসন বরাবর আবেদন করেন। ১৯৯৬ সালে দেলোয়ার হোসেন সরদার পুনরায় একই আবেদন করেন। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন জেলা প্রশাসকের নির্দেশে কোটালীপাড়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু সালেহ মোস্তফা কামাল তদন্ত করেন। তিনি ওই বছর ১৭ সেপ্টেম্বর এক আদেশে উশনিয়া মৌজার ১২৫, ৫২৬, ৫২৭, ৫২৮, ৫২৯, ৫৩০ ও ৫৩১ দাগের মোট দুই একর চার শতক জমি কবির পূর্বপুরুষের বলে শনাক্ত করে খাস খতিয়ানভুক্ত করার নির্দেশ দেন। তদন্তকালে তিনি কবির পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের ৫১৪, ৫১৫, ৫২৩, ৫৩১, ৫৭৩, ৫১৯ ও ৫২৫ দাগে আরও এক একর এক শতাংশ বেদখলীয় ভূসম্পদের সন্ধান পান। তিনি এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। ওই বছরের ১৪ অক্টোবর উনশিয়া ভূমি অফিসের তৎকালীন তহশিলদার দখলদারদের ভূমির কাগজপত্রসহ হাজির হওয়ার নির্দেশ জারি করেন। কোটালীপাড়ায় অবস্থিত কবি সুকান্ত সেবা সংঘের কার্যালয় থেকে পাওয়া একটি নথি থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
তবে কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও উনশিয়া ভূমি কার্যালয়ে এ-সংক্রান্ত কোনো কপি পাওয়া যায়নি। উনশিয়া ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের তলবি রেজিস্টারে দেখা যায়, ওই আদেশে উল্লিখিত ৫২৩ দাগের সাত শতক জমি কবির ঠাকুরদা তারাকান্ত ভট্টাচার্যের নামে ছিল। ১৯৬৭-৬৮ সালে ওই জমি জনৈক আ. খালেকের নামে নামজারি করা হয়েছিল। তবে কিসের মূলে এটা করা হয় এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য ওই কার্যালয়ে সংরক্ষিত নেই।
এই জমি ভোগদখলকারীদের অন্যতম আমতলী ইউনিয়নের পরিষদের (ইউপি) সদস্য আউয়াল শেখ বলেন, ‘এর আগে আমাদের দখলে থাকা দুই একর চার শতক সম্পত্তি সরকার খাস খতিয়ানভুক্ত করেছে। এখন যে জমিতে আমরা আছি, সেখানে কবির পূর্বপুরুষের কোনো সম্পত্তি নেই। এগুলো অন্যদের।’
কোটালীপাড়ার ইউএনও মোহামঞ্চদ মিকাইল বলেন, তিনি তাঁর ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে এই আদেশের নথিপত্র খুঁজে পাননি। গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. খলিলুর রহমান বলেন, এই বিষয়টি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (রাজস্ব) তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেবেন। বর্তমান দখলদারের বৈধ মালিকানা না থাকলে উল্লিখিত সম্পদ উদ্ধার করে খাস খতিয়ানভুক্ত করা হবে। পরে এই সম্পত্তি কবির বাড়ির সঙ্গে যুক্ত করা হবে। একই সঙ্গে কেন ১৭ বছর আগের নির্দেশ বাস্তবায়ন হয়নি তাও খতিয়ে দেখা হবে।

No comments

Powered by Blogger.