শাকিরা- বিথুন

শৈশব থেকেই স্কুলের বন্ধু আর শিকদের জন্য গান গাইতে খুবই পছন্দ করতেন শাকিরা। কিন্তু তার কণ্ঠস্বর নাকি তেমন একটা শ্রুতিমধুর ছিল না সে সময়। স্কুলের এক শিকতো বলেই বসেন শাকিরার কণ্ঠ নাকি ছাগলের মতো!
নিজের শহরে শৈশব থেকেই বিস্ময়কর প্রতিভা হিসেবেই পরিচিত তিনি। শাকিরা জানান, মাত্র ১০ বছর বয়স থেকেই আমি সংগীতকে আমার জীবনের একটা অংশ বলে বিশ্বাস করেছি। তখন থেকে আমার গান লেখার শুরম্ন। আমার আগ্রহ ল্য করে আমার বাবা নিজেই আমার ম্যানেজারের ভূমিকায় নেমে পড়েন। আমার লেখা প্রতিটি গান কপিরাইটের আওতায় আনার ব্যাপারটি নিশ্চিত করেন তিনি। আমার শুরম্নর দিকের রেকর্ডিং এর জন্য পরিবারের সীমিত অর্থের উপরই নির্ভরশীল ছিলাম আমি।
আমার ঠিকঠাক বেড়ে ওঠার েেত্র আমার বাবা-মার ভূমিকাই প্রধান। আমার স্বপ্ন পূরণে তারা আমাকে প্রচ-ভাবে সহায়তা দিয়েছেন। আমার স্বপ্ন বাসত্মবায়নের জন্য আমি না যতটা খ্যাপা ছিলাম তার চেয়ে অনেক বেশি উন্মাদ ছিলেন তারা নিজেরাই। আমার দেখা স্বপ্নের প্রতি তাদের ছিল অগাধ বিশ্বাস। আমার পেছনে তারা ব্যয় করেছেন তাদের সর্বশক্তি। যখন আমি প্রথম তাদের জানালাম, আমি শিল্পী হতে চাই, তারা বললেন, তুমি যা চাও তাইই হবে। আমার পুরো পরিবার আমার পাশে এসে দাঁড়াল। এটা কিন্তু সচরাচর ঘটে না। ১০ বছরের একটি মেয়ে বললো- সে শিল্পী হতে চায়, আর অমনি তার পুরো পরিবার ঝাঁপিয়ে পড়ল মেয়েটির স্বপ্ন পূরণে। এভাবে ভাবতে গেলে বলতেই হয়, আমি সত্যিকার অর্থেই আশ্চর্যজনক এক ভাগ্যবান!
নব্বই দশকের শুরম্নর দিকে সারা দুনিয়ায় একজন অসাধারণ প্রতিভাবান সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে তার। মাতৃভাষা স্প্যানিশ হলেও তিনি সমান পারদর্শী ইংরেজী, পর্তুগীজ ও ইতালিয়ান ভাষায়। ক্যাসিকাল আরবী গানেও তার যথেষ্ট দতা রয়েছে।
শাকিরার প্রথম দুটি এ্যালবাম বাণিজ্যিকভাবে সফলতা পায়নি। পরবর্তীতে নিজস্ব ঢংয়ে সঙ্গীত প্রযোজনার দায়িত্ব নিজের কাঁধেই তুলে নেন তিনি। ১৯৯৫ সালে তার মুক্তি পাওয়া 'পিস ডেসক্যালজোস' এ্যালবামটির মধ্য দিয়ে লাতিন আমেরিকা ও স্পেনে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। ২০০১ সালে তার 'হোয়েনএভার, হয়্যারএভার' গানটির মিউজিক ভিডিওর বদৌলতে বিশ্বের প্রতিটি দেশের ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ে তার নাম। এই গানের সুবাদেই তার 'লন্ড্রি সার্ভিস' এ্যালবামটি সারা বিশ্বে তেরো মিলিয়ন কপিরও বেশি বিক্রির রেকর্ড স্থাপন করে। এর চার বছর পর ২০০৫ সালে তার দুটি এ্যালবাম 'ফিক্সেশন ওরাল ভলিউম ওয়ান' এবং 'ওরাল ফিক্সেশন ভলিউম টু' বাজারে আসে। যথারীতি এ দুটি এ্যালবাম তার সাফল্যের পালস্নাকে আরও ভারি করে।
১৯৯৫ সালে মাত্র আঠারো বছর বয়সে এই পপতারকা প্রতিষ্ঠা করেন 'পিস ডেসক্যালজোস ফাউন্ডেশন'। এটি একটি দাতব্য সংস্থা যারা ৩০ হাজার বঞ্চিত মানুষের শিা এবং চাকরির ব্যবস্থা করেছে। এসব মানুষের বেশিরভাগেরই স্কুলে যাওয়ার সামর্থ্য ছিল না। পুরো কলম্বিয়াতে দরিদ্র শিশুদের শিার সুযোগ সৃষ্টির ল্যে কাজ করে যাচ্ছে এই সংস্থাটি। শাকিরা বলেন, শিা আমার কাছে একটা জাদুর কাঠি। এর ছোঁয়ায় অন্ধের চোখে আলো এসে পড়ে। সে হয়ে ওঠে চুষ্মান। আমাদের এই বিশ্বে সবার জন্য শিা নিশ্চিত করতেই হবে। কিন্তু আমার দেশের মতো স্বল্প উন্নত দেশে অনেকের জন্যই শিা অর্জন করাটা সম্ভব হয়ে ওঠে না। আমাদের সবাইকেই বুঝতে হবে যে শিা কোনো সুযোগ নয়, এটি মানুষের জন্মগত অধিকার। সাত বছর বয়সে এরকম একটি স্বপ্ন দেখেছিলেন শাকিরা। কিন্তু তখন তার পারিবারিক জীবনে নেমে এসেছে এক আকস্মিক দুর্যোগ। ব্যবসায় লস দিয়ে প্রায় দেউলিয়া হয়ে যান তার পিতা। বন্ধ করে দিতে হয় তাদের স্বর্ণের দোকান দুটি। এ সম্বন্ধে শাকিরা বলেন, এ ঘটনার আগ পর্যনত্ম আমরা সচ্ছলই ছিলাম। বরাবরই ভাল একটা জীবনযাপন আমরা করেছি। দুটো গাড়ি ছিল আমাদের। কিন্তু ব্যবসার মার-প্যাঁচ হয়ত বাবা সেভাবে বুঝে উঠতে পারেননি। সাপের মতো বিশেষ নৃত্যভঙ্গিমার কারণে অসম্ভব জনপ্রিয় হয়েছেন শাকিরা। বিভিন্ন কনসার্ট ও মিউজিক ভিডিওতে তার নাচ দেখে দর্শকরা মুগ্ধ না হয়ে পারে না। প্রায়শই তিনি খালি পায়ে পারফর্ম করে থাকেন। শাকিরা বলেন, টিনএজে আমি নাচটা শিখেছিলাম মূলত আমার ভেতরের লজ্জাটাকে খতম করার জন্য।
গানের পাশাপাশি অভিনয়েও দেখা গেছে শাকিরাকে। ১৯৯৫ সালে কলম্বিয়ান টিভি সিরিয়াল 'এল ওয়েসিস' এ লুইসা মারিয়ার চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে পিপল ম্যাগাজিন জানায়, এবিসি চ্যানেলের জনপ্রিয় টিভি শো 'আগলি বেটি'র চতুর্থ মৌসুমের একটি পর্বে অভিনয় করবেন শাকিরা।
মিষ্টি স্বভাবের এই গায়িকার সাথে কিছু সময় কাটালে যে কেউই ল্য করবে যে প্রচুর হাসতে পারেন এই স্প্যানিশ বিউটি। এ কোন মেকী হাসি নয়। হাসেন একদম অনত্মরের গভীর থেকে। ১৫১ সে.মি. উচ্চতার কোন মানুষের কাছ থেকে এতটা হাসি হয়ত আশা করা যায় না। তার কোঁকড়ানো উজ্জ্বল চুল যেন জলপ্রপাতের মতো বয়ে যায়। তার গা কামড়ে থাকা জিন্স, স্যান্ডেল এবং ঢিলেঢালা সিল্ক টপ দেখে মনে হবে তিনি যেন বাড়ির পোশাকেই রয়েছেন। শাকিরা তার ত্বকের রঙ নিয়ে মোটেও চিনত্মিত নন। ধরতে গেলে ত্বকের কোন যত্নই করেন না তিনি।
সর্বশেষ এ্যালবাম 'সী উলফ'কে তিনি বর্ণনা করেছেন কাব রেকর্ড হিসেবে। এ প্রসঙ্গে শাকিরা বলেছেন, আমি অতীতে যা করেছি এটা তার থেকে আলাদা ধরনের। এখানে মধ্যপূর্বাঞ্চলীয় এবং ভারতীয় সঙ্গীতের কিছুটা প্রভাব আছে। আমি চাই সবাই যেন আমার প্রতিটা কাজে নতুন কিছু পায় এবং সময়টাকে অনুভব করতে পারে। এমন একটা সময় আসবে যখন সবাইকেই চলে যেতে হবে। কারণ মানব জীবন সত্যিই খুবই ুদ্র। পৃথিবীতে প্রতিটা মুহূর্তেই অনেক কিছু ঘটে যাচ্ছে। সবারই এমন কিছু করা উচিৎ যার জন্য মৃতু্যর পরও সবাই তাকে মনে রাখবে।
শাকিরা বলেন, এ মুহূর্তে আমি আমার ক্যারিয়ার নিয়েই সবচেয়ে বেশি চিনত্মিত। আমি কখনোই আমার সঙ্গীতকে একটি নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে আবদ্ধ রাখতে চাইনি। আমি চেয়েছি সারা পৃথিবীর মানুষ আমাকে জানুক- আমার সঙ্গীতকে জানুক। আমি সব সময়ই আমার সঙ্গীতকে লাখো মানুষের সাথে ভাগাভাগি করে নিতে চেয়েছি। আমি কখনোই একজন আন্ডারগ্রাউন্ড শিল্পী হতে চাইনি। আমি গর্ব করেই বলতে পারি, যা চেয়েছি তার সবই আমি পেয়েছি।

No comments

Powered by Blogger.