শেভরনের ২৩শ’ ॥ কার্টন বিস্ফোরক আটক ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি

গ্যাস অনুসন্ধানের কাজে ব্যবহারের জন্য আনীত বিস্ফোরক নৌবাহিনীকে না জানিয়ে গোপনে খালাস করতে গিয়ে ফেঁসে গেছে মার্কিন বেসরকারী মালিকানার গ্যাস কোম্পানি শেভরন।
গত শুক্রবার শেভরনের আমদানি করা এসব বিস্ফোরকের চালান বহির্নোঙ্গরে একটি মাদার ভেসেল থেকে খালাস হওয়ার পর লাইটার জাহাজযোগে কর্ণফুলী চ্যানেলে প্রবেশ করার পর কোস্টগার্ড এটিকে আটক করে। সাইসমিক পাওয়ার জেল নামে বিস্ফোরক ভর্তি লাইটার জাহাজটির নাম আগন্তুক-৩। এ ঘটনায় শনিবার চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। বিস্ফোরক আনার পেছনে অন্য কোন উদ্দেশ্য আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখছে সংশ্লিষ্ট মহল। এ ধরনের বিস্ফোরক তারা গ্যাস অনুসন্ধানের কাজে এর আগেও আমদানি করেছে বলে বন্দর ও কাস্টম সূত্রে স্বীকার করা হয়েছে। তবে এবারের চালানটিতে বিধিবহির্ভূত কোন বিস্ফোরক রয়েছে কিনা তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে বলে তা সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানানো হয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কমিশনার মাসুদ সাদিক শনিবার রাতে জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, আমদানির বিস্ফোরক চালানটির সবই ঠিক আছে। শুধু বিস্ফোরক লাইসেন্সটি মেয়াদোত্তীর্ণ। এতে নৌবাহিনীর পূর্বানুমতিও ছিল না, যা বেআইনী।
শেভরনের সংশ্লিষ্ট শিপিং এজেন্টের প্রতিনিধিরা বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে, এর আগে শেভরন আরও বেশ কয়েকটি চালান এনেছিল। গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য সাইসমিক সার্ভেতে তারা এ বিস্ফোরক ব্যবহার করে থাকে। আগের চালানগুলো নৌবাহিনীর অনুমতি নিয়ে খালাস করা হয়েছিল। কিন্তু সর্বশেষ চালানটি খালাসে নৌবাহিনী অনুমতি দেয়নি। শেভরনের বিস্ফোরক লাইসেন্স ডিসেম্বর ’১২ সালে উত্তীর্ণ হওয়ার পর নবায়নের জন্য আবেদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কিন্তু লাইসেন্স নবায়ন না হওয়ায় নৌবাহিনী তাদের নতুন করে আনা চালানটি খালাসের অনুমতি দেয়নি। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব সৈয়দ ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ জানান, ইন্দোনেশিয়ার পতাকাবাহী মাদার ভেসেল নোলাসতো জাহাজযোগে এ বিস্ফোরকের চালানটি আনা হয়। বহির্নোঙ্গর থেকে লাইটার জাহাজ আগন্তুক-৩ এক হাজার ৮শ’ ৪০ কার্টন সাইসমিক পাওয়ার জেল এবং পাঁচ শ’ কার্টন এক্সেসরিজ খালাস করে নিয়ে আসছিল। নৌবাহিনীর উপস্থিতিতে এসব বিস্ফোরক খালাস না করায় কোস্টগার্ডের সন্দেহ হয়। তাই জাহাজটিকে শুক্রবার আটক করে বন্দরের ৫ নম্বর ঘাটে নিয়ে আসা হয়েছে। লাইটার জাহাজটিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে রাখা হয়েছে কোস্টগার্ডের তত্ত্বাবধানে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বিস্ফোরক আমদানির ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটি শনিবার থেকেই কাজ শুরু করেছে। বন্দরের ডেপুটি কনজারভেটর ক্যাপ্টেন নাজমুল আলমের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের ঐ কমিটি আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট প্রদান করবে।
তদন্ত কমিটির সূত্রে জানা যায়, শেভরন এর আগেও কয়েক দফায় গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য এ ধরনের বিস্ফোরক আমদানি করেছিল। কিন্তু সর্বশেষ চালানটি খালাসের আগে নৌবাহিনীর যথাযথ অনুমতি ছিল না। আগের চালানগুলো নিয়মিত অনুমতি নিয়েই খালাস হয়েছিল। এ চালানের ক্ষেত্রে নৌবাহিনী বিস্ফোরক অধিদফতরের লাইসেন্স পরীক্ষা করে তা মেয়াদ উত্তীর্ণ পাওয়ায় খালাসের অনুমতি দেয়নি। নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে লাইসেন্স নবায়নের পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু শেভরনের শিপিং এজেন্টের লাইসেন্সের নবায়ন হওয়ার আগেই গোপনে মাদার ভেসেল থেকে লাইটার জাহাজে বিস্ফোরকগুলো খালাস করে নেয়। ডেমারেজ এড়াতে খালাসের পর পরই মাদার ভেসেলটি বহির্নোঙ্গর ত্যাগ করে। কিন্তু লাইটার জাহাজটি গন্তব্যে পৌঁছার আগে বাংলাবাজার এলাকায় কোস্টগার্ডের হাতে আটক হয়। বন্দর এবং কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে মাদার ভেসেলের এজেন্ট এবং সিএ্যান্ডএফ এজেন্টের লাইসেন্স স্থগিত করে। এ ব্যাপারে আরও তদন্ত চলছে।
এদিকে, গ্যাস কোম্পানির ব্যবহৃত বিস্ফোরক খালাস নিয়ে বিভিন্ন মহলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। মার্কিন ঐ প্রতিষ্ঠানটি নৌবাহিনীকে এড়িয়ে কেন এ ধরনের স্পর্শকাতর চালান খালাস করেছে তা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন দফতরের শীর্ষ পর্যায়কে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। তবে সাইসমিক পাওয়ার জেল ভূগর্ভে বিস্ফোরণের মাধ্যমে গ্যাস অনুসন্ধান কাজে তথ্য সংগ্রহ করা ছাড়া কোন নাশকতায় ব্যবহার করা যায় কিনাÑ তা নিয়ে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। নাকি মাদার ভেসেলের বিপুল অঙ্কের ডেমারেজ এড়াতে শিপিং এজেন্ট এ ঘটনা ঘটিয়েছে কিনা এবং এ চালানে নিয়মবহির্ভূত কোন বিস্ফোরক আছে কিনা তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে। উল্লেখ্য, মার্কিন প্রতিষ্ঠান শেভরন বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বেশ কয়েকটি ব্লকের ইজারা নিয়ে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন

No comments

Powered by Blogger.