জিয়ার জন্মবার্ষিকীতে মাজারে শ্রদ্ধা, দোয়া মাহফিল- অংশ নিলেন খালেদা জিয়া

বিভিন্ন কর্মসূচী পালনের মধ্য দিয়ে শনিবার জিয়াউর রহমানের ৭৭তম জন্মবার্ষিকী পালন করেছে বিএনপি। এ উপলক্ষে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের নিয়ে শেরেবাংলানগরে জিয়ার মাজারে পুষ্পমাল্য অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে অংশ নেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া।
এ উপলক্ষে সকাল ৬টায় বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশের সকল কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এ ছাড়া দুপুর ১২টায় বিএনপি কার্যালয়ের সামনে ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প ও বিকেলে ঢাকা মহানগর বিএনপি কার্যালয়ে জিয়া স্মৃতি পাঠাগার উদ্ধোধন করা হয়।
সকাল ১০টার থেকেই শেরেবাংলানগরে জিয়ার মাজার প্রাঙ্গণে এসে জড়ো হতে থাকে বিএনপি ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। বেলা ১১টার মধ্যে অসংখ্য নেতাকর্মী ও সমর্থক এসে হাজির হন সেখানে। এ সময় জিয়ার মাজারে র‌্যাব-পুলিশ কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে। দুপুর পৌনে ১২টায় জিয়ার মাজারে গিয়ে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন খালেদা জিয়া। এর পর তিনি দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের নিয়ে মাজার প্রাঙ্গণে ওলামা দল আয়োজিত মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে অংশ নেন। মিলাদ শেষে জিয়ার মাজার প্রাঙ্গণে ড্যাব আয়োজিত স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচী উদ্বোধন করেন খালেদা জিয়া। এখানে জিয়া সাংস্কৃতিক সংগঠনও (জিসাস) আলাদা রক্তদান কর্মসূচীর আয়োজন করে। এ ২টি কর্মসূচীর আওতায় দলীয় নেতাকর্মীরা স্বেচ্ছায় রক্তদান করেন।
জিয়ার মাজারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, তরিকুল ইসলাম, এমকে আনোয়ার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আসম হান্নান শাহ, ড. আব্দুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস-চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, সাদেক হোসেন খোকা, সেলিমা রহমান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুল মান্নান, শামসুজ্জামান দুদু, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, মীর মোহাম্মদ নাসির, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম-মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক, অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরব, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাধারণ সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, মহিলা দল সভাপতি নুরে আরা সাফা, সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, কৃষক দলের যুগ্ম সম্পাদক শাহজাহান মিয়া সম্রাট, জাসাসের সভাপতি এমএ মালেক ও সাধারণ সম্পাদক মনির খান, ছাত্রদল সভাপতি আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব।
জিয়ার মাজারে প্রথমে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এর পর এক এক করে ঢাকা মহানগর বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, ওলামা দল, মৎস্যজীবী দল, তাঁতী দল, ড্যাব, ইঞ্জিনিয়ার্স এ্যাসোসিয়েশন, জাসাস, জিসাস, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে জিয়ার মাজারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়।
নির্বাচন নয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন- তরিকুল ॥ জিয়ার মাজারে পুষ্পমাল্য অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম বলেন, এই মুহূর্তে নির্বাচন নয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনের কথা ভাবছে বিএনপি। এ আন্দোলন আস্তে আস্তে তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। তিনি বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ষড়যন্ত্র থেকে সরে না এসে সরকার জনগণকে বিভ্রান্ত ও নির্বাচনমুখী করতে সিটি কর্পোরেশন ও উপজেলা নির্বাচনের কথা বলছে। কিন্তু সরকারের এ ষড়যন্ত্র সফল হবে না। তিনি বলেন, একদলীয় নির্বাচনের ষড়যন্ত্র থেকে সরকার আগের অবস্থান থেকে ফিরে আসেনি। আমরা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই, যা এতো দিন হয়ে আসছে। কিন্তু সরকার তাদের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সিটি করপোরেশন ও উপজেলা নির্বাচন করতে চায়।
তরিকুল বলেন, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্র রক্ষা এখন বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীন তত্ত্বাবধায়ক নয়, সেনা সমর্থিত অবৈধ সরকার ছিল। আর তাদের সমর্থন নিয়ে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেছে। সম্প্রতি চট্টগ্রামের উপ-নির্বাচনে ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যায়নি বলে অভিযোগ করে তরিকুল বলেন, নির্বাচন কমিশন ফলস ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে জিতিয়ে দিয়েছে।
আগামী নির্বাচন অনিশ্চিত ড. মোশাররফ ॥ জিয়ার মাজারে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশে বর্তমানে যে অবস্থা বিরাজ করছে, তাতে করে আগামী নির্বাচন অনিশ্চিত এবং গণতন্ত্র হুমকির মুখে। তিনি বলেন, দেশে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যতীত নির্বাচন হবে না। আর হলেও বিরোধী দল তাতে অংশগ্রহণ করবে না। তিনি বলেন, বিএনপিতে অনেক সৎ যোগ্য নেতা রয়েছেন। জিয়াউর রহমানও সৎ ও যোগ্য নেতাদের নিয়ে দল গঠন করে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করেছিলেন।
বিএনপি কার্যালয়ের সামনে ড্যাবের ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প ॥ জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ডক্টর এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পের আয়োজন করে। শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় এই ক্যাম্পের উদ্বোধন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম। ড্যাব মহাসচিব এজেডএম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মেডিসিন, চক্ষু, শিশু, হৃদরোগসহ ১২টি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ বিনামূল্যে শনিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত চিকিৎসা দিয়েছেন।
জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের উদ্বোধন ॥ জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার বিকেলে নয়াপল্টন ঢাকা মহানগর বিএনপি কার্যালয়ে জিয়া স্মৃতি পাঠাগার উদ্বোধন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম। এ সময় তিনি জিয়াউর রহমান, জাতীয়তাবাদী শক্তি ও দেশ সম্পর্কে জানতে দলের নেতাকর্মীদের বেশি বেশি বই পড়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, অনেক রাজনীতিবিদ আছেন যারা বাচাল। তারা প্রমাণ করতে চান বেশি জানেন। কিন্তু তারা কিছুই জানে না বলেই বেশি কথা বলেন।
ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ও জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক মনিরুজ্জামান মিয়া, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. খন্দকার মোস্তাহিদুর রহমান ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন।
ক্ষতিকর ঋণচুক্তি করেছে সরকার- মওদুদ ॥ সরকার রাশিয়ার সঙ্গে ক্ষতিকর ঋণচুক্তি করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি বলেন, সরকার মোটা অঙ্কের কমিশন পেতেই এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। আর ঋণের টাকা দিয়ে রাশিয়া থেকে নিম্নমানের অস্ত্র কিনে এখন দেশের জনগণের উপরই ঋণের বোঝা চাপানো হচ্ছে। শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা নামক একটি সংগঠন আয়োজিত আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। মওদুদ বলেন, সরকারের কারণে বিচারকরা এখন মুক্তভাবে কোন বিচারকাজ সম্পন্ন করতে পারছেন না। বিচার বিভাগে সরকারের দ্বৈতনীতি ও দলীয়করণের কারণে তাঁরা নিরপেক্ষভাব কোন রায় দিতে পারছেন না। এ ধরনের আইনের অপ্রয়োগ একমাত্র স্বৈরাচারী সররাই করে থাকে। তিনি বলেন, প্রথম দিন থেকেই আওয়ামী লীগ সরকার স্বৈরাচারী মনোভাব নিয়ে দেশ পরিচালনা করছে। তারই অংশ হচ্ছে হত্যা-গুম, বিরোধী দলের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.