বিরোধের নেপথ্যে টেন্ডার-নিয়োগ, আগামী কমিটি

টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, 'নিয়োগ-বাণিজ্য', নেতৃত্ব বজায় রাখা এবং ছাত্রলীগের আসন্ন কমিটিতে জায়গা পাওয়া নিয়ে মূলত ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে বলে ক্যাম্পাস-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় ক্যাম্পাসে প্রতি অর্থবছরে নূ্যনতম ১০-১৫ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ হয়। কাজগুলো তদারক করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগ। এই বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে ছাত্রলীগের মূল নেতৃত্ব অর্থাৎ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। কাজের ১০ শতাংশ লাভ তাঁরা ঠিকাদারদের কাছ থেকে রেখে দেন। কার্যাদেশ দেওয়ার আগেই এ টাকা তাঁদের হাতে তুলে দিতে হয়। নইলে ঠিকাদারদের কাজ দেওয়া হয় না। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাসে এটি পুরনো 'রেওয়াজ'। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, তখনই এমন ঘটনা ঘটে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর অতীতের মতো এবারও ক্যাম্পাসের কর্তৃত্ব হাতে নেয় ছাত্রলীগ। তবে ছাত্রলীগের মূল নেতৃত্বের মধ্যে যখনই সমঝোতা না হয়, তখনই সৃষ্টি হয় বিরোধ। এদিকে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখার জন্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজেদের দল ভারী করেন। শক্তি জানান দিতে মাঝেমধ্যে তাঁরা হানাহানিতে লিপ্ত হন। তাঁদের হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগের পদস্থ কর্মকর্তারাও অনেক সময় লাঞ্ছিত হন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ক্যাম্পাসের নিয়োগ-বাণিজ্য নিয়েও এবার ছাত্রলীগের বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী পদে কয়েক শ লোক নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন। এই নিয়োগে ছাত্রলীগ সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে। তারা পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য নানাভাবে কর্তৃপক্ষকে চাপ দিয়ে চলেছে। এসব নিয়োগে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য হচ্ছে। জানা যায়, ক্যাম্পাসে অবস্থিত বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের পদস্থ কর্মকর্তাও বছরখানেক আগে ছাত্রলীগের নেতাদের দ্বারা হেনস্তা হয়েছিলেন।
ক্যাম্পাসের বর্তমান ছাত্রলীগের বিরোধের আরেকটি কারণ সিনিয়র-জুনিয়র বিরোধ। জানা গেছে, ক্যাম্পাসে এখন দাপিয়ে বেড়ান জুনিয়র নেতারা। তাঁরা সিনিয়র ছাত্র ও নেতাদের মানেন না। মাঝেমধ্যে জুনিয়র গ্রুপ ভয়ংকর হয়ে ওঠে প্রতিপক্ষের ওপর। কখনো কখনো তারা শিক্ষকদেরও হুমকি দেয়। ক্যাম্পাসের সাম্প্রতিক বিরোধে জুনিয়র একাধিক ছাত্রলীগকর্মীর বেপরোয়া আচরণ দেখা গেছে।
আসন্ন কমিটি নিয়েও ছাত্রলীগের বিরোধ ছিল। জানা গেছে, কয়েক মাসের মধ্যেই বর্তমান এ কমিটির মেয়াদ শেষ হবে। আগামী কমিটিতে স্থান পেতে নিজেদের শক্তির প্রমাণ দিতে অনেক মধ্যম সারির নেতা যেকোনো ইস্যুতে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ছেন। আবার পুরনো অনেক নেতাও পছন্দের কর্মীকে বড় পদে আনতে পেছনে থেকে কলকাঠি নাড়ছেন। সব মিলিয়েই বর্তমানের এ অবস্থা বলে জানিয়েছে পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগের একটি সূত্র।
শীর্ষ দুই নেতার বিরোধের কথা অস্বীকার করে ছাত্রলীগের সভাপতি শামছুদ্দিন আল আজাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'মধ্যম সারির কিছু নেতার কারণেই সংঘর্ষ হচ্ছে। তাঁরা শীর্ষ নেতাদের মানছেন না। এ কারণে গ্রুপিং হচ্ছে।' টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ ও নিয়োগ-বাণিজ্যের বিষয়টিও অস্বীকার করেন আজাদ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল হক বলেন, তাঁর কাছে এ ধরনের অভিযোগ কেউ কখনো করেনি।

No comments

Powered by Blogger.