মেয়াদোত্তীর্ণ সনদে বিস্ফোরক- খালাসের চেষ্টা করে শেভরন

বহুজাতিক কম্পানি শেভরনের বিরুদ্ধে এবার মেয়াদোত্তীর্ণ সনদ দিয়ে পণ্য খালাসের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এ ক্ষেত্রে নৌবাহিনীকে জানানোর বিধিও তারা অনুসরণ করেনি। এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার আটক আগন্তুক-৩ নামের একটি জাহাজ বর্তমানে কোস্টগার্ডের নজরদারিতে রয়েছে।
দেশে কোনো বিস্ফোরক পদার্থ আমদানি করতে হলে বৈধ কাগজপত্র দাখিল করে কাস্টমসের অনুমতি এবং ব্যবহারের সপক্ষে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। আমদানি করা পদার্থ চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে খালাসের আগে নৌবাহিনীর অনুমতি এবং তাদের উপস্থিতিতে খোলার বিধান রয়েছে। আমদানি করা বিস্ফোরক কোনো ধ্বংসাত্মক কাজে ব্যবহৃত হয় কি না তা যাচাই করতেই এই নিয়ম চালু আছে। সংশ্লিষ্ট অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শেভরনের জন্য আনা বিস্ফোরক পদার্থ বিস্ফোরক অধিপ্তরের অনুমোদনের মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর পার হয়ে গেছে। এ কারণে নৌবাহিনীকে না জানিয়েই তড়িঘড়ি করে জাহাজ থেকে বিস্ফোরক খালাসের চেষ্টা করে প্রতিষ্ঠানটি।
বিস্ফোরক পদার্থ খালাসে আমদানিকারকের নিয়োজিত হোম বাউন্ড শিপিংয়ের কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান কালের কণ্ঠের কাছে বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, '৩১ ডিসেম্বর বিস্ফোরক অধিদপ্তরের অনুমোদনের মেয়াদ পার হয়ে গেছে। এরই মধ্যে বন্দরে জাহাজ চলে আসায় নতুন করে আমরা অনুমোদনের সুযোগ পাইনি।' নৌবাহিনীর কাছ থেকে লিখিত অনুমতি ছাড়া পণ্য জাহাজ থেকে খালাসের চেষ্টা অন্যায় কি না, এ বিষয়ে তিনি জবাব দেননি।
তবে চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (হারবার ও মেরিন) ক্যাপ্টেন এম শাহজাহান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'হোম বাউন্ড শিপিং এজেন্ট প্রতারণা ও অন্যায় দুটিই করেছে। মেয়াদোত্তীর্ণ সনদ দিয়ে পণ্য খালাসে সে প্রতারণা করেছে এবং নৌবাহিনীকে বাদ দিয়ে তড়িঘড়ি করে পণ্য খালাসে অন্যায় করেছে। এগুলো সহজভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই, আইনমতো এর শাস্তি পেতে হবে। আর তদন্ত কমিটিই সেই সুপারিশ করবে।'
আগন্তুক-৩ জাহাজের মালিক এবং এমএইচ শিপিংয়ের কর্ণধার মো. জাহাঙ্গীর কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিদেশি জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের জন্য ৮ জানুয়ারি ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল থেকে আগন্তুক জাহাজ বুকিং নেওয়া হয়। সেই মতে পণ্য খালাসের জন্য যায়। জাহাজে কী আছে এবং এর অনুমতি আছে কি না তা আমাদের জানার কথা নয়। সুতরাং আমার জড়িত থাকার প্রশ্ন আসে না।'
এদিকে বিস্ফোরক পদার্থ আমদানির বিষয়টি তদন্ত করতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের উপসংরক্ষক ক্যাপ্টেন নাজমুলকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। কমিটির প্রধান ক্যাপ্টেন নাজমুল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'রবিবার থেকে বিষয়টি তদন্তে আমরা কাজ শুরু করব। ইতিমধ্যে আগন্তুক-৩ জাহাজটি আটক করে নজরদারিতে রেখেছে কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী।'
কোস্টগার্ড চট্টগ্রাম অঞ্চলের অপারেশন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট আবদুল্লাহ ইউসুফ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমাদের একটি টিম কর্ণফুলী নদীর ১৫ নম্বর বিজয়নগর ঘাটে আগন্তুক-৩ জাহাজটি নজরদারিতে রেখেছে।'
আমদানি করা পণ্য খালাসের আগে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের কাগজপত্রসহ বিল অব এন্ট্রি চট্টগ্রাম কাস্টমসে দাখিল করে শুল্কায়নের জন্য অনুমতি নিতে হয়। শুল্কায়নের ক্ষেত্রে সব কাগজপত্র ঠিক ছিল দাবি করে চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার মাসুদ সাদিক কালের কণ্ঠকে বলেন, 'পণ্য অ্যাসেসমেন্ট হওয়ার পর আমদানিকারকের পক্ষ থেকে কাস্টমসে জমা দেওয়া সনদে বিস্ফোরক দপ্তরের অনুমোদনের মেয়াদ পার হওয়ার বিষয়টি আমরাও জেনেছি।' তিনি দাবি করেন, গতকাল শনিবার কাস্টমস, বন্দর, নৌবাহিনী ও শেভরনের নিরাপত্তা কর্মকর্তার উপস্থিতিতে একাধিক মিটিংয়ে সনদ নবায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ার পতাকাবাহী 'নোয়া সাটো' জাহাজ মালয়েশিয়ার কেলাং বন্দর থেকে রওনা দিয়ে গত ২১ ডিসেম্বর রাতে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থান নেয়। গত ১৫ জানুয়ারি জাহাজটি বন্দরে প্রবেশ করে ড্রাইডক জেটিতে নোঙর করে। এরপর আমদানিকারকের নিয়োজিত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট হোম বাউন্ড শিপিং মালপত্র ছাড়ানোর জন্য কাস্টমসে কাগজপত্র দাখিল করে। গত ১৬ জানুয়ারি রাতে নোয়া সাটো জাহাজ থেকে ৪৬ হাজার বিস্ফোরক ও আট হাজার ডেটোনেটর এমভি আগন্তুক-৩ নামের দেশি জাহাজে তুলে দেওয়ার কাজটি করে স্টিভিডোরিং প্রতিষ্ঠান প্রেস্টিজ করপোরেশন। যুক্তরাষ্ট্রের তেল-গ্যাস উত্তোলন কম্পানি সিলেটের জালালাবাদ গ্যাসক্ষেত্রে ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন কাজে ব্যবহারের জন্য এই বিস্ফোরক এনেছে বলে জানা গেছে।

No comments

Powered by Blogger.