কবিগুরুর নোবেল জয়ের শতবর্ষ অনুষ্ঠানের সমাপ্তি- সংস্কৃতি সংবাদ

 কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অমর সৃষ্টি গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ। অনন্য এ কীর্তিগাথার জন্য ১৯১৩ সালে প্রথম এশীয় হিসেবে নোবেল পুরস্কার পান বিশ্বকবি। চলতি বছর পূর্ণ হলো এ সাফল্যের শত বছর।
এমন সাফল্যের উদ্যাপন উপলক্ষে আয়োজন করা হয় গীতাঞ্জলি এক শ’ শিরোনামের দুই দিনের অনুষ্ঠানমালা। প্রথম দিন শুক্রবারের আয়োজন বসেছিল কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়ীতে। শনিবার বিকেলে সমাপনী দিনের আয়োজন বসে বাংলা একাডেমীর আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে। যৌথভাবে চমৎকার এ অনুষ্ঠানমালার আয়োজনটি করে বাংলাদেশের অতন্দ্র একাত্তর, বাংলা একাডেমী ও কলকাতার ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ।
সমাপনী আয়োজন দুটি পর্বে বিভক্ত ছিল। প্রথম পর্বে ছিল আলোচনা। আর সন্ধ্যায় দ্বিতীয় পর্বে ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। বিশ্বকবির গানের সুর আর কবিতার দোলায়িত ছন্দের উপস্থাপনায় সজ্জিত এ পর্বটি হয়ে ওঠে দারুণ মনোমুগ্ধকর। সঙ্গে ছিল নূপুরের ছন্দ তোলা নাচের পরিবেশনা। কবিগুরুর হৃদয় সিক্ত করা নানা সৃষ্টি নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের শিল্পীদের অনবদ্য পরিবেশনাগুলোয় ছিল অনাবিল মুগ্ধতার আবেশ।
প্রথম পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব) এবি তাজুল ইসলাম। রবীন্দ্রনাথের কৃষি ভাবনা বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান। আলোচনায় অংশ নেন শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক খন্দকার আশরাফ হোসেন, ড. আখতার কামাল, ভারতীয় হাইকমিশনের তথ্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সচিব অভিজিত চট্টোপাধ্যায় ও কলকাতার কবি বীথি চট্টোপাধ্যায়। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।
রবীন্দ্রনাথের নোবেলপ্রাপ্তির প্রসঙ্গ তুলে ধরে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এই প্রাপ্তিটা তাঁর কাছে একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল। তিনি নিজেও এটা আশা করেননি। কারণ, সে সময় বাংলা ছিল একেবারেই প্রান্তিক ভাষা। তবে রবীন্দ্রনাথ অনূদিত গীতাঞ্জলির গীতিময়তায় হয়েছিল ইংরেজ কবি ডব্লিউ বি ইয়েটস। এই মুগ্ধতার রেশ ধরেই ইয়েটস গীতাঞ্জলির ইংরেজী অনুবাদ করেছিলেন। যদিও পরবর্তীতে নানা বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়। তিনি আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঐক্যের কবি। বাংলা সাহিত্যের প্রতি তিনি বিশ্ববাসীকে কৌতূহলী করেছেন। আর রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কার বাংলা সাহিত্যের জন্য প্রয়োজনীয় ছিল। এর মাধ্যমে তিনি বিশ্বকে গ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছেন। তবে এজন্য নোবেল কমিটি নয়, রবীন্দ্রনাথের কাছেই আমরা কৃতজ্ঞ। কারণ, বিশ্বব্যাপী গীতিকবিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম রবীন্দ্রনাথ।
রবীন্দ্রনাথের কৃষি ভাবনা বিষয়ক প্রবন্ধে আতিউর রহমান বলেন, রবীন্দ্রনাথের শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র ছিল কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষ। শুধু লেখনীতে নয়, প্রজাদরদী জমিদার কবি নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন এসব মানুষের জীবনমান উন্নয়নে। পল্লীর সিংহভাগ মানুষের পেশা কৃষিÑ এটা লক্ষ্য করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তাই তিনি কৃষি উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। শতবর্ষ আগেই বিজ্ঞানমনস্ক এই কবি গ্রামবাংলা ও কৃষকের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে গেছেন।
নূপুরের ছন্দে মুদ্রার সঙ্গে অভিব্যক্তির মেলবন্ধনে গড়া নৃত্য পরিবেশনা দিয়ে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব। ‘জগতের এ আনন্দযজ্ঞে তোমায় নিমন্ত্রণ’ গানের সুরে পরিবেশিত হয় সমবেত নাচ। এরপর মঞ্চে আসেন কণ্ঠশিল্পী লিলি ইসলাম। সুরেলা কণ্ঠে গেয়ে শোনান এই করেছো ভালো/নিঠুরও হে/এই করেছো ভালো। এছাড়াও একক কণ্ঠে রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন বুলবুল ইসলাম, মহিউজ্জামান চৌধুরী ময়না, ফাহিম হোসেন চৌধুরী, লাইসা আহমেদ লিসা, অদিতি মহসীন, রোকাইয়া হাসিনা নেলি, তানিয়া মান্নান, সুস্মিতা দেব বর্ণা প্রমুখ। ভারতীয় শিল্পীদের মধ্যে গান শোনান শান্তনু রায় চৌধুরী, প্রমীতা মল্লিক, সাহেব চক্রবর্তী ও ইমন চক্রবর্তী। আবৃত্তি করেন বাকশিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, লায়লা আফরোজ, শিমুল মুস্তাফা, আহ্্কাম উল্লাহ্্, ঝর্ণা সরকার প্রমুখ। ভারতীয় বাকশিল্পীদের মধ্যে কবিতাপাঠ করেন সত্যম রায় ও মল্লিকা মজমুদার।
বঙ্গবন্ধুকে লেখা চিঠি নিয়ে উৎসব
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বিশ্বাসঘাতকদের নির্মমতায় প্রাণ হারান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এখন আর এই নশ্বর পৃথিবীতে তাঁর শরীরী অস্তিত্ব নেই। তবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম পরম্পরায় রয়ে গেছে তাঁর আদর্শ ও মূল্যবোধ। বাঙালির রাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্ম ইতিহাসের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য হয়ে আছে তাঁর নামটি। আর তাই তো নতুন প্রজন্ম দেশ নিয়ে তাঁদের মনের কথা লিখবেন জাতির জনককে। তাঁর ৯৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হবে চিঠি উৎসব। বঙ্গবন্ধর জন্মদিন আগামী ১৭ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য এ উৎসবের আয়োজন করছে বৃত্তান্ত ’৭১। চিঠি লেখার বিষয়বস্তু ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’। এসব চিঠিতে রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমকালীন প্রেক্ষাপট নিয়ে অষ্টম শ্রেণী থেকে স্নাতোকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা তিন বিভাগে বঙ্গবন্ধুর কাছে চিঠি লিখবেন। বাছাইকৃত ৭১টি চিঠি নিয়ে প্রকাশিত হবে একটি সঙ্কলন।
শনিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বৃত্তান্ত ’৭১-এর নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মদ তানভীর। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের পরিচালনা পর্ষদ সদস্য তারিকুজ্জামান, নাজমুল হোসাইন ও কামরুল হাসান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ক বিভাগে অষ্টম থেকে দশম শ্রেণী, খ বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক ও সমমান এবং গ বিভাগে ¯œাতক ও ¯œাতোকোত্তর শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা সর্বোচ্চ ৭০০ শব্দের মধ্যে চিঠি লিখবেন। চিঠি আগামী ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সংগঠনের কার্যালয়ে (৩৩/১ নতুন শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভিন সড়ক, ঢাকা) সরাসরি কিংবা ডাকযোগে পৌঁছাতে হবে। প্রাপ্ত চিঠি থেকে প্রথমে ’৭১টি চিঠি বাছাই করা হবে। অথবা নৎরঃঃধহঃড়৭১@ুধযড়ড়.পড়স এই ঠিকানায় ই-মেইল করা যাবে। চিঠি লেখার এ উৎসবে তিন বিভাগের প্রথম তিনজনকে একটি করে ল্যাপটপ পুরস্কার হিসেবে দেয়া হবে।
গ্যালারি কায়ায় ছাপচিত্র প্রদর্শনী ॥ উত্তরার গ্যালারি কায়ায় শনিবার বিকেলে শুরু হয়েছে ‘ছাপাই ছবি ২’ শীর্ষক ছাপচিত্র প্রদর্শনী। গ্যালারির ‘ছাপাই ছবি’ শীর্ষক ধারাবাহিক প্রদর্শনীর দ্বিতীয় পর্বে বাংলাদেশের প্রবীণ ও নবীন ১৪ শিল্পীর ছাপচিত্র স্থান পেয়েছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্টদূত ড্যান মজেনা এর উদ্বোধন করেন।
১২ দিনের এ প্রদর্শনী চলবে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত এবং প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
শিল্পকলায় যাত্রা উৎসব ॥ শীত মৌসুম এলেই আমাদের গ্রামবাংলা মুখর হয়ে উঠত যাত্রার সংলাপে। গ্রামের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ছুটে বেড়াত যাত্রার সংলাপ। আজ যাত্রার সেই ঐহিত্য হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম। হারিয়ে যেতে বসা সেই যাত্রাশিল্পকে শহুরে মানুষের কাছে তুলে ধরতে শনিবার থেকে শুরু হয়েছে চার দিনের যাত্রা উৎসব। শিল্পকলা একাডেমীর ‘দেশজ সংস্কৃতির বিকাশ ও আন্তর্জাতিক সংস্কৃতির সঙ্গে মেলবন্ধন’ শীর্ষক কর্মসূচীর আওতায় নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিষয়ক বিভাগের উদ্যোগে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। একাডেমীর পরীক্ষণ থিয়েটার হলে শনিবার সন্ধ্যায় যাত্রা উৎসবের উদ্বোধন করেন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট প্রমোদ মানকিন। আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রতিদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হবে যাত্রাপালা।
বইপড়ার কর্মসূচীর পুরস্কার ॥ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বছরব্যাপী বইপড়া কর্মসূচীর পুরস্কার বিতরণীর শেষ দিন ছিল শনিবার। শুক্রবার রমনা বটমূলে দুই পর্বে পুরস্কার বিতরণ শেষে শনিবার বিকেলে একই স্থানে আয়োজন করা হয় তৃতীয় পর্বের কার্যক্রম। তৃতীয় পর্বে ঢাকা মহানগরীর ২৮টি স্কুলের ২০২৭ শিক্ষার্থীর মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.