পুলিশের পুরস্কার!-অপকর্মকে উৎসাহিত করা উচিত নয়

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রতিনিয়তই খারাপ হচ্ছে। চুরি, ডাকাতি, খুন, রাহাজানি, ধর্ষণ, অপহরণ, এসিড নিক্ষেপ, যৌতুকের জন্য পুড়িয়ে মারা নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সেই সঙ্গে রয়েছে রাজনৈতিক সন্ত্রাস। ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারদের দখলবাজি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি- এসব তো আছেই।
সব মিলিয়ে নাগরিক জীবনের শান্তি আজ বিপন্ন হয়ে পড়েছে। আর এর জন্য দায়ী পুলিশবাহিনীর অদক্ষতা ও লাগামহীন দুর্নীতি। পাশাপাশি দলীয় সরকারগুলোর আমলে এ বাহিনীর নিয়োগে দলীয়করণ, দলীয় স্বার্থে পুলিশবাহিনীকে যথেচ্ছ ব্যবহার এবং দলীয় বিবেচনায় পদোন্নতি ও পুরস্কৃত করার অনাকাঙ্ক্ষিত রেওয়াজ এ বাহিনীটির ধ্বংসকেই কেবল ত্বরান্বিত করছে। তেমনি একটি দৃষ্টান্ত স্থাপিত হতে যাচ্ছে আবারও। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ২০১১ সালে হরতালের সময় বিরোধীদলীয় চিফ হুইপকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছিলেন যে পুলিশ কর্মকর্তা, সেই উপপুলিশ কমিশনার হারুন অর রশিদ এবার প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক (পিপিএম) পেতে যাচ্ছেন। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে- এটা কি বিরোধীদলীয় চিফ হুইপকে পেটানোর পুরস্কার?
পুলিশবাহিনীর কাজে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য 'রিওয়ার্ড অ্যান্ড পানিশমেন্ট' কিংবা শাস্তি ও পুরস্কারের যে প্রয়োজন রয়েছে, সে ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। কিন্তু সেটি হতে হবে নিয়মমাফিক। ভালো কাজের জন্য পুরস্কার এবং খারাপ কাজের জন্য শাস্তি- এ নিয়মটি যদি উল্টো হয়, তাহলে ফলাফলও উল্টে যাবে। দক্ষতার বদলে অদক্ষতা বাড়বে, পেশাদারিত্ব হারিয়ে যাবে এবং দলবাজি বৃদ্ধি পাবে। পুলিশের যে মূল কাজ 'দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন' সেটিও উল্টে যাবে। ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা গুম, খুনসহ নানা ধরনের অপরাধ করে যাবে, পুলিশ তাদের খুঁজে পাবে না। বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যাবে। অপরাধীরা ঘুরে বেড়াবে, আর নিরীহ-নিরপরাধ লোকজন পুলিশের অত্যাচার ও ঘুষ-বাণিজ্যের শিকার হবে। অর্থাৎ পুলিশ ভূমিকা রাখবে শিষ্টের দমন ও দুষ্টের পালনে। এটি কোনো স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কিংবা কোনো সভ্য সমাজে কাম্য হতে পারে কি?
রাষ্ট্রের এ ধরনের পক্ষপাত ও দলীয় বিবেচনাই পুলিশকে আজকের অবস্থায় এনে দাঁড় করাচ্ছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, যখন যে দল ক্ষমতায় যায়, তখন সেই দলই পুলিশে পেশাদারিত্ব নয়, নিজের লোক দেখতে চায়। বাহিনীটিকে নিজেদের লোক দিয়ে নিজেদের মতো করে গড়ে তুলতে চায়। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, এরা কেউই অতীত থেকে শিক্ষা নেয় না। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বিরোধীদলীয় নেতাদের পেটানো, জাতীয় প্রেসক্লাবে হামলা চালানো এবং সাংবাদিক নির্যাতনের মাধ্যমে দুর্বৃত্ত পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন কোহিনূর মিয়া। অথচ সে সময় তিনি এসবের পুরস্কার হিসেবে একের পর এক পদোন্নতি পেয়েছিলেন। সেই দলীয়করণের পরও বিরোধী দলের নেতারা আজ কিন্তু রেহাই পাচ্ছেন না। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আজ যাঁরা ক্ষমতাসীন, কাল যদি তাঁরা বিরোধী দলে যান, তাঁরাও রেহাই পাবেন না- এক রকম নিশ্চিত করেই বলা যায়। সে জন্য আমরা চাই, খারাপ কাজকে খারাপই মনে করা হোক এবং প্রকৃত ভালো কাজের জন্য পুরস্কৃত করা হোক। দলবাজি নয়, পুলিশের পেশাদারিত্বকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হোক। বিরোধী দলকে দমনে নয়, অপরাধ দমনে পুলিশের সম্পৃক্ততা বাড়ানো হোক।

No comments

Powered by Blogger.