আত্মগোপন থেকে জনসম্মুখে ধর্ষণ ও নির্যাতনের কথা অস্বীকার কাপাসিয়ার সেই গৃহপরিচারিকার

গাজীপুরের কাপাসিয়ার আলোচিত গৃহপরিচারিকা প্রায় ২৪ ঘন্টা পালিয়ে থাকার পর শনিবার জনসম্মুখে এসেছে। এদিন সে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে তাকে ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে বক্তব্য দিয়েছে বলে কাপাসিয়া থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন জানান।
কাপাসিয়ার আওয়ামী লীগ নেতা কাজল মোল্লার ঢাকার মিরপুরের বাসায় চলতি মাসের শুরুর দিকে কিশোরী গৃহপরিচারিকা মিনারাকে ধর্ষণ ও অমানুষিক নির্যাতন করার রোমহর্ষক ঘটনার খবর গত কয়েকদিন ধরে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হলে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় ওঠে। সংবাদ প্রকাশের পর মিনারা শনিবার সকাল পর্যন্ত আত্মগোপনে থাকে। এরই প্রেক্ষিতে শনিবার সকালে কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলাউদ্দিন আলী, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আসগর হোসেনসহ স্থানীয় প্রশাসনের কয়েক কর্মকর্তা মিনারার খোঁজে তার বাড়ি কাপাসিয়া সদর ইউনিয়নের বড়টেক এলাকায় যান। এ সময় মিনারা আওয়ামী লীগ নেতা কাজল মোল্লা কর্তৃক ও তার স্ত্রীর হাতে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে। সে জানায়, দীর্ঘদিন থেকে তার দুহাতে একজিমা রোগ দেখা দিয়েছে। নিরাপত্তার অভাবে শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত সে আত্মীয়ের বাড়িতে আত্মগোপন করেছিল। এ সময় প্রশাসনের কর্মকর্তা তার বক্তব্য রেকর্ড করেন।
এদিকে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর বৃহস্পতিবার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনেও গৃহকর্মী তার লিখিত বক্তব্যে ধর্ষণ ও অমানুষিক নির্যাতনের কথা অস্বীকার করে বক্তব্য দেয়। এর পর থেকেই ওই গৃহকর্মীর হদিস পাওয়া যাচ্ছিল না। তার খোঁজ না পাওয়ায় একটি মহল ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য ওই গৃহপরিচারিকাকে গোপন স্থানে নিয়ে আটকে রেখেছে বলে এলাকায় সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল শুক্রবার কাপাসিয়ায় এসে নির্যাতিতার বাড়ি কাপাসিয়া সদর ইউনিয়নের বড়টেক এলাকায় যায়। সেখানে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন, কিন্তু ওই নির্যাতিতাকে বাড়িতে পাননি বলে জানিয়েছেন ওই প্রতিনিধি দলের সদস্য এ্যাডভোকেট মোঃ সোহেল রানা আকন্দ। তিনি আরও জানান, নির্যাতিতার পরিবার এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
এদিন কিশোরীর বাবা নুরুল ইসলাম পুলিশের কাছে জানান, শুক্রবার সকালে তার মেয়েকে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও মহিলা যুবলীগের আহবায়ক কানিজ ফাতেমা রুহিতা বাড়ি থেকে নিয়ে গেছে। এর পর থেকে মেয়ের কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি রুহিতার মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে।
এদিকে আলোচিত ঘটনার ব্যাপারে কাজল মোল্লা জানান, একটি পত্রিকার সংবাদে আমাকে স্থানীয় সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমির এপিএস হিসেবে উল্লেখ করা হলেও আমি ওই সাংসদের এপিএস নই। আমি কোথাও এ পরিচয় দেইনি। তাছাড়া আমরা গৃহপরিচারিকাকে কোন রকম নির্যাতন বা মারধর করিনি। সে আমার বাসায় প্রায় ১ মাস ছিল। তার হাতে চর্মরোগ দেখা দিলে আমি তাকে ছুটি দিয়ে চিকিৎসাপত্রসহ সুস্থ অবস্থায় তার অভিভাবকের কাছে পৌঁছে দেই। গত ডিসেম্বর মাস থেকে প্রায় একমাস মিনারা বাসায় গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করে। একটি মহল অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। একই সঙ্গে সংসদ সদস্যকে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্য আমাকে তার এপিএস বলে প্রচার করছে।

No comments

Powered by Blogger.