১৪ মাস হাসপাতালে অবশেষে কারাগারে

খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ইয়াসিন রহমানকে অবশেষে কারাগারে পাঠানো হলো। জটিল কোনো রোগ না থাকলেও এক বছর আড়াই মাস (৪৪০ দিন) ধরে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কেবিনে ছিলেন।
তাঁর রোগ সম্পর্কে কাগজপত্রে লেখা, ‘পিঠে ব্যথা’। গতকাল শনিবার সকালে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়ার পর কারাগারের লোকজন এসে শিল্পপতি-পুত্র ইয়াসিন রহমানকে নিয়ে যান। এ সময় হাসপাতালে তাঁর পরিবারের কাউকে দেখা যায়নি। হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক কামাল উদ্দীন বলেন, তাঁকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। তিনি এখন কারাগারে চলে যাচ্ছেন।
‘যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ১৪ মাস হাসপাতালে’ শিরোনামে গত শুক্রবার প্রথম আলোতে খবর প্রকাশের পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ ব্যবস্থা নিল। গতকাল দুপুরে হাসপাতাল ছাড়ার সময় ইয়াসিন কারও সঙ্গে কথা বলেননি। ছবি তুলতে চাইলে তিনি মুখ ঢেকে দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে থাকেন। এ সময় শত শত লোক তাঁকে দেখার জন্য দাঁড়িয়ে ছিল। হাসপাতালের একটি অ্যাম্বুলেন্সে ওঠে তিনি কারাগারে যান।
১৪ মাস হাসপাতালে থাকা আসামি কীভাবে দৌড়ে চলে যেতে পারেন, জানতে চাইলে একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি সুস্থই ছিলেন। বাবার টাকার জোরে তাঁকে এখানে রাখা হয়েছে। তাঁর বাবা চট্টগ্রামের বিশিষ্ট শিল্পপতি ও কেডিএস গ্রুপের মালিক খলিলুর রহমান।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ইয়াসিনকে হাসপাতালে রাখার জন্য প্রতিদিনের কেবিন ভাড়া ছিল ৪৭৫ টাকা। এ হিসাবে ৪৪০ দিনের ভাড়া হয় দুই লাখ নয় হাজার টাকা। তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে এ টাকা দেওয়া হয়েছে।
কারাগারের আসামির চিকিৎসার খরচ কীভাবে তাঁর পরিবার দিল, জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. ছগীর মিয়া বলেন, এভাবে কেবিনে বন্দী রেখে চিকিৎসার বিধান নেই। টাকা দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এ খাতে সরকারি কোনো বরাদ্দ নেই। তা ছাড়া ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসার জন্য তাঁকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে কেবিনে রেখেছে।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খোন্দকার শহিদুল গনী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ প্রশ্ন আমারও। আমি মাত্র দেড় মাস আগে এ হাসপাতালে এসেছি। এসেই আমার মনে হয়েছে, কী করে আসামি কেবিনে থাকছে। আগের পরিচালক বলতে পারবেন, কী করে তিনি এত দিন এখানে ছিলেন।’ পরিচালক বলেন, তিনি আসার পর জানতে পারেন, এই আসামি ডিভিশনপ্রাপ্ত। এ কারণে তাঁকে কেবিনে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
কারাগারের জেলার জানান, বেলা দেড়টার দিকে ইয়াসিনকে কারাগারের ভেতরে নেওয়া হয়। তাঁকে সাধারণ ওয়ার্ডে রাখা হবে।
ইয়াসিন রহমান বহুল আলোচিত জিবরান তায়েবী হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। হাইকোর্টের রায়ের পর সুপ্রিম কোর্ট তাঁর সাজা বহাল রাখেন। সাজা পাওয়ার পর মাত্র তিন দিন কারাগারে ছিলেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.