রাজশাহী-চট্টগ্রাম- রাজশাহীর দুরন্ত জয়

তামিম খ্যাপাটে দৌড়ে দিকশূন্য ছুটছেন হাত উঁচিয়ে। ড্রেসিংরুমে নিষ্পলক মাহমুদউল্লাহর হাত থুতনিতে। শন আরভিনকে মাঝে রেখে গোল হয়ে যখন লাফাচ্ছেন দুরন্ত রাজশাহীর ক্রিকেটাররা, চিটাগং কিংসের ড্রেসিংরুম ও ডাগ-আউট নিস্তব্ধ।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম ক্রিকেটের চূড়ান্ত নাটকীয়তা ও অনিশ্চয়তা দেখল আরেকবার। প্রায় পুরো ম্যাচটাই যাঁদের নিয়ন্ত্রণে ছিল, সেই চিটাগং কিংসই হেরে গেছে শেষ ওভারের মহানাটকীয়তায়। জয়ের জন্য শেষ ওভারে ৩ উইকেট হাতে নিয়ে প্রয়োজন ছিল ৩ রান। এখান থেকে পরাজয়ের কঠিন কাজটা চিটাগং করে ফেলল প্রথম তিন বলেই ওই তিন উইকেট হারিয়ে! ২ রানের অবিশ্বাস্য জয়ে বিপিএলের দ্বিতীয় অভিযান শুরু করল দুরন্ত রাজশাহী। ব্যাট হাতে খুব বেশি কিছু করতে পারেননি তামিম ইকবাল। তবে তিক্ততায় ভরা প্রথম আসরকে পেছনে ফেলার মিশন শুরু করলেন পুরোনো দলের বিপক্ষে নতুন দলের দারুণ এক জয়ে নেতৃত্ব দিয়ে।
কালকের ম্যাচ দেখাল রানের খেলা টি-টোয়েন্টিতে লো-স্কোরিং ম্যাচও কতটা উত্তেজনাপূর্ণ হতে পারে। অনেক দিক থেকেই ম্যাচটি অদ্ভুতুড়ে। উইকেট মন্থর থাকলেও খুব কঠিন ছিল না। ম্যাচ শেষে দুই অধিনায়ক স্বীকারও করলেন। অথচ সেই উইকেটে এক শও করতে পারল না কোনো দল। গত বিপিএলের এক শর নিচে একমাত্র স্কোরটি ছিল চিটাগংয়েরই (খুলনার বিপক্ষে), এবার এক ম্যাচই দেখে ফেলল এক শর নিচে দুটি ইনিংস।
১০০ রান সামনে নিয়ে চিটাগং উইকেট হারাচ্ছিল শুরু থেকেই। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ অবশ্য একপাশ আগলে রেখে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন। জয়ের জন্য শেষ পাঁচ ওভারে ৫ উইকেট হাতে নিয়ে প্রয়োজন ছিল ২২ রান। আবুল হাসানের বাউন্সারে জ্যাকব ওরামের বিদায়েও সমীকরণ দুরূহ হয়নি। ৪ উইকেট হাতে নিয়ে ৩ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১৩। হঠাৎই কেন যেন আবুল হাসানকে তুলে মারলেন মাহমুদউল্লাহ। মিসটাইম হওয়া শট অনেকটা দৌড়ে লং অনে তালুবন্দী করলেন তামিম।
এর পরও ম্যাচটা চিটাগংয়েরই ছিল। ১১ বলে যখন প্রয়োজন ৬ রান, মনিরের বলে ডিপ কাভারে মার্শাল আইয়ুবের সহজ ক্যাচ ছাড়লেন জিয়াউর। তখন মনে হচ্ছিল, শেষটায় লড়াইয়ের সান্ত্বনাই থাকবে তামিমদের। কিন্তু চিত্রনাট্যের শেষে এত বিস্ময়ের ঘনঘটা কেউ ভাবতে পারেনি! শেষ ওভারে তামিম বল দেন টি-টোয়েন্টির অভিজ্ঞ সেনানী শন আরভিনকে। প্রথম বলে কাভারে ক্যাচ মার্শালের, পরের বলে রানচুরির চেষ্টায় মিড অন থেকে তামিমের বুলেট থ্রোতে রানআউট এনামুল। তৃতীয় বলে অফ স্টাম্পের দিকে সরে স্কুপ করতে গিয়ে বোল্ড আরাফাত সানি।
মন্থর উইকেটে স্বল্প পুঁজিতে সহজ রান দিতে চায়নি চিটাগং। প্রথম চার বোলারই ছিল স্পিনার! টি-টোয়েন্টি অভিষেকেই নতুন বলে দারুণ করেছেন নাঈম ইসলাম জুনিয়র। বাকি দুই বাঁহাতি স্পিনার মনির ও তাইজুলও রান আটকানোর পাশাপাশি নিয়েছেন উইকেট। চতুর্থ উইকেটে মাহমুদউল্লাহ ও মেহরাব জুনিয়রের হুমকি হয়ে ওঠা জুটি (৩৯ রানের) ভেঙেছেন ফরহাদ। বাকি কাজটুকু সেরেছেন দুই পেসার আবুল হাসান ও আরভিন। শেষ ওভারের নায়ক হয়ে ম্যাচসেরা আরভিন। সেরা হতে পারতেন অভিষেক টেস্টে ইতিহাস গড়া হাসানও। আরেক পেসার মুকতার বোলিং পাননি। কিন্তু ব্যাট হাতে তাঁর অপরাজিত ২২ রানই রাজশাহীকে টানতে পেরেছিল ৯৯ পর্যন্ত। তখন কেই-বা ভেবেছিল ওই পুঁজি নিয়েই রাজশাহী হয়ে উঠবে দুরন্ত!

সংক্ষিপ্ত স্কোর
দুরন্ত রাজশাহী: ২০ ওভারে ৯৯/৯ (তামিম ১৭, জহুরুল ১, মঈন ০, আরভিন ৫, জিয়াউর ১৩, ফরহাদ ৬, হাসান ৪, মুকতার ২২*, নাঈম জুনিয়র ৭, তাইজুল ৩, মনির ৫*; ওরাম ১/১৫, টেইট ০/৩০, মাহমুদউল্লাহ ২/১৭, আরাফাত ০/৮, বোপারা ২/১৯, এনামুল জুনিয়র ১/৮)। চিটাগং কিংস: ১৯.৩ ওভারে ৯৭ (টেলর ৯, জেসন ৫, বোপারা ৫, মাহমুদউল্লাহ ৪০, মেহরাব ১৮, নাঈম ২, ওরাম ১, মার্শাল ৪, আরাফাত ৭, এনামুল জুনিয়র ০, টেইট ০*; মনির ১/২১, নাঈম জুনিয়র ১/১৬, তাইজুল ১/৮, ফরহাদ ১/১৩, হাসান ৩/২০, আরভিন ২/৬)।
ফল: দুরন্ত রাজশাহী ২ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: শন আরভিন।

No comments

Powered by Blogger.