আবার এ্যাসিড সন্ত্রাস- নারী নির্যাতনের ভয়াবহ রূপগুলোর একটি হচ্ছে নারীদের প্রতি এ্যাসিড নিক্ষেপ
রাজধানীতে মঙ্গলবার এক ছাত্রীকে এ্যাসিডে ঝলসে দিয়েছে দুই দুর্বৃত্ত। মেয়েটি ইডেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্রী। তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। তিনি রাজি হননি।
তখন তাকে দুই যুবক পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে রাজধানীর এক স্থানে নিয়ে যায় এবং বিয়ের প্রস্তাব দেয় বলে জনকণ্ঠসহ অন্যান্য পত্রিকার খবর থেকে জানা যায়। মেয়েটি রাজি না হওয়ায় ওই দুই দুর্বৃত্তরা প্রথমে তাঁকে ছুরি দিয়ে কোপাতে থাকে। এরপর তারা তাঁর দেহে এ্যাসিড ছোড়ে। ছুরির আঘাত এবং এ্যাসিডে দগ্ধ মেয়েটিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি এখন সেখানেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।নারী নির্যাতনের ভয়াবহ রূপগুলোর একটি হচ্ছে নারীদের প্রতি এ্যাসিড নিক্ষেপ। প্রকৃতপক্ষে এটিকে ভয়াবহতম রূপ বললে সঠিক বলা হতে পারে। একশ্রেণীর মানুষ এ্যাসিড দিয়ে নারীর মুখ বিকৃত করে দেয়, তার শরীর দগ্ধ করে দেয়। তাদের এই জঘন্য কা- মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়। আমাদের সমাজে অনেক নারীই এই এ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে। এ্যাসিড সন্ত্রাসের কারণে তাদের অনেকেরই স্বাভাবিক জীবনের ছন্দ হারিয়ে গেছে। ভেঙ্গে গেছে আশা। জীবনের চলার গতি হঠাৎ করে যেন মোড় বদলে তাদের ঠেলে দিয়েছে এক অন্ধকার, অনিশ্চয়তায় ভরা যন্ত্রণাময় জীবনের দিকে। একশ্রেণীর দুর্বৃত্ত এভাবে তছনছ করে দেয় নারীর স্বাভাবিক জীবন। এজন্য নারীকে জীবনভর বহন করতে হয় ভয়াবহ দুঃসহ দুঃখের স্মৃতি।
আমাদের সমাজে ইদানীং এ্যাসিড সন্ত্রাস অনেকখানি কমে এসেছে, এটা একটা ভাল সংবাদ নিঃসন্দেহে। তবে এই সন্ত্রাস যে পুরোপুরি দূর হয়নি এটাও উদ্বেগের বিষয়।
এ্যাসিড সন্ত্রাসের ব্যাপারে সচেতনতা অনেকখানি বেড়েছে এ কথা ঠিক, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, প্রমাণের অভাব, সাক্ষীর অভাবসহ নানা কারণে দোষীরা শাস্তি এড়িয়ে চলতে সমর্থ হয়।
একশ্রেণীর মানুষের পশু প্রবৃত্তি চরিতার্থ করার জন্যও অসহায় নারীদের প্রতি এ্যাসিড ছোড়া হয়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, যৌতুকলোভী কোন কোন স্বামী তার স্ত্রীর প্রতি নির্যাতন চালানোর এক পর্যায়ে তার গায়ে এ্যাসিড নিক্ষেপ করে। এছাড়া কোন বখাটে তরুণ বা দুর্বৃত্ত কোন মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার পর সে প্রস্তাব স্বাভাবিক কারণেই প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় প্রস্তাব প্রদানকারী দুর্বৃত্ত মেয়েটির প্রতি এ্যাসিড ছোড়ে। এ্যাসিড সন্ত্রাসের প্রতিটি ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দোষীদের আটক করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, এ্যাসিডদগ্ধ নারী ও তার পরিবার অসহায় বলে অপরাধীরা তাদের হুমকি দিতে থাকে, এজন্য তাদের গোট পরিবারই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এ ধরনের ঘটনায় এ্যাসিডদগ্ধ নারী ও তার অসহায় পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে দুর্বৃত্তদের গ্রেফতার করে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। যে দুর্বৃত্তরা এই চাত্রীর গায়ে এসিড ছুড়েছে তাদের অতি দ্রুত আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির করা হবে এটাই সবার প্রত্যাশা।
No comments