অভিমত ॥ আগারগাঁওয়ে প্রবীণ হাসপাতাল by ওসমান আলী

বার্ধক্য প্রত্যেকের জীবনে অবশ্যম্ভাবী। একে কেউ ঠেকাতে পারে না। যাদের বয়স ষাট এবং তার ওপর তাদের প্রবীণ বা বৃদ্ধ বলা হয়। ২০০৫ সালে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৫% বৃদ্ধ।
উর্বরতা কমা (উবপষরহব ড়ভ ঋবৎঃরষরঃু ) এবং গড় আয়ু বাড়ার জন্য এটা বেড়ে ২০২৫ সালে ৯% দাঁড়াবে। ফলে বৃদ্ধদের সামাজিক নিরাপত্তা এবং নিরাপত্তার জাল (ঝধভবঃু হবঃ) সংক্রান্ত কার্যক্রমের জন্য রাষ্ট্রের অনেক খরচের সম্মুখীন হতে হবে। বৃদ্ধরা শেষ বয়সে থাকা-খাওয়া অন্যান্য প্রয়োজনের জন্য পরিবারের ছেলেমেয়েদের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। সামাজিক পরিবর্তনের সঙ্গে পরিবার ভেঙ্গে যাওয়ায় প্রবীণরা বিভিন্ন আর্থিক, সামাজিক ও মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
বর্তমানে প্রবীণদের দেখভাল করার জন্য সরকার এবং এনজিওরা কাজ করছে। বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরাবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানের নাম এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য। এ প্রতিষ্ঠানটি গত ৫০ বছর ধরে প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবাসহ বিভিন্ন রকমের সেবা প্রদান করে আসছে। সেবা কার্যক্রম এত ভাল যে সেবা গ্রহণকারী সব প্রবীণ খুবই সন্তুষ্ট। এর কাজের কোন প্রচার ছিল না বটে কিন্তু কোন নিন্দা মন্দ ছিল না। সমাজকল্যাণ সেক্টরের অর্থায়নে উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে ৭০ দশকের শেষে এবং ৮০ দশকের প্রথমে এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ৯০ দশকের শেষ দিকে প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান জমি ক্রয় এবং ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ কাজ করা হয়। এই নির্মাণ কাজ পিডিবিও এবং স্থাপত্য অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে করা হয়। নির্মাণকাজ শেষ করার পর পিডিবি ও প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের কাছে অবকাঠামো হস্তান্তর করে।
উল্লেখ্য, কার্যনির্বাহী কমিটি কর্তৃক প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হয়। সেখানে একজন সভাপতি এবং একজন মহাসচিব রয়েছে। তারা সবাই সাধারণ সদস্য কর্তৃক নির্বাচিত। যদিও প্রতিষ্ঠানটির প্রবীণদের কল্যাণে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কিন্তু এর গঠনতন্ত্র অনুয়ায়ী কার্যনির্বাহী কমিটিতে বিভিন্ন বয়সের (যুবক ও বৃদ্ধ) লোকজন থাকতে পারে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করায় উদ্দেশে এর গঠনতন্ত্রে এ ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। এ সুযোগে কতিপয় কম বয়সী যুবক কার্যনির্বাহী কমিটিতে ঢুকে পড়ে। তারা যা ইচ্ছা তা করছে। প্রবীণ সদস্যদের প্রতি তাদের শ্রদ্ধাবোধ নেই। কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় তারা প্রবীণ সদস্যদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার এবং তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে আসছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
প্রতিষ্ঠানের হাসপাতাল আওতাধীন স্বল্পমূল্যে আউটডোর, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট ইনডোর সেবা, প্রশিক্ষণ এবং ১০০ প্রবীণের থাকার জন্য হোস্টেলের ব্যবস্থা আছে। দুঃখের বিষয় সেবা প্রদান কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। যেসব প্রবীণ একা থাকেন যাদের দেখাশোনার জন্য কেউ নেই। তাদের জন্য হোস্টেল সিট প্রায়ই খালি থাকে। তাছাড়া ইনডোর সেবায় ৫০টি শয্যার মধ্যে প্রায়ই ৪০ শয্যা সব সময় খালি থাকি। অথচ ঢাকায় যত সব ক্লিনিক এবং হাসপাতাল রয়েছে সেগুলো প্রায়ই রোগীতে ভিড় থাকে এবং শয্যার অভাবে তাদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সম্ভব হয় হচ্ছে না। প্রবীণ হাসপাতালে সকল সুবিধাদি যথাযথ ব্যবহৃত না হওয়ার কারণ হলো হাসপাতালের সার্বিক পরিবেশ প্রবীণ বন্ধুসুলভ নয়। যেসব প্রবীণ এখানে সেবা নিতে আসে তারা যথাযথ সম্মান, যতœ এবং ভাল ব্যবহার পায় না বিধায় সেবাদানের সুবিধা অব্যবহৃত থাকে। প্রতিষ্ঠানের সুবিধাদি ব্যবহার করে কিছু ডাক্তারকে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। জানা যায়, এই ডাক্তারদের আয়ের মাত্র ১০% প্রতিষ্ঠানের তহবিলে জমা দেওয়া হয়, যা খুবই নগণ্য। এটা অনৈতিক এবং কখনও গ্রহণযোগ্য নয়। জানা যায়, সমাজকল্যাণ সেক্টর হতে প্রবীণ হাসপাতাল ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে অর্থায়নের সময় হার্ট ফাউন্ডেশন, বারডেম এবং কমিউনিটি হাসপাতালের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য সমাজকল্যাণ সেক্টর হতে অর্থায়ন করা হয়। তারপরও অধিকতর উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে অর্থায়ন করা হয়েছে। বর্তমানে তাদের আউটডোর এবং ইনডোর সুবিধাদি যথাযথ ব্যবহৃত হচ্ছে এবং জনসাধারণ সন্তোষজনক সেবা পাচ্ছে। তাছাড়া হার্ট ফাউন্ডেশন মাস্টার্স পর্যায়ে ঈধৎফরড়ষড়মু, পধৎফরধপ ংঁৎমবৎু ইত্যাদি কোর্স, বারডেম মাস্টার্স পর্যায়ে কোর্স এবং কমিউনিটি হাসপাতাল এমবিবিএস পর্যায়ে শিক্ষাদানের একটি মেডিকেল কলেজ চালু করেছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর যোগ্য, সৎ এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনা আছে বলে এসব কার্যক্রম সম্পাদন করা সম্ভব হয়েছে। প্রবীণ ও জরাবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান শুধু চযুংরড়ঃযবৎধঢ়ু, ঘঁৎংরহম এবং চধঃযড়ষড়মু তে ডিপ্লোমা কোর্স চালু করেছে। কিন্তু মাস্টার্স পর্যায়ে প্রয়োজনীয় কোর্স চালু করতে পারেনি। এখন প্রশ্ন হলো জরাবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান কেন সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। এর বাধা কার্যনির্বাহী কমিটিতে বিদ্যমান, যাদের কাজ দেখাশোনার জন্য এবং তাদের কৃতকর্মের জন্য জনগণের কাছে দায়ী করতে কোন কর্তৃপক্ষ নেই। সময় এসেছে এসব সমস্যা সমাজের সচেতন মানুষকে সজাগ করে তোলা।

No comments

Powered by Blogger.