জনশক্তি নিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিন- কুয়েতী প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনার অনুরোধ

 প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুয়েতে বাংলাদেশের জনশক্তি নিয়োগের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর হসত্মৰেপ কামনা করেছেন। ২০০৬ সালের অক্টোবরে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ডাক্তার, প্রকৌশলী, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, নার্স এবং আধাদৰ ও দৰ শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার সেবা প্রদানের ৰেত্রে বর্তমানে চমৎকার অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সোমবার সন্ধ্যায় এখানে বায়ান প্যালেসে শেখ হাসিনার সম্মানে কুয়েতী প্রধানমন্ত্রী শেখ নাসের আল মোহাম্মদ আল আহমেদ আল সাবাহর দেয়া ভোজসভায় বক্তৃতা করছিলেন।
শেখ হাসিনা কুয়েতের প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, নির্মাণ, বিমান পরিবহন, বিদু্যত, পানি, পেট্রোকেমিক্যাল , গ্যাস এবং স্বাস্থ্য ও আতিথেয়তা খাতেও অভিজ্ঞ ও প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন পর্যাপ্ত জনশক্তি বাংলাদেশের রয়েছে।
তিনি বলেন, দু'দেশের মধ্যে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ও কুয়েতের মধ্যে সহযোগিতার এখনও অনেক ৰেত্র অব্যবহৃত রয়েছে। তিনি বলেন, 'সহযোগিতার নতুন নতুন ৰেত্র সন্ধান এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে উভয় দেশই লাভবান ও দ্বিপাৰিক সম্পর্ক ঈপ্সিত লৰ্যে পেঁৗছাতে সৰম হবে।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার বাংলাদেশের জনশক্তিকে বিদেশে পাঠানোর আগে নিয়োগকারী দেশের আইন, আচার ও মূল্যবোধ সম্পর্কে প্রশিৰণ দিয়ে থাকে।
শেখ হাসিনা বলেন, কুয়েত ২০০০ সালের নবেম্বরে উভয় দেশের স্বাৰরিত 'জনশক্তি সংক্রানত্ম দ্বিপৰীয় কারিগরি সহযোগিতা চুক্তি' অনুমোদন করলে দেশটির উন্নয়নে বাংলাদেশ থেকে গুণগতমানসম্পন্ন শ্রমশক্তির প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে।
প্রধানমন্ত্রী উলেস্নখ করেন, কুয়েতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে দেশটি বাংলাদেশের উন্নয়নমূলক কর্মকা-কে সমর্থন দিচ্ছে। আমরা এ জন্য অবশ্যই কৃতজ্ঞ।
তিনি বলেন, তবে রূপকল্প ২০২১ অর্জনেও ভ্রাতৃপ্রতিম কুয়েতের সহযোগিতা আমাদের প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী পদ্মা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ, চট্টগ্রামে বিএমআরই অব ইস্টার্ণ রিফাইনারি স্থাপন, পলি ভরাট নদ-নদী খননের জন্য ১৩টি ড্রেজার সংগ্রহ, কর্ণফুলী নদীর ওপর রেল-কাম সড়ক সেতু ও এর তলদেশে টানেল নির্মাণ, ঢাকার মৌচাক-মগবাজারে ফাইওভার নির্মাণ, কয়লাচালিত দু'টি বিদু্যত কেন্দ্র এবং চট্টগ্রামে আরও দুু'টি তেলচালিত বিদু্যত কেন্দ্র নির্মাণে কুয়েতের সহযোগিতা চান।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, এ ছাড়া বিদু্যত টেলিযোগাযোগ, অবকাঠামো উন্নয়ন, সিরামিকস, ওষুধ, বস্ত্র, আইসিটি, আবাসন, গ্যাস ও জ্বালানি, চামড়া, আসবাব এবং কৃষিভিত্তিক শিল্পে বাংলাদেশের জন্য কুয়েতী বিনিয়োগ প্রয়োজন।
মুসলিম দু'টি দেশের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপাৰিক সম্পর্কের উলেস্নখ করে তিনি বলেন, একই ধর্ম, আচার, ঐতিহ্য ও মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে কুয়েত এবং বাংলাদেশ ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ।
তিনি ন্যাম শীর্ষ সম্মেলনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বৈঠকের পর ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানে কুয়েতের আমির সাবাহ আল সালিম আল সাবাহর ভূমিকার কথা স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, 'এ ছাড়া আমি ১৯৭৪ সালে বর্তমান আমির শেখ সাবাহ আল আহমাদ আল জাবের আল সাবাহর বাংলাদেশে আগমন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে পাকিসত্মানের লাহোরে ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়ার কথা স্মরণ করছি।'
তিনি বলেন, এরপর থেকে কুয়েত বাংলাদেশীদের সঙ্গে তাদের উন্নয়ন কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ে।
অন্যান্যের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ছোটবোন শেখ রেহানা, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপুমনি, বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, কুয়েতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শহীদ রেজা, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব এমএ করিম, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী আবদুস সোবহান গোলাপ ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

৪ চুক্তি সই
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী শেখ নাসের আল-মোহাম্মদ আল-আহমেদ আল সাবাহর মধ্যে সোমবার বায়ান প্রাসাদে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পর বাংলাদেশ ও কুয়েত চারটি চুক্তি স্বাৰর করেছে।
চুক্তি স্বাৰরের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ জানান, দু'টি দেশ সাংস্কৃতিক সম্পর্ক জোরদার, অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতা, পর্যটন ও দ্বিপাৰিক সম্পর্কের ব্যাপারে যৌথ কমিশন বিষয়ে এসব চুক্তি স্বাৰরিত হয়েছে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপুমনি এবং পরিবেশ ও বন প্রতিমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ তাঁদের সংশিস্নষ্ট কুয়েতী প্রতিপরে সঙ্গে এসব চুক্তিপত্র স্বাৰর করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর কুয়েতী প্রতিপৰ শেখ নাসের আল মোহাম্মাদ আল আহমেদ আল সাবাহ এই চুক্তি স্বাৰর অনুষ্ঠান প্রত্যৰ করেন।
এর আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাঁর কুয়েতী প্রতিপৰের সঙ্গে বিশেষ একানত্ম বৈঠক করেন।
চুক্তি স্বাৰর অনুষ্ঠানের পর শেখ হাসিনা ও তাঁর সফর সঙ্গীরা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে কুয়েতী প্রধানমন্ত্রীর আয়োজিত এক ভোজসভায় যোগদান করেন।

প্রবাসীদের কল্যাণে কাজ
করার নির্দেশ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবাসী বাংলাদেশীদের কল্যাণে এবং বিদেশী বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার জন্য সর্বাত্মক আনত্মরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে আরব দেশসমূহে নিয়োজিত দেশের রাষ্ট্রদূতদের নির্দেশ দিয়েছেন।
সোমবার সন্ধ্যায় এখানে বায়ান প্রাসাদে আটটি আরব দেশ_ সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, ওমান, জর্দান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও লেবাননে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাাত করলে তিনি এ নির্দেশ প্রদান করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বাংলাদেশের ভাবমূর্তি জোরদার এবং আরব দেশসমূহে বাংলাদেশী জনশক্তির স্বার্থ দেখাশোনা করার জন্য নিষ্ঠার সঙ্গে আপনাদের কাজ করতে হবে।'
সাৰাতের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের ব্রিফিং দেন।
দেশে বিদ্যমান অনুকূল বিনিয়োগ নীতির উলেস্নখ করে শেখ হাসিনা বর্তমানে বাংলাদেশে বিরাজমান বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সম্পর্কে বিদেশী উদ্যোক্তাদের অবহিত এবং বাংলাদেশে বিভিন্ন বিকাশমান খাতে বিনিয়োগ করার ব্যাপারে তাঁদের উৎসাহিত করতে রাষ্ট্রদূতদের নির্দেশ দেন।

শানত্মিরৰীদের প্রতি দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার আহ্বান
সর্বোচ্চ ত্যাগ ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করার জন্য জাতিসংঘের শানত্মি মিশনে নিয়োজিত বাংলাদেশী রৰীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার সকালে কুয়েতের সোবহান ক্যান্টনমেন্টে বাংলাদেশী শানত্মিরৰীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখার সময় তিনি এ আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘের শানত্মি মিশনে কাজ করে আপনারা বিশ্বব্যাপী প্রশংসা কুড়িয়েছেন। এখন জাতীয় স্বার্থে আপনাদের বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে হবে।
তিনি বলেন, তাঁর সরকার স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার মধ্য দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে এবং তাঁর সরকার সর্বৰেত্রেই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতায় বিশ্বাসী।
তিনি বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রৰায় সামরিক বাহিনীকে আধুনিকীকরণের বিভিন্ন পদৰেপ নিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.