জুতোর বাজারও জমে উঠেছে, শতাধিক মডেল ও ডিজাইন- ঈদ বাজার by এম শাহজাহান

নতুন পোশাকের সঙ্গে চাই নতুন জুতো। তাই পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে পছন্দের জুতো কিনতে ক্রেতারা এখন ভিড় করছে পাদুকা বাজারে। শেষ বেলায় জমে উঠেছে ঈদের জুতোর বাজার। ক্রেতারা দেশে তৈরি জুতোর পাশাপাশি আমদানিকৃত জুতো-স্যান্ডেল কিনছে সমান তালে। দৈনিক বিক্রি হচ্ছে কোটি কোটি টাকার জুতো।


ব্যবসায়ীরা ক্রেতার চাহিদা বুঝে দেশী-বিদেশী জুতোর সমাহার ঘটিয়েছেন এ বছর। স্বনামধন্য কোম্পানি বাটা সু, এ্যাপেক্স, পেগাসাস ও ইনফিনিটিসহ বিভিন্ন কোম্পানি ঈদ উপলক্ষে বাজারে শতাধিক মডেল ও ডিজাইনের নতুন জুতো এনেছে। নতুন মডেলের জুতো-স্যান্ডেল পেয়ে ক্রেতারা দারুণ খুশি।
পোশাকের সঙ্গে ম্যাচিং করে মহিলারা তাঁদের পছন্দসই জুতো ও স্যান্ডেল কিনছেন। নিম্নবিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষ জুতো ও স্যান্ডেল কিনতে ছুটে যাচ্ছেন ফুটপাথের দোকানগুলোতে। ফুটপাথের সবচেয়ে বড় বাজার গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া, সদরঘাট, নিউ এলিফ্যান্ট রোড ও গাউছিয়া মার্কেটের সামনে জুতো বেচাকেনার হিড়িক পড়েছে।
এদিকে রাজধানীর খুচরো জুতোর মার্কেট হিসেবে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে নিউ এলিফ্যান্ট রোড, বসুন্ধরা সিটি, গাজী ভবন ও পলওয়েল সুপার মার্কেট। ব্র্যান্ড কোম্পানিগুলো রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শো-রুমের মাধ্যমে জুতো বিক্রি করছে। সরেজমিনে এসব মার্কেট ঘুরে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেল। নিউ এলিফ্যান্ট রোড ও বসুন্ধরা সিটির জুতোর দোকানগুলোতে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের বেচাকেনা। ক্রেতাদের আনাগোনা বাড়ায় ওই সব মার্কেটের প্রতিটি দোকানদার, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কথা বলার সময় নেই।
নিউ এলিফ্যান্ট রোডের চৌরঙ্গী মার্কেটে ভিড় এতই বেশি যে, প্রবেশ করতে গিয়ে গায়ে গায়ে ধাক্কা লাগছে। এখানে বাচ্চা, ছেলে বুড়ো ও তরুণ-তরুণীদের জন্য বিভিন্ন ডিজাইনের জুতো বিক্রি হচ্ছে। তরুণদের জন্য রয়েছে চটি জুতো ও বিভিন্ন ধরনের সু। চটি জুতো বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৫শ’ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। এছাড়া মডেল ও ডিজাইন ভেদে ৫শ’ টাকা থেকে শুরু করে ৭-৮ হাজার টাকা দামের জুতো পাওয়া যাচ্ছে এই মার্কেটে।
বসুন্ধরা সিটির বাটা শো-রুমের এক বিক্রয়কর্মী জনকণ্ঠকে বলেন, গত ২০ রোজা পর্যন্ত ক্রেতা সঙ্কট ছিল। কিন্তু এখন তাদের দম ফেলার সময় নেই। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে তাদের শো-রুমে তত ভিড় বাড়ছে। ক্রেতাদের ভিড় সামলাতে তাঁরা হিমশিম খাচ্ছে। তিনি বলেন, এ বছর অর্ধ শতাধিক নতুন মডেলের জুতো-স্যান্ডেল আনা হয়েছে। মহিলাদের জন্য কিছু নতুন কালেকশন সংগ্রহ করা হয়েছে। ফলে এ বছর বাটায় মহিলা ক্রেতা অনেক বেড়েছে। ঈদে ক্রেতা আকর্ষণে বাটা প্রায় ৪০টির অধিক নতুন মডেল বাজারজাত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বাটায় স্যান্ডেল ৩৫০-৩৯৯০ টাকা এবং জুতো ৮৯০-৩৪৯০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বাটা বাজার বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউ শাখার ম্যানেজার উৎপল কুমার দাস জনকণ্ঠকে বলেন, ক্রেতা ধরতে এ বছর দাম কিছুটা কমানো হয়েছে। গত বছর বেশি দাম ধার্যের কারণে তাদের ক্রেতা হারাতে হয়েছে।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, এ বছর ঈদ সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা মার্কেট, বিপণিবিতান ও শপিংমলগুলো দেশী জুতোর পাশাপাশি বিদেশী জুতো ও স্যান্ডেলের সংগ্রহ কয়েকগুণ বাড়িয়েছে। সর্বত্র বিদেশী জুতোর ছড়াছড়ি। জুতো আমদানি হয়েছে চীন, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, দুবাই ও ইতালি থেকে। তবে সিংহভাগ জুতো ও স্যান্ডেল এসেছে চীন থেকে। মোহাম্মদপুর থেকে নিউ এলিফ্যান্ট রোডে জুতো কিনতে এসেছেন তানিয়া রহমান। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, দেশে ভাল জুতো তৈরি হচ্ছে ঠিক কিন্তু শাড়ি বা থ্রি পিসের সঙ্গে জুতসই ম্যাচিংয়ের জন্য আমদানিকৃত জুতোর ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। বেশিরভাগ মহিলা চীন ও থাইল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত জুতো কিনে নিচ্ছেন। তাছাড়া আমদানিকৃত জুতোর আকর্ষণীয় ডিজাইনে নারীরা আকৃষ্ট হচ্ছেন। যদি দেশীয় শিল্প বিকাশ ও সম্প্রসারণে সবার দেশী জুতো ব্যবহার করা উচিত। তিনি বলেন, এ জন্য দেশের জুতো প্রস্তুতকারী ও কারখানা মালিকদের আধুনিক মানের ডিজাইনের জুতো তৈরি করতে হবে।
তবে দেশের জুতোর পাইকারি ব্যবসায়ী ও কারখানা মালিকরা বলছেন, দিনমজুর থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত পর্যন্ত সব শ্রেণীর মানুষের কথা বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন ডিজাইন, আকৃতি, রঙ ও মানের জুতো তৈরি করা হচ্ছে। তরুণ-তরুণী, শিশু, ছোট বাচ্চা, গৃহবধূ এবং মুরব্বিসহ সব বয়সী মানুষকে আকৃষ্ট করতে জুতোর ডিজাইন ও আকৃতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। দেশে তৈরি এসব জুতো সবনিম্ন ১৬৫ থেকে ১১শ’ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.