মেডিক্যালের ভর্তি পদ্ধতি-স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে

কোনো ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সে সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে সরকার। বছরের পর বছর ধরে যে পদ্ধতিতে এমবিবিএস ও ডেন্টাল কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে, হঠাৎ সেই পদ্ধতি বাতিল করার কারণ খুঁজে হয়রান শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহল।


ভর্তি পদ্ধতির স্বচ্ছতা নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী তাঁর নিজের মতো করে একটি বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু সেটা সাধারণ্যে কতটা গ্রহণযোগ্য, সে ব্যাপারে প্রশ্ন তোলার যথেষ্ট অবকাশ আছে।
সরকারি কলেজগুলোতে এমবিবিএস কোর্সে আসনসংখ্যা দুই হাজার ৮১২ এবং বিডিএস কোর্সে ৫৭৮। বেসরকারি কলেজগুলোতে এ সংখ্যা যথাক্রমে চার হাজার ২৭৫ এং ৮৫০। এর বিপরীতে ৫১ হাজার ২৩৬ জন শিক্ষার্থী গত বছর ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়। পরীক্ষা না নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ফলের ভিত্তিতে ভর্তি করানো যথাযথ হবে কি না, সে বিষয়ে অনেকেরই সংশয় আছে। এই সংশয়বাদীদের ভাষ্য হচ্ছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় মেধাবীরা ভালো করেছে। কিন্তু তারা মেডিক্যালে পড়ার উপযুক্ত কি না, তা দেখার সুযোগ রইল না। অন্যদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী, বিষয়টি নতুন কিছু নয়। তিনি বলতে চেয়েছেন, আগেও মেধার ভিত্তিতেই ভর্তি করা হতো। আগে যে পদ্ধতিতে ভর্তি করা হতো, তাতে মোট ১০০ নম্বরের স্কোর ধরা হতো। এর মধ্যে ৫০ নম্বর থাকত এসএসসি ও এইচএসসির প্রাপ্ত মেধার ভিত্তিতে। বাকি ৫০ থাকত পরীক্ষা প্রক্রিয়ার অন্যান্য বিষয়ের ওপর। এখন ওই ৫০ বাদ দিয়ে মেধার ৫০ নম্বরকেই শতভাগ স্কোর ধরা হবে বলে নীতিনির্ধারকরা জানাচ্ছেন। তাঁরা এটাও বলেছেন, এ জন্য আরো নিপুণভাবে নীতিমালা তৈরি করা হবে। তাই কোনো ধরনের সংশয় বা বিভ্রান্তির সুযোগ নেই। একেবারে শেষ সময়ে এসে কেন এই পদ্ধতিতে ভর্তি করা হবে? নীতিনির্ধারকরা হয়তো বলবেন, কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করতেই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নীতিগতভাবে সেটা মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু যে ভর্তি পদ্ধতির নীতিমালা এখনো তৈরি করা হয়নি, সে পদ্ধতির কতটা সঠিক ও স্বচ্ছ, সে বিষয়ে নীতিনির্ধারকরা আগে থেকেই নিঃসন্দেহ হলেন কেমন করে? তাঁরা বলছেন, মেধা আর স্বচ্ছতার মাধ্যমে এখন থেকে মেডিক্যালে ভর্তি করা হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, মেডিক্যালে ভর্তি হতে চাওয়া শিক্ষার্থীরা তো যোগ্যতার ভিত্তিতেই আবেদন করে। তাহলে যাদের বাদ দেওয়া হবে, তাদের কোন অযোগ্যতার ভিত্তিতে বাদ দেওয়া হবে? বিষয়টি মেনে নেওয়া যেত, যদি পক্ষপাতিত্বের প্রশ্নটি বড় হয়ে সামনে না আসত। আগে মেডিক্যালে ভর্তির সময় দলীয়করণের কোনো প্রচলন ছিল না। কিন্তু গত দু-তিনটি সরকারের সময়ে দলীয়করণের ব্যাপক প্রভাব ছিল বলে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। এখন পরীক্ষা পদ্ধতি বাদ দিয়ে কেবল মেধার ভিত্তিতে ভর্তির বিষয়টি কতটা দলীয়করণমুক্ত থাকবে, সেটা নিয়ে বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এর পাশাপাশি একসময় মেডিক্যালে ভর্তির ক্ষেত্রে ডাক্তারদের সন্তানদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব দেখানোর অভিযোগ করা হতো। পরীক্ষা পদ্ধতি বাদ দেওয়ায় এখন আবার সেই ডাক্তারের সন্তানদের ভর্তির দাপট ফিরে আসে কি না, সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। এক কথায় আগে থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে হুট করে এমন একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ায় পুরো প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেল। সংবাদমাধ্যমে মেডিক্যালে ভর্তির সংবাদ প্রচারিত হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। অনেকে বলেছেন, সরকারের এ সিদ্ধান্ত অনেক আগেই জানানো উচিত ছিল। শুরুতেই এটা জানালে এবারই কোচিং সেন্টারের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যেত।
কোচিং সেন্টারের ব্যবসা বন্ধ হওয়া উচিত। সরকারের এমন ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, যাতে কোচিং সেন্টারগুলো ব্যবসা করতে না পারে। মেধা যাচাইয়ের ব্যাপারে সরকারকে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে মেডিক্যালের মতো বিশেষায়িত কোর্সে ভর্তি পদ্ধতি যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সেদিকে সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.