আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল স্বাধীন করে দেয়ার দাবি পাঁচ সংগঠনের- মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালকে স্থায়ী এবং প্রশাসনিক ও আর্থিকভাবে স্বাধীন করে দেয়ার দাবি জানিয়েছে পাঁচ সংগঠন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সহায়ক মঞ্চ, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, প্রজন্ম ’৭১ এবং একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ দাবি জানিয়েছে।


সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রীর সমালোচনা করে বলা হয়, তাঁর ভাষায় আমরা অজ্ঞ। ট্রাইব্যুনালে কোন সুযোগসুবিধা নেই বললেই তিরস্কৃত হতে হয়। এই হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে মন্ত্রণালয়ের অবস্থান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহসভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম, প্রজন্ম ’৭১ সভাপতি শাহীন রেজা নূর ও সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের আইন সমন্বয়কারী এ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান সরকার।
লিখিত বক্তব্য পাঠ করতে গিয়ে শাহরিয়ার কবির বলেন, এ বিচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিচারক, আইনজীবী, সাক্ষী ও প্রসিকিউশনদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনীয় জনবল ও রসদের অভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ত্বরান্বিত করা যাচ্ছে না। ফলে এ বিচার নিয়ে দেশের মানুষ চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন।
‘ট্রাইব্যুনালে যা লোকজন আছে তা যথেষ্ট’ আইনমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আইনমন্ত্রী আমাদের প্রস্তাবে কর্ণপাত করেননি। বরং আমাদের সম্পর্কে বলেছেনÑএসব বিষয়ে নাকি আমরা অজ্ঞ এবং আমাদের কোন মন্তব্য করা উচিত নয়।
শাহরিয়ার কবির বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে আমরা গত ৪১ বছর ধরে লেখালেখি করছি। তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করছি। গবেষণা করছি এবং রাজপথে আন্দোলনও করছি। আইনমন্ত্রীর ভাষায় আমরা অজ্ঞ হতে পারি কিন্তু ট্রাইব্যুনালের বিচার ও প্রশাসনিক কার্যক্রম যাঁরা পরিচালনা করছেন তাঁরাও কী অজ্ঞ? তাঁরা তাঁদের প্রয়োজনীয় লোকবল ও সুযোগসুবিধার কথা বহুবার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছেন কিন্তু তাতেও কোন ফল হয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দকৃত অর্থ ফেরত যাচ্ছে। আমরা প্রথমবারের মতো দেশীয় আইনে কতগুলো আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার করছি। ৪১ বছর আগে সংগঠিত অপরাধের বিচারে গঠিত ট্রাইব্যুনালে কোনো লাইব্রেরি থাকবে না, আর্কাইভ থাকবে না, গবেষণা থাকবে না, সাক্ষীদের কোন নিরাপত্তা দেয়া হবে না, আইনজীবীদের সহকারী থাকবে না, প্রয়োজনীয় পরিবহন থাকবে না, কোন ওয়েবসাইট থাকবে নাÑ এসব আমাদের মেনে নিতে হবে, প্রতিবাদ করলে আমাদের তিরস্কার করা হবে। এটাই হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর অবস্থান।
তিনি বলেন, ‘বিরোধী দলে থাকাকালে প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে সংসদে বলিষ্ঠ বক্তব্য প্রদান করেছিলেন ও শহীদ পরিবারের সাথে রাজপথে আন্দোলন করেছিলেন। তাঁর দৃঢ় অবস্থানের কারণেই ১৯৯২ সালের এপ্রিলে খালেদা জিয়া সরকার যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের বিচার ও আমাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা প্রত্যাহারের অঙ্গীকার করতে বাধ্য হয়েছিল।’
ট্রাইব্যুনাল সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালে প্রশাসনিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য ৭৫ জন কর্মকর্তা ও দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল পরিচালনার জন্য ১১৩ জন কর্মকর্তা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু বিচার কার্যক্রম দ্রুত শেষ করতে হলে প্রত্যাশিত এ জনসম্পদও যথেষ্ট নয়। এছাড়াও পুরো ট্রাইব্যুনাল কার্যক্রম মনিটরিং করতে কমপক্ষে ১৫টি সিসি ক্যামেরা ও ১০ জন অপারেটর প্রয়োজন। এ পর্যন্ত ১৫ জন আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে তাঁদের অধিকাংশই নিয়মিত ট্রাইব্যুনালে আসেন না। কারণ তাদের প্রয়োজনের তুলনায় কম বেতন দেয়া হয়। নগণ্য সংখ্যক প্রসিকিউশন, তদন্ত সংস্থা ও কর্মীরা সাধ্যাতীত পরিশ্রম করছেন। আমরা আশা করব, প্রধানমন্ত্রী ট্রাইব্যুনালের প্রয়োজনীয় লোকবল ও অন্যান্য রসদের অভাব পূরণের ক্ষেত্রে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন।

No comments

Powered by Blogger.