ইরানে ভূমিকম্প-মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩০৬ ত্রাণ তৎপরতা জোরদার-বিদেশি সাহায্যের প্রস্তাব নাকচ

ইরানে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩০৬ জনে দাঁড়িয়েছে। হতভাগ্যদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। বেড়েছে আহতদের সংখ্যাও। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিন হাজার ৩৭ জন আহত হয়েছে। আহতদের উপচেপড়া ভিড় সামাল দিতে গলদঘর্ম হচ্ছেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা। ত্রাণ তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে।
দাতব্য সংস্থা রেড ক্রিসেন্ট প্রায় ১৬ হাজার গৃহহীনের জন্য স্থানীয় একটি স্টেডিয়ামে ছয় হাজার তাঁবু তৈরি করেছে। ওই অঞ্চলে দুই দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে।
ইরানি পার্লামেন্টের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মারজিহ ভাহিদ দাস্তজেরদি আইনপ্রণেতাদের জানিয়েছেন, আহতদের মধ্যে দুই হাজার ১১ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাকিদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে ৭০০ জনের অস্ত্রোপচার ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, 'মৃতদেহের অনুসন্ধানে তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।' যদিও গত রবিবার খোঁজ ও উদ্ধার তৎপরতা সমাপ্তের ঘোষণা দেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
পার্লামেন্টের অধিবেশনে আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাবিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত উপস্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান ঘাদামি বলেন, 'ভূমিকম্পের পরের কয়েক ঘণ্টাতেই মাটির ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে বেশির ভাগ মানুষ প্রাণ হারায়। ওই এলাকার বেশির ভাগ বাড়িঘর বেশ পুরনো।' ইরানের রেডক্রসের প্রধান আবদুল হোসেইন ফাঘিহ জানান, ভূমিকম্পে ২৩০টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ২০টি মাটির সঙ্গে সম্পূর্ণ মিশে গেছে। সরকার দ্রুত বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে। আর চার মাস পর শীতকাল আসার আগেই বাড়ি নির্মাণ কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ। প্রতিটি পরিবারের জন্য আপাতত এক হাজার ডলার করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও স্বল্প সুদে আরো ছয় হাজার ডলার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। রেড ক্রিসেন্টও খাবার, পানি, কম্বল বিতরণ করছে।
যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, তুরস্ক, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর ও রাশিয়া ভূমিকম্পের জন্য শোক প্রকাশ করে সহায়তার আগ্রহ জানালেও ইরান সরকার তা নাকচ করে দিয়েছে। ফাঘিহ এ প্রসঙ্গে বলেন, 'কয়েকটি দেশ থেকে সহায়তার প্রস্তাব পেয়েছি আমরা। তবে আমাদের পর্যাপ্ত জনবল ও সম্পদ রয়েছে। কাজেই বিদেশি সাহায্যের প্রয়োজন নেই।'
এদিকে একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, তাঁবু ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর অভাবে অনেকেই খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছে। আজারবাইজান প্রদেশের রাজধানী তাবরিজ, স্থানীয় বড় শহর আরদাবিলসহ অন্য শহরগুলোর চিকিৎসকরা তড়িঘড়ি করে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন। হাসপাতালগুলোতে আহতদের দীর্ঘ লাইন লেগে আছে।
ভূমিকম্পে তাবরিজের নিকটবর্তী আহার, ভারজাগান ও হারিস শহরের আশপাশের গ্রামগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এখানকার বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশি হতাহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানি গণমাধ্যমগুলো। গত শনিবার দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশে মাত্র ১১ মিনিটের ব্যবধানে ৬.৪ ও ৬.৩ মাত্রার দুটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। সূত্র : বিবিসি, এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.