পিলখানা বিদ্রোহ মামলায় ৩৭ জনকে সর্বোচ্চ ৭ বছর কারাদণ্ড- ৩৩৬ জনের মধ্যে ৩২৯ জনের সাজা ॥ ৭ জন খালাস

বিডিআর বিদ্রোহ মামলায় পিলখানার বিভিন্ন পরিদফতর ও রাইফেল ক্রীড়া বোর্ডের ৩৩৬ বিদ্রোহীর মধ্যে ৩২৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে ৩৭ জনকে সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদ- দিয়েছে আদালত। অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় ৭ বিদ্রোহী জওয়ানকে বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়েছে। খালাসপ্রাপ্তদের চাকরিতে পুনর্নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।


রবিবার সকাল প্রায় সাড়ে ১০টার দিকে বিজিবি সদর দফতরের দরবার হলে স্থাপিত বিশেষ আদালত-১১ এর রায় ঘোষণা শুরু হয়। আদালতে সরকারী ও বেসরকারী আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। বিচার শুরুর আগে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আসামিদের কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। অভিযুক্ত জওয়ানদের বিডিআর আইনে বিদ্রোহের সাজা ঘোষণা করা হয়।
আদালতের সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি বিচারক প্যানেল রায় ঘোষণা করে। রায়ে অভিযুক্ত ৩৩৬ জনের মধ্যে ৩৭ জনকে সর্বোচ্চ ৭ বছরের সাজা প্রদান করে আদালত। বাকি আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়। সর্বনিম্ন ৪ মাসের সাজা প্রদান করা হয় ৭ জনকে। আর ৭ জনকে বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়।
আদালত জানায়, বিডিআর আইনের সমস্ত নিয়মকানুন মেনেই অভিযুক্তদের সাজা দেয়া হয়েছে। অভিযুক্ত আসামিরা বেতনের অর্ধেক ছাড়াও বিডিআরের সমস্ত সুযোগসুবিধা পেয়ে আসছিলেন। কিন্তু কোন আসামি সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার জন্য সমস্ত সুযোগসুবিধা আইনানুযায়ী স্বাভাবিক নিয়মেই বন্ধ হয়ে যায়।
বিদ্রোহ মামলার দীর্ঘ তদন্তে সাজাপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে তৎকালীন বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের নির্দেশ অমান্য করে দরবার হল ত্যাগ, বিদ্রোহের তথ্য উর্ধতন কর্মকর্তাদের অবহিত না করা, বিদ্রোহ দমনে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ না করা, বেআইনীভাবে অস্ত্র সংগ্রহ, সংগৃহীত অস্ত্র নিজ দখলে রেখে বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করা ও পিলখানার ভেতরে মাইকিং করে বিদ্রোহের পক্ষে উত্তেজনাকর ও উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদানসহ মোট ১০টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়।
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানা বিডিআর সদর দফতরে তথাকথিত দাবিদাওয়া আদায়ের নামে বিদ্রোহী বিডিআর জওয়ানরা ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে পৈশাচিক নির্যাতনের পর নির্মমভাবে হত্যা করে। হত্যার পর সেনা কর্মকর্তাদের মরদেহ ড্রেনে, ম্যানহোলে ফেলে দেয়। কারও কারও মরদেহ পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা পর্যন্ত করা হয়েছে। এছাড়া লাশ গুম করতে গণকবর দেয়া হয়। বিদ্রোহী জওয়ানরা তৎকালীন বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ নির্মমভাবে হত্যার পর লাশ গুম করে ফেলার উদ্দেশ্যে মাটি খুঁড়ে পুঁতে ফেলে।
বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় সারাদেশে মোট ৫৭টি বিদ্রোহ মামলা হয়। এর মধ্যে ২০১০ সালের ৪ আগস্ট পরিদফতরসমূহ ও রাইফেলস ক্রীড়া বোর্ডের বিদ্রোহের ঘটনায় নায়েব সুবেদার সহকারী খোরশেদ আলম বাদী হয়ে বিদ্রোহ মামলাটি দায়ের করেন। ২০১০ সালের ২৬ অক্টোবর বিদ্রোহ মামলার চার্জশীট গঠন করা হয়।
সারাদেশে দায়েরকৃত ৫৭টি বিদ্রোহ মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ৬০৪২ জন। রবিবারের আগে ৫৪টি বিদ্রোহ মামলার রায় ঘোষিত হয়েছে। রবিবার পিলখানার বিভিন্ন পরিদফতর ও রাইফেল ক্রীড়া বোর্ডের বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বিদ্রোহ মামলার রায় ঘোষিত হয়। এ নিয়ে মোট ৫৫টি বিদ্রোহ মামলার রায় ঘোষিত হলো। বাকি ২টি বিদ্রোহ মামলার মধ্যে একটি হচ্ছে ৪৪ রাইফেল ব্যাটালিয়নের বিদ্রোহ মামলা; অপরটি হচ্ছে পিলখানা বিজিবি সদর দফতরের বিদ্রোহ মামলা। ৫৫টি মামলার রায়ে রবিবারের ৭ জনসহ মোট ৯৭ আসামিকে বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়েছে। খালাসপ্রাপ্তরা চাকরি ফিরে পাবেন। চাকরির পাশাপাশি তাদের আনুষঙ্গিক সবকিছুই ফেরত পাবেন।
প্রসঙ্গত, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় বিডিআরের নাম পরিবর্তন করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) রাখা হয়। বিজিবি আইনে বিদ্রোহের সর্বোচ্চ শাস্তি ৭ বছর কারাদ-ের পরিবর্তে মৃত্যুদ- করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.