ঘরে বাইরে ঈদ উৎসবে by তাহমিনা মিলি

ঈদ মানেই আনন্দ। আর আনন্দের প্রকাশ ভঙ্গিতে থাকে উৎসবের আমেজ। ঈদের আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি। সবাই পোশাক, জুয়েলারি, জুতা, সাজগোছের নানা সামগ্রী কিনছেন। পাশাপাশি ঘর-বাড়িও ঈদের উৎসবের আমেজে সাজিয়ে তুলছেন অনেক যতœ করে।
ঈদ মানেই নিজেকে নতুন করে প্রকাশ করা। প্রকাশের সেই আনন্দে যথার্থতা ফুটিয়ে তুলতে চাই সঠিক উপলব্ধি। নানা সমস্যায় জর্জরিত আমাদের প্রাত্যহিক জীবন। এর মধ্যে অনেক আনন্দের দিন খুব বেশি আসে না। অনেক আনন্দ আর উচ্ছ্বাসের বার্তা নিয়ে আবারও একটা ঈদ আসছে আমাদের জন্য। ঈদ এলেই আমরা নানাভাবেই কর্মচঞ্চল হয়ে উঠি। বিশেষ করে আমরা যারা শহরের বাসিন্দা তাদের এই চাঞ্চল্যটা বেশি।
ঈদ আর ১০টা দিনের মতো নয়। প্রত্যেকের কাছেই দিনটির মাহাত্ম্য একটু আলাদা। এক মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদের আনন্দে মেতে ওঠার আগে নিজেকে সবার চেয়ে আলাদা করে দেখতে চান সবাই। ঈদের দিনে নিজেকে কিভাবে উপস্থাপন করবেন, ঈদের দিনে নিজের সাজসজ্জা কেমন হবে তা নিয়ে আগে থেকেই চলছে নানা প্রস্তুতি। ঈদের আনন্দে নিজেকে শামিল করতে নতুন জামাকাপড়ের সাথে প্রয়োজন মানানসই আউটলুক। এ জন্য চাই নিজের চেহারার গড়ন অনুযায়ী মেকআপ। ঈদের আর মাত্র একসপ্তাহ বাকি। এর মধ্যে ঈদ শপিং শেষ। এবার আয়নায় নিজেকে চেহারাটা একবার দেখুন তো। কি একেবারে আঁতকে উঠলেন। এ-কি চেহারা হয়েছে। একেবারে রোদে পুড়ে রোজার নানা ধকল সইতে সইতে কেমন যেন হয় গেছে তাই না? এত দামী কাপড়। সাজগোছ কোন কিছুই যেন এর সঙ্গে মানানসই নয়। সব কিছুই যেন বেখাপ্পা। তাই আর দেরি নয়, নিজেকে ঘষেমেজে পরিষ্কার করে তুলুন। ত্বকের উপযুক্ত যতœ নিয়ে আপনিও আপনার দামী পোশাকের মতোই হয়ে উঠুন ঝলমলে রঙিন। ঈদ এলেই ঘরমুখো মানুষের যাত্রা শুরু হয় আপন ঠিকানার দিকে। শত কর্মব্যস্ততার পরে মানুষ এই সময়টা কাটাতে চায় আপন মানুষের সাথে। ঈদ নিয়ে মানুষের পরিকল্পনার শেষ নেই। নতুন পোশাক পরা, আত্মীয়স্বজনের বাসায় বেড়ানো, বন্ধুদের সাথে ঘুরে ফিরে সময় কাটানো এ রকম অনেক পরিকল্পনা থাকে সবার মধ্যে।
লাইফ স্টাইলে আধুনিকতার ছোঁয়ায় সাদামাটা একজন নারী হয়ে উঠতে পারে। আকর্ষণীয়। এক্ষেত্রেও হেয়ার স্টাইলের বিকল্প নেই। ঈদের নিউলুক পেতে সবার আগে বদলাতে পারেন নিজের হেয়ার স্টাইল। সৌন্দর্য চর্চায় রাঙা হাত একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হয়ে উঠেছে এখন। হাতকে রাঙাতে কে না চায়। ঈদ উৎসব এলে তো হাতে মেহেদির রঙে রাঙাতে মেতে ওঠে সবাই। গহনা টিপের মতোই মেহেদি আজ তরুণীদের কাছে অপরিহার্য। মেহেদির আবেদন শুধু এখন নয়, বরং প্রাচীনকাল থেকেই হাত রাঙানোর উপায় হিসেবে মেহেদি চলে এসেছে। ঈদের বর্ণাঢ্য উৎসবে যারা নিজেকে সাজাতে মেহেদির রঙে রাঙিয়ে তুলবেন তাদের বলছি, আজকাল বাজারে নানা ধরনের টিউব মেহেদি পাওয়া যায়। এর ব্যবহার বাড়ছে দিনে দিনে। অনেকে এখনও বাড়িতে বাটা মেহেদি লাগাতে পছন্দ করেন। কারণ এতে হাতের মেহেদির রঙ অনেক দিন থাকে। বাটা মেহেদির সমস্যা হিসেবে অনেকেই বলেন, সুন্দর করে ডিজাইন করা যায় না। আপনিও পেপারে মুড়ে মুখ বন্ধ করে বানিয়ে ফেলুন মেহেদি কোণ। রঙ পাকা করার জন্য মেহেদি তোলার আগে ২০ মিনিট লেবুর রস দিয়ে রাখুন। তবে মেহেদির রঙ উজ্জ্বল হতে হলে আপনার হাত ও নখ অবশ্যই পরিষ্কার রাখতে হবে। এ জন্য মেহেদি লাগানোর আগের দিন আপনি পারলারে গিয়ে পেডিকিওর ও মেনিকিওর করে নিতে পারেন।
ঈদ এলেই চারদিকে কেনাকাটার ধুম পড়ে যায়। ঈদ এখন শুধুমাত্র ঘরের সবার জন্য পোশাক কেনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। তার আমেজ ঢুকেছে মানুষের ঘরের ভেতরেও, মানে ঘরের সাজে। মানুষ এখন শুধু নিজেকে সাজিয়ে থেমে থাকে না। সে তার বসবাসের স্থান ঘরকেও সাজিয়ে তুলতে চায় ঈদকে সামনে রেখে। উৎসবকে সামনে রেখে গৃহকর্তা বা গৃহকর্ত্রী তার রুচি ও পছন্দের সমন্বয় ঘটিয়ে নিজের ঘরবাড়িকে সাজিয়ে তোলেন। ঈদের সময় বাড়িতে আসা অতিথিদের তাক লাগিয়ে দিতে চান। সুন্দর ঘর দেখে যখন আগত অতিথির প্রশংসা শোনেন তখন খুশিতে মুচকি হাসেন তিনি।
ঈদের দিনে নিজের সাজসজ্জা নিয়ে তো নিশ্চয়ই অনেকে ভাবছেন। কিন্তু ঈদের দিনে আপানার খাবার টেবিলের সাজটা কেমন হবে তা নিয়ে ভেবেছেন কি? না ভেবে থাকলে এখনই খাবতে থাকুন। কেননা ঈদের দিন নিজের সৌন্দর্যের পাশাপাশি খাবার ঘরের সৌন্দর্য দেখাটাও সমান জরুরী। অন্তত আপনার মতো সুগৃহিণীর কাছে আর এই ঈদের দিনে আপনার আত্মীয়স্বজন থেকে পাড়া- প্রতিবেশী সবারই পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে আপনার খাবার ঘর। তাই খাবার টেবিলের সুন্দর একটা পরিবেশ আপনার ভালো মনের রুচিটাকেই যে প্রকাশ করবেÑএটাই স্বাভাবিক।
ঈদের দিনে বাহারি পদের সুস্বাদু খাবার আমাদের বাঙালী জীবনে দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য। পরিবারের সবার জন্য ভোজনবিলাসে তাই তো গৃহিণীরা সদা ব্যস্ত থাকেন নানা স্বাদের খাবার তৈরিতে বিশেষ এই দিনটিতে। একটি বাড়ির প্রাণ হলো রান্নঘর। মৌলিক চাহিদার প্রথম শর্ত পূরণ হয় রান্নাঘর থেকে। তাই যে কোন উৎসবের প্রাণকেন্দ্রও হয়ে ওঠে রান্নঘর। এ তো গুরুত্বপূর্ণ এই স্থানটিকে ঘিরে চলতে থাকে উৎসবের মাতম। যার ফলস্বরূপ উৎসব শেষে রান্নাঘরের অবস্থা হয়ে যায় বেহাল। ঈদকে ঘিরে রান্নাঘরের সুরক্ষায় আপনাকে যতœবান হতে হবে। ঈদের উৎসবে ঘরে মিষ্টান্ন তৈরির বিশেষ আয়োজন থাকে। দুধের স্বাদ সব সময়ই অনন্য। খাবারের মেইন কোর্স থেকে ডেজার্ট সবখানে দুধের উপস্থিতি খাবারে ভিন্ন স্বাদ এনে দেয়। ঈদের আয়োজনে মেহমানদারিতে কিছু মিষ্টান্ন যেন না হলেই নয়। খাবারে এমন ভিন্ন কিছু আয়োজন রাখতে পারেন বাড়িতে। সারামাস রোজা রেখে খাবারের রুচি যেন অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়ে। আর তাই এ সময়ে রসনাবিলাসকে চাঙ্গা করতে প্রয়োজন কিছু চটকদার জিভে জল আনা ঝাল খাবার। ঈদের আগ পর্যন্ত সময়গুলো অনেকেই নিরামিষভোজী হয়ে থাকেন। তাই ঈদের মাংসের নানা পদের সুস্বাদু ঝাল রান্নার আয়োজন করতে পারেন।
কর্মব্যস্ত এ জীবনে একটু অবসর যেন পাওয়াই। নিজেকে নিয়ে যেমন ব্যস্ত আমরা তেমনি পরিবারের অন্য সদস্যদেরও খুব একটা সময় সারা বছর দেয়া সম্ভব হয় না। যখন আপনি সময় পান তখন হয়তো আপনার ছেলেমেয়ের স্কুল অথবা পরীক্ষা থাকে। কিন্তু ঈদের এই সময়টাতে সবাই এক সঙ্গে দুটি পাচ্ছেন। ঈদের ছুটির ফাঁকে তাই অনেকেই চান সময়টা একটু কাজে লাগতে। সময়টা কাজে লাগাতে ঘুরে আসতে পারেন। কোন দর্শনীয় স্থান। পর্যটন কেন্দ্র থেকে। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা আমরা সবাই জানি। পর্যটন কেন্দ্র এই সৌন্দর্যের খুব কাছাকাছি যাবার সুযোগ হয়নি। আমাদের অনেকেরই। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া তথা দেশের এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত পর্যন্ত রয়েছে। অনেক অনেক বেড়ানোর মতো জায়গা। চলুন না এবারের ঈদের ছুটিতে তাই বেড়িয়ে আসি দেশের তেমনি কোন মনোরম স্পট থেকে।

ছবি : আরিফ আহমেদ
মডেল : ইমতু ও লিসানি

No comments

Powered by Blogger.