সিডনির মেলব্যাগ ॥ সর্বজনীন প্রবাসী উৎসবের আশাবাদ ও স্মরণ by অজয় দাশ গুপ্ত

ক’দিন বাদে বাংলাদেশে ঈদের আনন্দ আর উৎসবের ধুম পড়ে যাবে। সেই সাথে প্রবাসীরে হৃদয়েও ঈদের আগমন ঘটবে। প্রশান্ত পাড়ে নেই নেই করেও বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশীর বসবাসে গড়ে উঠেছে অনবদ্য এক দেশী জগত। সমালোচনা বা তির্যক দৃষ্টিভঙ্গি সরিয়ে খোলা চোখে তাকলে ক্রমাগত সম্ভাবনার উদার এক ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে।


সময় হচ্ছে তার ফসল ঘরে তোলার। এখনও ঈদ, পূজা বা অন্যান্য ধর্মীয় উৎসবগুলো সম্প্রদায়কেন্দ্রিক। ধর্মীয় ভাবগম্ভীর বা ধর্মীয় উৎসবের মেজাজেই আবর্তিত হচ্ছে। এ তো থাকবেই। মানুষ সে বিশ্বাসী অথবা নিজেকে অবিশ্বাসী ভাবলেও এক পর্যায়ে পরম সত্তার কাছে আত্মসমর্পণ করেই শান্তি পায়। অস্ট্রোলিয়ার মতো উন্নত দেশ বা খোলা সমাজে ধর্ম ঠিক আচরণে বাধা কিছু নয়। মূলত খ্রিস্টানপ্রধান সমাজে বেশির ভাগ মানুষকে আচরণগত দিক থেকে নাস্তিক মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক। এরা প্রথা মেনে নিয়ম পালন করে চার্চে যায় না। হয়ত বা তেমনভাবে ধর্মের বাহ্যিক দিকটাও মানে না। কিন্তু বিশেষ দিনে এদের বিশ্বাস অথবা যুক্তির বাইরেও ধার্মিক হয়ে উঠতে দেখি। এটাই সম্ভবত জাতির পরিচয় বা নৈতিক দিকটিকে তুলে ধরে। বাঙালী বিশেষত বাংলাদেশীদের সংখ্যা যেভাবে বেড়েছে তাতে নৈতিক মানদ- বা আচরণের বাইরেও ঈদের সীমানা বাড়ানোর প্রয়োজন এখন দোরগোড়ায়। বাংলাদেশের যে কোন অনুষ্ঠান উৎসব শোক বা বিরহে এখানকার বাংলা মিডিয়াগুলো সরব। হূমায়ূন আহমেদের বিয়োগান্তক প্রস্থান বা যে কোন কিছুতেই তাঁরা উদ্বেল। এই নিয়ে প্রচুর লেখালেখি। ভিডিও প্রদর্শনীসহ আরও কত কিছু কত ধরনের যে প্রকাশ তা ভাষায় বর্ণনা করাও দুরূহ। একইভাবে এগুলোর পাঠকও এখন সংখ্যায় কম কিছু নয়। উত্তর আমেরিকা, কানাডা, জাপানের মতো দেশে বাঙালীদের মুদ্রণ মিডিয়ার প্রচারসংখ্যা প্রশ্নাতীত, চোখে ধাঁধা লাগানোর মতো। বিলেতের কথা বলাই বাহুল্য। ধারণা করি অস্ট্রেলিয়াও সে অবস্থানের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে। সম্মলিতভাবে ঈদ উৎসবের সর্বজনীয় আয়োজনে আচারের পাশাপাশি তার ব্যাপ্তি বাড়ানোর কাজটি এখন সময়েরই চাহিদা। ঈদ মেলা বা ঈদকে ঘিরে ছোটখাটো আয়োজনগুলোকে সমন্বিত করার নেতৃত্ব বা যোগ্য মানুষের অভাব নেই দেশে। প্রয়োজন বিষয়টিকে বাংলাদেশী নির্বিশেষে সবার জন্য উন্মুক্ত ও সর্বজনীন করে তোলা। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ঈদ উপলক্ষে প্রকাশনা। এখন যে হয় না তা কিন্তু নয়। তবে আরও ব্যাপক ও বর্ণাঢ্য প্রকাশনার চাহিদাটি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। দু’একজন তরুণ-তরুণীকে জানি যারা দেশের সাথে মেলবন্ধন রচনা করে প্রকাশনা শিল্পকে উন্নত স্তরে নিয়ে যেতে কাজ করছেন। এরা এগিয়ে আসলে ভাল হয়। পাঠক বা অনুরাগীর সংখ্যা যেমন কম নয়, তেমন আগ্রহী কৌতূহলীদের সংখ্যাও ব্যাপক। এই মাসে প্রকাশনা শিল্প ও বিপণনের বিষয়টিও জড়িয়ে। এতে উভয়পক্ষই লাভবান হতে পারে। সিডনি বা অস্ট্রেলিয়ার মুদ্রামানকে মাথায় রাখলে বাংলাদেশী টাকায় অনেক বড় বা ব্যাপক প্রকাশনার কাজও কঠিন কিছু নয়।
এ কথা মানতেই হবে বাংলাদেশের ঈদ বাঙালীর ঈদ সংস্কৃতির সাথে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। এক সময় পূজাকে ঘিরে বিশেষ সংখ্যা বা সাহিত্যভা-ার বিস্তৃত করার কাজটি এখন ঈদ নিয়েও হচ্ছে। আমার বিশ্বাস, বিদেশের বাঙালী অর্থাৎ প্রবাসীরাও এখন এ বিষয়ে এগিয়ে আসার অপেক্ষায়। দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি ও অন্যান্য বিষয়ে প্রবাসীদের অবদান যেমন উজ্জ্বল, সংস্কৃতির বেলায়ও সে সম্ভাবনা বা সম্পৃক্তি খাটো করে দেখার কিছু নয়। তাই এবার না হলেও আগামী বার বা অচিরেই ঈদ নিয়ে জমজমাট সাহিত্য শিল্পের দুয়োর খুলতে পারে এমন বিশ্বাস রাখাটা কঠিন কিছু মনে হচ্ছে না। ঈদের আগাম শুভেচ্ছাসহ এ প্রত্যয় রাখাটাই যৌক্তিক বিবেচনা করছি।
হুমায়ূন আহমেদের শোকবিহ্বলতা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি বাঙালী। প্রশান্ত পাড়ের শীতার্ত আবহাওয়া আর কর্মব্যস্ত দিনপঞ্জিতে রমজানের অধিক্যে বড় কোন স্মরণসভাও হয়নি এখনও। সে নীরবতা ভাঙ্গলেন আঁকিয়ে ও শিল্পকর্মী লরেন্স ব্যারেল। সপ্তাহান্তে ঘরোয়া আয়োজনে হুমায়ূন স্মরণের ব্যবস্থা নিয়েছেন তাঁরা। আমি এদের রুচি ও মননের প্রতি আস্থাশীল। ইতোপূর্বে দু’একটি শোকসভায় পরিমিতি ও সমৃদ্ধ শোকের যথাযথ প্রকাশ দেখেছি। তাই ধারণা করি একটু দেরিতে হলেও হুমায়ূন আহমেদ ফিরে আসবেন। যেমন এসেছেন সাংবাদিক রেজা আরেফিনের এসবিএস রেডিওর বাংলা অনুষ্ঠানে। অস্ট্রেলিয়ার সর্বাধিক প্রচারিত বহু জাতিক ও বহুমাত্রিক মিডিয়া এসবিএস। এদের যে কোন অনুষ্ঠানেই দূরগামী ও বর্ণাঢ্য। সে আয়োজনে হুমায়ূন ভাবনাকে বেশ কয়েক কিস্তিতে বজায় রেখে দেশ ও জাতির প্রতি, বাংলা শিল্প-সাহিত্যের প্রতি নিজের দায়বদ্ধতার প্রমাণ দিলেন এই সাংবাদিক। অন্যদিকে এক সময়কার নন্দিত কাগজ সোনার বাংলার সম্পাদক পিএস চুন্নু জানালেন তাঁরাও অচিরেই হুমায়ূন আহমেদ আর বাঙালীর সর্বকালের শ্রেষ্ঠ- সন্তান বঙ্গবন্ধুর তিরোধান বার্ষিকী মিলিয়ে মনে রাখার মতো অনুষ্ঠান আয়োজনে ব্যস্ত। সিডনি তথা অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশীরা এভাবেই পরদেশে প্রবাসে নিজেদের সাহিত্য, সংস্কৃতি ও রাজনীতির বিজয় পতাকা বহন করে চলেছেন। আনন্দে শোকে ভালবাসায় তাঁরা দেশের সাথেই জড়িয়ে আছেন। গ্লোবাল ভিলেজ দর্শনের অরবিন্দায়ন ব্যাখ্যারই প্রমাণ মিলছে হাতে হাতে।
ফধংমঁঢ়ঃধধলড়ু@যড়ঃসধরষ.পড়স

No comments

Powered by Blogger.