মেডিক্যালে ভর্তিতে পরীক্ষার দাবি, সড়ক অবরোধ, মানববন্ধন- সরকারী সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট

মেডিক্যাল কলেজে পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তির দাবিতে সোমবার রাজধানীর প্রেসক্লাব ও শাহবাগ মোড়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। একই দাবিতে দেশের কয়েকটি জেলা শহরে মানববন্ধনও হয়েছে।


পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিল করে জিপিএ’র ভিত্তিতে মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ‘জনস্বার্থে’ হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেছেন এক আইনজীবী।
রবিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক গণমাধ্যমকে জানান, মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজগুলোতে ভর্তির জন্য চলতি বছর থেকে আর ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে না। এখন থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের প্রাপ্ত জিপিএ’র ভিত্তিতেই এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।
হঠাৎ করে ভর্তির মাত্র কয়েকদিন আগে ভর্তি পরীক্ষা হবে না স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রতিবাদে সোমবার সকাল ১০টার দিকে শহীদ মিনারের পাদদেশে জড়ো হতে থাকে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। শহীদ মিনারে তারা দুপুর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত অবস্থান ধর্মঘটও পালন করে। তাদের অনেকের অভিভাবককেও দেখা যায়। এর মাঝে শিক্ষার্থীরা দুইটার দিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেয়ার জন্য সচিবালয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। তারা দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার অনুমতি না পেয়ে ফিরে আসে। পরবর্তীতে বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা প্রেসক্লাবের সামনে সড়ক অবরোধ করে। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় নিউজ লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের একটি অংশ প্রেসক্লাবের সামনে সড়ক অবরোধ করে রাখে। আজ মঙ্গলবার তারা ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা করবেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী জাইন জায়েদ বলে, ভর্তিতে পরীক্ষা পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবিতে বিকেলে সচিবালয়ে স্মারকলিপি দিতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়ায় সড়ক অবরোধ করা হয়। ভর্তিচ্ছুরা বলে, গত বছর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বুয়েট) বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েও ভর্তি হইনি। মেডিক্যালে পড়ার জন্য এক বছর ধরে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছি। কিন্তু এখন ভর্তি পরীক্ষা না নিলে কোথাও ভর্তি হতে পারব না। সরকারের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী সৈকত মাহমুদ বলে, পরীক্ষা না নেয়ার সিদ্ধান্ত প্রহসনমূলক। এ সিদ্ধান্ত নিলে তা এক বছর আগেই নেয়া উচিত ছিল।
গত বছর মেডিক্যালে ভর্তি হতে না পেরে এবার ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছে জানিয়ে সে বলে, এখন আমাকে ভর্তির জন্য পরীক্ষায় অংশ নিতে না দিলে আমি কোথায় যাব? বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি না নিয়ে মেডিক্যালের জন্য লেখাপড়া করেছি। এখন আমার শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজে জিপিএর ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্ত বাতিল করে ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবিতে চট্টগ্রাম, বরিশাল ও দিনাজপুরে মানববন্ধন হয়েছে। সোমবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে ভর্তিচ্ছু প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী মানববন্ধনে অংশ নেয়। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অনেক অভিভাবকও কর্মসূচীতে অংশ নেন।
মেডিক্যালে ভর্তির নতুন নিয়ম বাতিল করার দাবি জানিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন। সংগঠনটির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শুধুমাত্র পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও কোচিংবাণিজ্য বন্ধের অজুহাতে পরীক্ষা পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা সমীচীন হবে না।

হাইকোর্টে রিট আবেদন
মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজগুলোতে ভর্তির ক্ষেত্রে পরীক্ষা পদ্বতি বাতিল করে জিপিএর ভিত্তিতে ভর্তির সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে জনস্বার্থে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন দায়ের করা হয়েছে। সোমবার সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী ড. ইউনুস আলী আকন্দ সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদনটি দায়ের করেন। আদালতের অনুমতি নিয়ে হলফনামা সম্পন্ন করেন রিটকারী ড. ইউনুস আলী আকন্দ।
এ বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আগামীকাল (আজ) বিচারপতি নাঈমা হায়দার এবং বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এই আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে। রিট আবেদনে স্বাস্থ্য সচিব, শিক্ষা সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে বিবাদী করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এই আইনজীবী। রিটে দুইটি রুল এবং দুইটি অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনা প্রার্থনা করা হয়েছে। এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস প্রথম বর্ষে ভর্তির সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার ও বাতিল করতে বিবাদীদের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, এই মর্মে রুল চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ওই সিদ্ধান্তের কার্যকারিতা স্থগিত করার অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ প্রার্থনা করেন আবেদনকারী। ২০১২-১৩ সেশনে এমবিবিএস প্রথম বর্ষে ভর্তি বিজ্ঞাপন প্রকাশেও নির্দেশনা প্রার্থনা করা হয়।
ইউনুস আলী আকন্দ সাংবাদিকদের বলেন, দুই দলই দলীয় স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত। বুয়েট অচল করে দিয়েছে। এখন মেডিক্যাল ধ্বংস করে দিতে চায়। ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া মেডিক্যালে ভর্তি করলে এ খাত ধ্বংস হয়ে যাবে। এর ফলে মেধাবীরা বঞ্চিত হবে। পরীক্ষা না হলে ভর্তি থেকেই দুর্নীতি বাড়বে। তিনি আরও বলেন, পরীক্ষা ছাড়া কিভাবে মেধা যাচাই করবে। দেশে আটটা বোর্ড এবং একটা মাদ্রাসা বোর্ড রয়েছে। সব বোর্ডের প্রশ্ন একভাবে হয় না। তাই আলাদা প্রশ্নপত্রে নেওয়া পরীক্ষার ভিত্তিতে সঠিকভাবে মেধা যাচাই করা যায় না।
উল্লেখ্য, দেশের সব মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজ মিলিয়ে মোট ৮ হাজার ৪৯৩টি আসন রয়েছে। এর মধ্যে ২২টি সরকারী মেডিক্যাল কলেজে আসন সংখ্যা ২ হাজার ৮১১টি। আর ৫৩টি বেসরকারী মেডিক্যালে ৪ হাজার ২৪৫ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ রয়েছে। এছাড়া ৯টি ‘পাবলিক’ ডেন্টাল কলেজ ও মেডিক্যাল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটে ৫৬৭টি আসন রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.