ধৈর্য ও সংযমের মাস রমজান by মাওলানা এম এ করিম ইবনে মছব্বির

রোজা আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় ইবাদত। আল্লাহ তাআলা বলেন, 'রোজা আমার জন্য; এবং এর প্রতিদান আমি নিজ হাতে দেব।' রোজা দ্বারা খোদাভীতির যে পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করা হয়, তা অন্য কোনো ইবাদতে সম্ভব নয়। রোজাদারকে আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন।


রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধও আল্লাহর কাছে প্রিয়। তবে রোজা দ্বারা আল্লাহর সানি্নধ্য ও কৃপা তখনই লাভ করা সম্ভব, যখন রোজা হবে নিখাদ, একমাত্র আল্লাহর জন্য নিবেদিত। একজন রোজাদারের সর্বপ্রথম দায়িত্ব হচ্ছে রোজার বাহ্যিক দাবিগুলো পূরণ করা। সুবহি সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও জৈবিক চাহিদা পূরণ থেকে বিরত থাকা। পাশাপাশি প্রবৃত্তি এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের যাবতীয় অবৈধ কামনা-বাসনা থেকে দূরত্ব বজায় রাখা। পেটকে যেমন খাদ্যের চাহিদা পূরণ থেকে বিরত রাখবে, তেমনি জিহ্বাকেও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এমন যেন না হয়, খাদ্যাভাবে পেটে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হলো, কিন্তু মিথ্যা, পাপাচার, কুৎসা ইত্যাদি দ্বারা জিহ্বা তরতাজা হয়ে উঠল। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, 'কেউ যদি মিথ্যা কথা বলা এবং তদনুযায়ী কাজ করা পরিত্যাগ না করে, তাহলে তার শুধু খাদ্য ও পানীয় পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই' (বুখারি)। বাক সংযম করতে না পারলে রোজার প্রকৃত দাবি পূরণ করা হলো না। যারা অধিক বাকপ্রবণ, রোজার দিনে তাদের জিহ্বার লাগাম টেনে ধরতে হবে, মজলিশ মাতানোর খায়েশ নিবারণ করতে হবে। প্রয়োজনে রমজান মাসে অসামাজিক এবং বাজে বৈঠক পরিত্যাগ করা উচিত।
যাদের জিহ্বা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাদের জন্য রাসুল (সা.)-এর প্রেসক্রিপশন হলো- যথাসম্ভব কম কথা বলা। তিনি বলেছেন, 'যে চুপ থাকে, সে সব ধরনের বিপদাপদ থেকে হেফাজতে থাকে।' তবে উত্তম কথা এবং দ্বীনের আলোচনা অধিক হারে করতে পারলে জিহ্বা রোজার জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করে। রোজাদার তার আচরণকে মার্জিত রাখবে। রোজা রাখলে ক্ষুধা লাগা এবং পিপাসা পাওয়াটাই স্বাভাবিক। এর প্রভাব যেন কোনোভাবেই আচরণে ফুটে না ওঠে। অযথা রাগারাগি এবং বাজে আচরণ রোজার পবিত্রতা নষ্ট করে। এর ফলে রোজার প্রতিদান থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা আছে। রোজা রেখে আগ বাড়িয়ে ঝগড়া-ফসাদ কিংবা কোনো ঝামেলায় জড়িয়ে পড়া অনুচিত। কেউ রোজাদারের সঙ্গে আগ বাড়িয়ে ঝামেলা করতে এলে সরাসরি তাকে জানিয়ে দিতে হবে, 'আমি রোজাদার, আপনার সঙ্গে কোনো ঝগড়া-ফসাদে জড়াতে চাই না।' হারাম উপার্জন এবং হারাম খাদ্যে রোজা রেখে কোনো ফায়দা আশা করা যাবে না। যাদের উপার্জনের উৎসের সম্পূর্ণটাই হারাম, তারা এ মাসে অন্য কোনো উৎস বা উপায় অবলম্বন করতে পারে। রোজার মাস হচ্ছে মুমিনের জন্য ইবাদতের বসন্তকাল। রোজাদার ইবাদতের মাধ্যমে রমজানকে কাজে লাগাতে পারলে একটি রমজানই জীবনের সফলতা অর্জনের জন্য যথেষ্ট। রমজানের প্রতিটি ইবাদতের জন্য নূ্যনতম ৭০ গুণ বেশি সওয়াবের ঘোষণা রয়েছে। রোজাদারের জন্য উচিত হলো বেশি বেশি নফল ইবাদতে মনোনিবেশ করা। গরিব-দুঃখীর পাশে দাঁড়ানো রমজানের অন্যতম লক্ষ্য। রোজা ফরজ করার একটি বিশেষ উদ্দেশ্য হলো দুস্থ-অসহায় মানুষের ব্যথানুভূতি অনুভব করা। যারা প্রাচুর্যের খনিতে বাস করে, তারা এ মাসে গরিব-দুঃখীর ব্যথা কিছুটা হলেও বোঝে। রমজানের দাবি হচ্ছে, সেসব মানুষের প্রতি সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দেওয়া, যাদের সেহরিতে এক মুষ্টি অন্ন জোটে না। গরিব-দুঃখীর পাশে দাঁড়ানো রমজানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ও লক্ষ্য।
লেখক : ইসলামী গবেষক

No comments

Powered by Blogger.